আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ‘ব্যালট বিপ্লব’ খালেদা জিয়া আশা করলেও দুটি নির্বাচনের ফারাক তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনা।
Published : 26 Apr 2015, 04:22 PM
গত তিন মাসের নাশকতার কারণে জনগণ এমনিতেই বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
সেই সঙ্গে ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের ফলাফলে সরকারের হস্তক্ষেপে কারচুপির যে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিএনপি, তাও উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সিটি নির্বাচনের দুদিন আগে রোববার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এক সংবাদ সম্মেলনের দুই ঘণ্টার মধ্যে গণভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির আন্দোলন এবং ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনই প্রাধান্য পায়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই একজন সাংবাদিক খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সরকার প্রধানের কাছে।
তখন শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে গেছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের ভুয়া বিবৃতি এবং ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের ফোনালাপের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “উনার মিথ্যাচারের কথা কী বলব!
“দেশের ভেতরে তো মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন, বিদেশিদেরও ছাড় দেননি। মিথ্যা কথা উনি চমৎকারভাবেই বলতে পারেন।”
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের এক বছর পর গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন শিথিল করে সিটি নির্বাচনে আসা খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে সরকারের ‘অত্যাচারের বদলা’ নিতে জনগণকে আহ্বান জানান।
তিন মাসের অবরোধ-হরতালে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু এবং যানবাহন পোড়ানোর চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে মানুষ যেভাবে পোড়াল, যে জঘন্য কাজ বিশ্বে কোথাও কি কেউ দেখেছে?
“উনি যে মানুষকে পোড়ালেন, তিনি আবার মানুষের কাছে ভোট চান কিভাবে? কোন মুখে ভোট চান? লজ্জাও তো লাগে।”
বাংলাদেশের মানুষ খালেদাকে ভোট দেবে না প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যেভাবে মানুষের সর্বনাশ করেছে, তার ডাকে বাংলার মানুষ কীভাবে সাড়া দেবে? সাধারণ মানুষ তো সাড়া দেবে না জালেম-খুনির ডাকে।”
খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনকে সরকারের জন্য ‘টেস্ট কেইস’ বললেও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের তুলনা না করারই পক্ষপাতি। আর এই বক্তব্যের ক্ষেত্রে খালেদার অবস্থানকেই যুক্তি দেখিয়েছেন তিনি।
“খালেদা জিয়ার কথায় কিন্তু দ্বিমত আছে। একবার বলল- লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন, কাজেই এই ইলেকশনে তিনি পার্টিসিপেট করছেন। এখানে জনগণের মতামত ওভাবে আসবে না। এই কথা কিন্তু তার নিজেরই বলা। কাজেই লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশনে জনগণ ভোট দেবে, যাকে চায় তাকেই ভোট দেবে। এখানে ন্যাশনাল ইলেকশনের কোনো রিফ্লেকশন ঘটবে না। তাই এই ইলেকশন ওটাতে (জাতীয় নির্বাচন) কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
“আর হারজিত ইলেকশনে আছেই। জনগণ ভোট দিলে জিতব, না দিলে হারব। এতে আমাদের কিছু এসে যায় না,” হস্তক্ষেপের অভিযোগ নাকচ করেন সরকার প্রধান।
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোটে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে তা নিতে খালেদার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “উনি অর্থ নেওয়াটা ভালো বোঝেন। ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়ে গেছেন। অর্থ নেওয়া, বেঈমানি করাটা উনার স্বভাব।”
বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনৈতিক সমঝোতা চাওয়ার যে কথা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তারসঙ্গে ইতোপূর্বেকার আচরণের কথা তুলে ধরেন।
“নির্বাচনের আগে আমি ফোন করেছিলাম, উনি ছয় ঘণ্টা পর ফোন ধরলেন, উনার যে কথা, আমার এই জীবনে এই রকম মুখ ঝামটা, ঝাড়ি আর খাইনি।”
“উনার ছেলে মারা গেল, আমি গেলাম সহানুভূতি জানাতে। আমি গেলাম, আমি নামতে পারলাম না, উনার গেটে তালা। আমাকে ঢুকতে দিল না, ভেতরে অনেক লোকজন ছিল, একটুকু ভদ্রতাও তো দেখায়নি।”
“সবচেয়ে বড় কথা, খালেদা জিয়ার কথা কে বিশ্বাস করবে,” সমঝোতার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন শেখ হাসিনা।
হরতাল-অবরোধে নাশকতার ঘটনায় হুকুমদাতা, অর্থ জোগানদাতা সবার বিচারই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
খালেদা জিয়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালালেও তা গণমাধ্যমে আসেনি বলে সমালোচনাও করেন তিনি।
নির্বাচনী প্রচারে নেমে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার ছবি সংবাদ মাধ্যমে এলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়ির নিচে সাধারণ মানুষের চাপা পড়া এবং খালেদার নিরাপত্তার রক্ষীদের গুলি চালানোর ঘটনাগুলো না আসার সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনটি ছবি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ছবি তো আপনারা দেখাননি।”