আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মদদেই বাংলা মোটরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
Published : 22 Apr 2015, 11:52 PM
সিটি নির্বাচনের প্রচারে নেমে বুধবার বিকালে হামলার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িতে চড়েই নয়া পল্টনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর জ্যেষ্ঠ নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে পাঠান তিনি।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর রাতে কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতারাও ছিলেন। এই ফোরাম থেকেই বিএনপি নেতারা সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “এসব হামলায় পরও আমাদের রোখা যাবে না। ইনশাল্লাহ আমরা শেষ পর্যন্ত দেখে যাব, সরকার কতদূর যেতে পারে, কী করতে পারে।”
সরকারবিরোধী আন্দোলন শিথিল করে সিটি নির্বাচনে এসেছে বিএনপি। এই নির্বাচনের প্রচারে বুধবার তৃতীয় দিনের মতো হামলার মুখে পড়লেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সোমবার কারওয়ান বাজারে হামলার পর খালেদা জিয়া দাবি করেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামল চালানো হয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য, খালেদা জিয়া ‘নাটক’ করছেন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, “সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের পর থেকে সরকার উন্মত্ত আচরণ করছে। গত কয়েকটি গণসংযোগে ম্যাডামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ মদদে প্রধানমন্ত্রীর সোনার ছেলেরা হত্যার উদ্দেশ্যে ম্যাডামের গাড়ির ওপর হামলা করেছে।”
অবস্থা প্রতিকূল হলেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের জেতাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরে না থেকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি।
খন্দকার মাহবুব বলেন, “ম্যাডামের ওপর এই হামলা গণতন্ত্র ও দেশের ১৬ কোটি মানুষের ওপর হামলা। এই হামলার বিচার অবশ্যই হতে হবে। সরকার যদি এর বিচার করতে ব্যর্থ হয়, আমরা বলে দিতে চাই, জনগণ জানে, কীভাবে জবাব দিতে হয়।
“দেশে যদি আইনের শাসন না থাকে, জনগণ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে। জনগণ একবার উচ্ছৃঙ্খল হলে তারা আর কোনো নেত্রীর কথা শুনবে না, তা কারও জন্য শুভ হবে না।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।
আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সদস্য শফিক রেহমানও ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলা মোটরের কাছে হামলার পর নয়া পল্টনে কার্যালয়ে যান খালেদা জিয়া। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা অবস্থানের পর রাতে গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি।
বাসায় ফেরার আগে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়ে হামলায় আহত নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মইনুল, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট সামিউল হক, অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আতিক ও গাড়িচালক আবদুল মান্নানকে দেখতে যান তিনি।
এদিকে সোম ও মঙ্গলবারের হামলার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “খালেদা জিয়াকে ভয় পাওয়ার কারণ কী?
“শাসকদল রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে এখন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। আমরা শাসক দল ও সরকারকে বলব, আপনারা বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করুন। উত্তেজনা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন।”
কারওয়ান বাজার ও ফকিরারপুলে খালেদা জিয়ার ওপর হামলার প্রকাশিত বিভিন্ন আলোকচিত্রও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রিপন।
“গাড়িবহরে হামলার সঙ্গে যুক্ত যাদের পরিচয়সহ আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে, তারা শাসক দলের সন্ত্রাসী। ফকিরাপুলে সাঈদ খোকনের গণসংযোগে থাকা প্রচারকর্মীরা হামলায় অংশ নিয়েছে, যার ছবিও আজকের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে। অথচ সরকারের মন্ত্রী-নেতারা এই ঘটনা অস্বীকার করে যাচ্ছেন।”