টানা তিন মাসের অবরোধে নাশকতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি; এরইমধ্যে আদালতের পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হবেন কি না তা নিয়ে আলোচনা- সব কিছু পিছনে ফেলে ঘরে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 05 Apr 2015, 12:27 PM
আদালতে আত্মসমর্পণ করে জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় জামিন নিয়ে রোববার গুলশানে নিজের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় আসেন খালেদা জিয়া।
বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজের অস্থায়ী এজলাসে হাজির হয়ে জামিন নেন বিএনপি নেত্রী।
এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে গুলশানে বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বেলা ১২টা ১৮ মিনিটে গুলশান ৭৯ সড়কের ১ নম্বর ‘ফিরোজা’ ভবনের সামনে এসে পৌঁছায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর।
ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমাসহ কয়েকজন আগে থেকেই সেখানে খালেদার অপেক্ষায় ছিলেন।
সকালে খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পরপরই গুলশানের কার্যালয় থেকে তার কাপড়-চোপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র বোঝাই স্যুটকেস ও ব্যাগ নিয়ে বিএনপি নেত্রীর বাসায় আসেন কানিজ ফাতেমা। সকাল ৯টার দিকে গুলশানে খালেদার ওই কার্যালয়ে যান তিনি।
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে তার বাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরা বাসায় অবস্থান নিয়েছেন।
বাসভবনে উত্তোলন করা হয়েছে বিএনপির দলীয় পতাকা।
গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় এই বাসা থেকে বেরিয়ে গুলশান-২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কে নিজের কার্যালয়ে গিয়ে আটকা পড়েন খালেদা জিয়া।
পুলিশি বাধায় ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়ে সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন। অবরোধে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, হাতবোমা বিস্ফোরণসহ নাশকতার নানা ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন কয়েকশ মানুষ।
অবরোধ ডাকার কয়েক দিনের মাথায় খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে পুলিশি ব্যারিকেড সরানো হলেও সেখানেই থেকে যান তিনি।
এরইমধ্যে মালয়েশিয়া থেকে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ এলে কার্যালয়ে থেকেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানান খালেদা জিয়া।
একুশে ফেব্রুয়ারি ও স্বাধীনতা দিবসেও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা। এ নিয়েও বিস্তর সমালোচনা হয় তার।
অবরোধের শেষ দিকে নাশকতার ঘটনা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যান চলাচল। এরইমধ্যে গত মাসে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে মনোনয়নপত্র নেন বিএনপি নেতারা।
ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণাও করেছে বিএনপি।
তিন মাস পর শনিবার খুলে দেওয়া হয়েছে নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটক।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও তার বাসায় গেছেন।
এই তিনজনসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন।
সকালে খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাউয়ুম, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খানসহ অন্য নেতারা কার্যালয় ছাড়েন।
গুলশানের ওই কার্যালয়ে এখন আর কোনো নেতা নেই বলে সেখানে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা কর্মী জানিয়েছেন।