খালেদা আত্মসমর্পণ করবেন, যদি ...

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখে আদালতে খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে শর্ত দিলেন তার আইনজীবী ও উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2015, 11:55 AM
Updated : 3 March 2015, 05:14 PM

জিয়া ট্রাস্টের দুই দুর্নীতির মামলার পরবর্তী শুনানির এক দিন আগে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং কার্যালয়ে পুনরায় ঢোকার নিশ্চয়তা পেলে আদালতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

লাগাতার অবরোধ ডেকে গত দুই মাস ধরে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা আদালতে অনুপস্থিত থাকায় গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

বুধবার ওই দুই মামলার শুনানির আগের দিন তাকে গ্রেপ্তারের আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার তিনি বিচারিক আদালতে ওই পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও এখনও আমরা ওয়ারেন্ট হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে হাজির হতে হতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক।”

তবে খালেদা জিয়া ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছেন দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, “প্রতিদিন তার রাজনৈতিক কার্যালয় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ঘেরাও করে রাখছে। এমনকি বর্তমান সরকারের একজন ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর নেতৃত্বেও তার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন।

“আরেকটা ব্যাপার আমাদের মনে হচ্ছে, উনাকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য একবার রাজনৈতিক কার্যালয়ে থেকে বের হলে তাকে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না।”

তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে এবং পুনরায় কার্যালয়ে ঢোকার নিশ্চয়তা ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে দিলে আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে খালেদা আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানান খন্দকার মাহবুব।

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলতে কী বোঝাচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন আমার মক্কেল বেগম খালেদা জিয়া বুঝতে পারবেন, তিনি বের হলে তাকে মেরে ফেলবে না, নাজেহাল করবে না, কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে মাননীয় বিচারক তাকে যদি জামিন দেন, তাহলে যদি তিনি তার কার্যালয়ে ফেরত যেতে পারেন।”

আদালতে যাওয়ার আগে এভাবে শর্ত দেওয়া যায় কি না- এই প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার, আদালত ও দুদক এক হয়ে গেছে। এই জন্যই শর্ত।”

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ স্থগিতে বিচারিক আদালতের পাশাপাশি হাই কোর্টেও আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।

“বিচারক পরিবর্তনের আবেদনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের আদালতে এই আবেদনের শুনানি হবে।”

খন্দকার মাহবুব বলেন, “আপনারা জানেন, আইনজীবী হিসাবে তার সঙ্গে আমরা দেখা করতে পারছি না। আপনারা দেখেছেন, আমরা একবার আলোচনার জন্য বসেছিলাম, কিভাবে পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে সেখানে ঘেরাও করা হয়েছিল।

“বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যেভাবে আচরণ করছে, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।”

খালেদার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে এভাবে বিভিন্ন আবেদন দায়ের ঠিক হচ্ছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন, “এই নির্দেশনা আগেই নেওয়া আছে।”

দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি পুলিশের বাধায় কার্যালয় থেকে বের হতে না পারে সেখানে অবস্থান নেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এরপর ওই কার্যালয় ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। কয়েকদিন বাদে পুলিশি বেষ্টনি সরিয়ে নেওয়া হলেও কার্যালয় ছাড়েননি খালেদা। মালয়েশিয়া থেকে ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের লাশ এলে কার্যালয়ে থেকেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানান তিনি।

কয়েকদিন ওই কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ঢোকা-বের হওয়া অবাধ হলেও ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। সেখানে খাবার ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মাঝে একবার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়।

কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যে গত রোববার রাতে গুলশানে খালেদার বাড়ি থেকে পুলিশ পাহারা সরিয়ে নেওয়া হয়।

কূটনীতিক পাড়া থেকে খালেদার ওই কার্যালয় সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে সরকারি দলের বিভিন্ন নেতা দাবি তুলেছেন।

নৌমন্ত্রী শাজহান খানের নেতৃত্বে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই কার্যালয় ঘেরাওয়ের মিছিলে বোমা হামলার মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে ওই কার্যালয়ে তল্লাশির অনুমতি নিয়েছে আদালতের কাছ থেকে।