খালেদার কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে পরোয়ানা

দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এবার অন্য মামলায় তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে আদালতের অনুমতি নিয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 12:42 PM
Updated : 1 March 2015, 06:06 PM

নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় পুলিশ তল্লাশি চালাতে পরোয়ানা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল।

ওই আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশির জন্য রোববার পরোয়ানা জারি করেন।

পুলিশের আবেদনে বলা হয়, ওই কার্যালয়ে বিস্ফোরক থাকতে পারে এবং পলাতক আসামিরা সেখানে থাকতে পারেন।

তল্লাশির পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিয়ে বেশ রাখঢাক চলছিল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় আদালতে পুলিশের তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন।

খালেদা জিয়া প্রায় দুই মাস ধরে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন। কয়েকজন নেতা-কর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে অর্ধশত ব্যক্তি তার সঙ্গে রয়েছেন।

ওই কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যেই গত সপ্তাহে জিয়া অরফ্যানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে ঢাকার জজ আদালত।

হরতাল-অবরোধ ডেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যে এই কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন কয়েক দফা তার কার্যালয় ঘেরাও করে। 

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের নেতৃত্বে ঘেরাও কর্মসূচিতে হাতবোমা হামলা হয়, যাতে আহত হন বেশ কয়েকজন।

খালেদা জিয়ার কার্যালয় (ফাইল ফটো)

ওই ঘটনায় গুলশান থানায় যে মামলাটি হয়েছে, তাতেই খালেদার কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে আবেদন করে পুলিশ এবং তাতে আদালতের সায়ও পেয়েছে।    

দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি পুলিশের বাধায় কার্যালয় থেকে বের হতে না পারে সেখানে অবস্থান নেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এরপর ওই কার্যালয় ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। কয়েকদিন বাদে পুলিশি বেষ্টনি সরিয়ে নেওয়া হলেও কার্যালয় ছাড়েননি খালেদা। মালয়েশিয়া থেকে ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের লাশ এলে কার্যালয়ে থেকেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানান তিনি।

কয়েকদিন ওই কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ঢোকা-বের হওয়া অবাধ হলেও ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। সেখানে খাবার ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মাঝে একবার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়।  

খালেদা জিয়ার স্বজন ছাড়া আর নেতা-কর্মীদের কাউকে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ।

তল্লাশিতে আইনজীবীদের উপস্থিতি দাবি

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর সময় আইনজীবীদের উপস্থিতি দাবি করেছেন তার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তল্লাশি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় রোববার সন্ধ্যার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে অভুক্ত অবস্থায় অবরুদ্ধ আছেন। তিনি পুত্রশোকে কাতর।

ফাইল ছবি

“এই অবস্থায় সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। বেগম জিয়ার কার্যালয় তার আইনজীবীদের উপস্থিতিতে তল্লাশি করতে হবে।”

এই তল্লাশিতে পুলিশ অন্য উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুবের সন্দেহ।

“চোরাই মালামাল থাকলে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। অনেক সময় পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অনুমতি চেয়ে সার্চ করতে পারেন।”

“বেগম খালেদা জিয়াকে বলা হচ্ছে হুকুমের আসামি। হুকুমের আসামির বিরুদ্ধে কেন সার্চ ওয়ারেন্ট? আমরা আশঙ্কা করছি, যারা সার্চ করবেন তারা কয়টা গ্রেনেড নিয়ে যাবেন, কয়টা ডিনামাইট নিয়ে যাবেন, গিয়ে খাটের তলায়, বিছানার তলায় রেখে বলবেন- এগুলো পাওয়া গেছে।”

খন্দকার মাহবুব বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৩ ধারা অনুযায়ী, যারা তল্লাশি করতে যাবেন নিরপেক্ষ ব্যক্তির দ্বারা আগে তাদের তল্লাশি করাতে হবে।