লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় রোববারের ভোট ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান।
Published : 04 Jan 2014, 11:08 AM
দশম সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে শনিবার ইউটিউবের পাশাপাশি তারেক রহমানের নামে একটি ফেইসবুক পাতায় এই ভিডিও বার্তাটি প্রকাশিত হয়েছে।
দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের ভিডিও বার্তার বস্তুনিষ্ঠতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি।
ভিডিও বার্তায় মা খালেদা জিয়া ‘গৃহবন্দি’ অবস্থায় রয়েছেন বলে দাবি করেন তারেক, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক বলেছেন, সরকার একটি ‘প্রহসনের’ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে।
“আজ সময় এসেছে আমাদের সবার ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করার। ব্যক্তি স্বার্থে নয়, দলীয় স্বার্থে নয়; এটা করতে হবে দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে, দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে।”
নির্দলীয় সরকারের দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় ভোট বর্জন করে তা ঠেকাতে শনি ও রোববার দেশব্যাপী হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
ভোট গ্রহণের চূড়ান্ত প্রস্তুতির মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়েছে। ভাংচুর ও বোমাবাজিও চলছে।
বিএনপির চলমান আন্দোলনকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ সংগ্রাম অভিহিত করে তারেক বলেন, “দেশবাসীকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে আমাদের যে আন্দোলন, তাতে অনেক নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন।
“তাদের উৎসর্গের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য হলেও আমাদেরকে ঘরে-ঘরে, গ্রামে-গ্রামে, শহরে-শহরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
বিরোধী জোটের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখন সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। আর নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা নয়।
“এখন থেকে লক্ষ্য একটাই - সব ক্ষুদ্র বিভাজন ভুলে স্বৈরাচারী সরকার আর তার প্রহসনের নির্বাচনকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে।”
একতরফা নির্বাচনের পথ থেকে আওয়ামী লীগকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে তারেক বলেন, “এমন লজ্জাজনক নির্বাচন কি একটি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দলকে মানায়? এই নির্বাচন দিয়ে মানুষের ঘৃণা-অভিশাপ ছাড়া আপনাদের আর কী অর্জন হবে?”
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তার এবং পরের বছর জামিনে মুক্তির পর থেকে ডজনখানেক মামলা মাথায় নিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেকের ভিডিও টেপের মাধ্যমে বক্তব্য দেয়া এটাই প্রথম।
তবে লন্ডনে বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশে দলীয় কাউন্সিলে অংশ নিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে।
বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্যাতিত তারেক যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তা শেষ হলেই দেশে ফিরবেন।
ভিডিও টেপে বক্তব্যে তারেক বলেছেন, বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি তুলেছে, তাতে দেশের প্রায় সব মানুষের সমর্থন রয়েছে।
এই দাবি উপেক্ষা করায় আওয়ামী লীগকে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন খালেদা জিয়ার ছেলে।
“তিনি কেবল অনিরপেক্ষই নন, খোদ আওয়ামী লীগের প্রধান। কোন ভরসায়, কিসের ভিত্তিতে বিএনপি বা অন্য যে কোনো দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে?”
সংবিধান অনুসরণের বিষয়ে তিনি বলেন, “সংবিধান তো ঐশী বাণী নয় যে এটিকে পরিবর্তন করা যাবে না। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে এ পর্যন্ত ১৫ বার আমাদের সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। তাহলে জনগণের চাওয়া অনুযায়ী আমরা কেন ষোড়শ সংশোধন করতে পারব না?”
‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমের পথে এগোচ্ছে বলে দাবি করেন তারেক।
“এ দেশের হতভাগ্য জনসাধারণকে ৫ বছর অন্তর ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র অনুশীলনের একমাত্র সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত করতে চাইছে। বিশ্ব ইতিহাসে এমন প্রতারণামূলক নির্বাচন এর আগে কখনো ঘটেনি।”
এই নির্বাচন স্থগিতের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক বলেন, “শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, শান্তি চান। আর সেই শান্তির পূর্বশর্ত দেশের মানুষের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে পাতানো নির্বাচনের খেলা বন্ধ করা।”
পুলিশ, বিডিআর, র্যাবকে সতর্ক করে তিনি বলেন,“রাজনৈতিক অচলাবস্থার শিগগিরই অবসান হবে। আজ যারা আপনাদের গণবিরোধী কাজে প্রণোদনা দিচ্ছে, গণমানুষের চাপে যখন তাদের অবশ্যম্ভাবী পতন ঘটবে, তখন জনতার কাঠগড়ায় সেই সব অপরাধীদের পাশাপাশি যদি আপনাদেরও দাঁড়াতে হয়, তা হবে লজ্জার।”
পেশাজীবীদের উদ্দেশে তারেক বলেন, “দেশের রাজনীতিতে আজকের দুটি পক্ষ বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগ নয়, ১৮ দল বনাম মহাজোট নয়।
“দুটি পক্ষ আজ গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্র, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি বনাম অন্য দেশের পক্ষের শক্তি, গণমানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বনাম ব্যক্তি বিশেষের ক্ষমতার অভিলাষ। পরিস্থিতির বিচারে আজ কোন পক্ষটি আপনাদের অবলম্বন করা উচিত, তা আপনাদেরই সিদ্ধান্ত।”
প্রবাসে থাকলেও চলমান আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিএনপি তথা ১৮ দলের দাবি আদায় হবে।