চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট অবসানে একসঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে চিঠি পাঠিয়েছেন এইচ এম এরশাদ।
Published : 10 Apr 2013, 01:06 PM
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গত সোমবার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে বাহকের মাধ্যমে এই চিঠি দুটি পাঠান, যাদের সম্মিলিত আন্দোলনে প্রায় দুই যুগ আগে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল তাকে।
এই চিঠি পাঠানোর কথা বুধবার সাংবাদিকদের জানানো হয়।
দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রীর উদ্দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের আহ্বান- “আমি আজ বয়সের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছি। এই দিগন্তে দাঁড়িয়ে ভারাক্রান্ত মনে আপনাদের কাছে একান্ত প্রার্থনা জানাই- এই মুহূর্তে কোনো হিংসা বা জেদ নয়, ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে এগিয়ে আসুন সঙ্কট মোচনের আলোচনায়। শান্তির পথে উদ্যোগ নিয়ে ইতিহাসে সমৃদ্ধ হয়ে থাকুন।”
বর্তমানে দেশ ‘ক্রান্তিকাল’ অতিক্রম করছে উল্লেখ করে তা থেকে উত্তরণে সব রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান এরশাদ। একই উদ্যোগ বিরোধী নেতার কাছেও প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
“আপনি বিরোধী নেতাকে ডাকুন, আমাকে ডাকুন, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের নেতাদের ডাকুন এবং দেশের বরেণ্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকেও ডাকুন। আলোচনায় বসুন।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম নেতা এরশাদের আশা, প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় ডাকলে সবাই সাড়া দেবেন।
“যদি কেউ না আসেন তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন,” বলেন জাপা চেয়ারম্যান।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঠানো চিঠিতে এরশাদ বলেন, “দিশেহারা জাতি একান্তভাবে কামনা করছে, আপনারা প্রধান দুটি দলের দুই সম্মানিত নেত্রী একত্রে বসুন। আমিও আপনাদের পাশে থাকব।”
“যে কারণেই হোক না কেন, দেশে এখন বিপর্যয় নেমে এসেছে। তার ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা না হয় এই মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলাম।”
“জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা, দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে বসে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করি। আর সেই উদ্যোগটা আসুক সবার আগে আপনারই পক্ষ থেকে।”
আগামী নির্বাচন কী পদ্ধতিতে হবে, তা নিয়ে দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানের কারণে যখন রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তখন এই চিঠি পাঠালেন জাপা চেয়ারম্যান।
সংসদে আসন সংখ্যার বিচারে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পর তৃতীয় শক্তি হল সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের দল জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকলেও তা ‘যথাসময়ে’ ছাড়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন এরশাদ। আগামী নির্বাচন এককভাবে করার কথাও বলে আসছেন তিনি।
চিঠিতে এরশাদ বলেন, শেখ হাসিনাকে শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নয়, জাতির জনকের কন্যা ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী হিসেবে শ্রদ্ধা করেন তিনি।
“আপনার দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ভালোবাসা আমার কাছে প্রশ্নাতীত।”
চিঠি পাঠানোর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে দুই নেত্রীর কাছে একই ভাষায় সংলাপের আবেদন জানান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
তার মতে, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে এত বড় রাজনৈতিক সঙ্কট আর আসেনি।
এরশাদ লিখেছেন- “দেশে এখন যে পরিস্থিতি চলছে এবং জাতির সামনে যে দুর্যোগ বিরাজ করছে, তা নিয়ে আপনি কতটা বিচলিত হতে পারেন, আমি তাও অনুভব করি। আমি একান্তভাবে বিবেকের তাড়নায় দেশের এই ভয়াবহ ক্রান্তিলগ্নে আপনার প্রতি সবিনয় অনুরোধপূর্বক কিছু বক্তব্য পেশ করতে চাচ্ছি।
“আসুন এবার বিগত দিনের সকল তিক্ততা মুছে দিয়ে এবং ভুলে গিয়ে দেশে বিরাজমান সংকট উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করি।”
ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় থাকা- এই ‘জেদ’ থেকে বেরিয়ে আসতেও দুই নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।