বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেন বিএনপি থেকে পদত্যাগী নাজমুল হুদা।
Published : 10 Aug 2012, 02:04 PM
শুক্রবার বিকালে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নতুন দল গঠনের এই ঘোষণা দেন।
সেইসঙ্গে নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতির তত্ত্বাবধায়নে সরকারের রুটিন কাজ পরিচালনা এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) এর হাতে সরকারের সব নির্বাহী ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শও দেন নতুন রাজনৈতিক দলের আহবায়ক হুদা।
নিজের দল সম্পর্কে তিনি বলেন, “জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটাবে। এই নতুন দলকে সারাদেশে সংগঠিত করে আগামী নির্বাচনে আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবো।’’
গত ৬ জুন সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অভিমানের কথা তুলে ধরে বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী হুদা। পরে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দেন।
নানা ঘটনায় আলোচিত নাজমুল হুদা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২০১০ সালের ২৩ জুন তাকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়। ভুল স্বীকার করে খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করার পর ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আবার দলের সদস্যপদ ফিরে পান তিনি।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র ইম্পেরিয়াল হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে হুদার নির্বাচনী এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের ব্যানারে নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এর ইফতার মাহফিল’ লেখা। এর এক পাশে ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি ভিন্নমত তুলে ধরেন।
এই আইনজীবী বলেন, “আমরা মনে করি, দেশে সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলীয় সরকারের প্রসঙ্গ অবান্তর। নির্বাচনের সময়ে অন্য কোনো সরকারের প্রয়োজন হবে না। সরকারের সব নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হবে নির্বাচন কমিশন।
“আওয়ামী লীগের চোখে এটাই হতে পারে অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার এবং বিএনপির চোখে তা হতে পারে নির্দলীয় সরকার। নির্বাচনের সময় সরকারের রুটিন কাজ পরিচালনা করতে পারেন রাষ্ট্রপতি নিজে তার সচিবালয়ের মাধ্যমে।’’
নাজমুল হুদা সংবাদ সম্মেলনে নিজ দলের লক্ষ ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দল হরতাল, বিক্ষোভ, গাড়ি ভাংচুর ও নৈরাজ্য সৃষ্টির রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা রাজপথে রাজনৈতিক উত্তাপ প্রশমনে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে চাই।
“আমরা মনে করি, পাঁচ বছর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন করবে। আন্দোলন কিংবা রাজপথ উত্তপ্ত করে নয়।’’
দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মধ্যে আরো রয়েছে- সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল, সর্বস্তরে দুর্নীতি দমনে কঠোরতম আইন প্রণয়ন, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচার, দলীয়করণের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক আইন প্রণয়ন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।
হুদা জানান, তার দলের ২১ সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি এবং ১০১ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি থাকবে। মাঠ র্র্পযায়ে দলের কমিটি হবে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক।
“গোপন ভোটের মাধ্যমে দলের সব পর্যায়ের নেতা নির্বাচিত হবে।’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিংস পার্টিতে বিশ্বাস করি না। নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করতে আমি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করেছি। আমি আশা রাখি এতে সফল হবো।’’
বিএনপি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দলটির সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হুদা বলেন, “বিএনপিতে আমি এখন নেই। পদত্যাগ করে নতুন দলের যাত্রা শুরু করেছি। তবে বিএনপি আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় রাজনৈতিক দল।
“জিয়াউর রহমানও আমার প্রিয়। তিনি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৭৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন। আজ সেই সুপ্ত ফ্রন্টকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা দিতে পেরে আমি খুশি।’’
জিয়াউর রহমানের সময়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে জাগদল, মুসলিম লীগ, ন্যাপ-ভাসানী, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) ও লেবার পার্টিসহ কয়েকটি দল ছিল।
কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে বিএনপিকে ভাঙতে নতুন দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে হুদা বলেন, ‘‘আমি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে চলে এসেছি। আমি জনগণের দালাল বা এজেন্ট । কোনো দেশ কিংবা সংস্থার নয়।’’
নাজমূল হুদা লিখিত বক্তব্য পাঠের আগে দলটির সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, “নতুন এই রাজনৈতিক দলটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্ব ও পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা যায়নি।
তবে একাধিকবার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী কৃষক মোহাম্মদ সাদেক, সিকিউরিটি পার্টির মহাসচিব মেহজাবিন ওয়াহিদ, কল্যাণ পার্টির একাংশের সেক্রেটারী মমতাজ বেগম মনি, মনিরুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের এম এ জলিল, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) মিজানুর রহমান, স্বাধীনতা পার্টির মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ প্রমুখ অতিথি আসনে ছিলেন।