ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ০২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মুন্সীগঞ্জের মানুষ না চাইলে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর হবে না- মন্ত্রিসভার বৈঠকে শেখ হাসিনা এ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন এক মন্ত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা হোক, এমন কোনো কাজ বর্তমান সরকার করবে না। কারণ আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের দল। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের জবাবদিহিতা রয়েছে। এজন্য জনগণ না চাইলে প্রয়োজনে প্রস্তাবিত নতুন বিমানবন্দর আড়িয়ল বিলের পরিবর্তে অন্যত্র হবে।"
"তবে অদূরদর্শী লোকরাই আড়িয়ল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের বিরোধিতা করছেন বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন", বলেন ওই মন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দরের স্থান নিয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপারকে (এসপি) সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দরের বিরোধিতা করে সোমবার স্থানীয়দের ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধের সময় সংঘর্ষে মতিউর রহমান নামে এক পুলিশ উপপরিদর্শক নিহত হন। ব্যাপক সংঘর্ষে আহত হয় অর্ধশত।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি মামলা করে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান বাদি হয়ে আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করে। চারটি মামলায় মোট ২১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে বুধবার বৈঠকে আড়িয়াল বিল নিয়ে আলোচনার কথা একাধিক মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।
বৈঠকে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান।
তিনি বলেন, বৈঠকে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করার একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় সমুদ্রসীমা নির্ধারণের যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, তাই অনুমোদন করা হয়েছে। এটি প্রস্তাব দাবি আকারে জাতিসংঘে উপস্থাপন করা হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক মন্ত্রী বলেন, সমুদ্রসীমার তিনটি স্তরে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের মালিকানা দাবি করে এ প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে অর্থনৈতিক জোনও রয়েছে। এটিই জাতিসংঘে জমা দেওয়া হবে।
সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ অবসানে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সালিশ আদালতের দ্বারস্ত হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ জানান, বৈঠকে বর্তমান সরকারের গত দুই বছরে মন্ত্রিসভার ৯৫টি বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে সর্বশেষ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতির ওপর একটি প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়।
দু'বছরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দু'বছরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৬২৭টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরমধ্যে ৫৪৮টি সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮৭ শতাংশ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত জোট সরকারের সময় প্রথম দুই বছরে ৩২৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। বাস্তবায়নের হার ছিলো ৬৫ শতাংশ।
বর্তমান সরকারের গত দু'বছরের ১৪৫টি আইন (প্রস্তাবিত) মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়। এরমধ্যে ১৩০টি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১০টি সংসদে এবং পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় রয়েছে।
জোট সরকারের সময় একই সময়ে আইন অনুমোদন হয় ৭৮টি।
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানান প্রেসসচিব।
বৈঠকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে 'কোস্টাল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড' গঠনের প্রস্তাব উপস্থাপন হয়। প্রস্তাবটি আরো যাচাই-বাছাই করে দু'সপ্তাহ পরে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া মন্ত্রিসভায় বৃক্ষরোপণ আইন-২০১১ এবং বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন-২০১০ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের প্রস্তাব থাকলেও তা স্থগিত রাখা হয়।
পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীর বাবা'র মৃত্যুর কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে না পারায় এগুলো স্থগিত করা হয় বলে জানান প্রেস সচিব।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমকে/এমআই/১৬৩৮ ঘ.