বুধবার মওদুদের গুলশানের বাড়ির দখল বুঝে নিতে রাজউকের অভিযানের মধ্যে তিনি এক ইফতার অনুষ্ঠানে বলেন, “জনগণ সব হিসাব রাখছে। এদেরকেও (সরকার) ওই এক কাপড়ে বাড়ি-ঘর থেকে সবাইকে বিদায় করে দেবে।”
আইনি লড়াইয়ে হারের পর সাত বছর আগে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে।
তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে আমি প্রায় ৪০ বছর যাবত ছিলাম, আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এক কাপড়ে।
“বিএনপির লোক, সে না কি বাড়ি দখল করেছে। এই বাড়িতে ব্যারিস্টার মওদুদ ৩০ বছর যাবত আছেন, আজকে থেকে তাকে রাস্তায় বের করে দিয়েছে।”
ক্ষমতার দম্ভ থেকে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের সঙ্গে এই আচরণ করছে বলে মনে করেন খালেদা।
“এরা মনে করে, এরা খুব ভালোভাবে থাকবে। জনগণ এটা হতে দেবে না। আল্লাহতালার একটা বিচার আছে।”
বাড়ির মামলায় খালেদার আইনজীবী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ। তখন আইনি লড়াইয়ে হারের জন্য মওদুদের সমালোচনা রয়েছে বিএনপির মধ্যেই।
গুলশান এভিনিউর যে বাড়িটি মওদুদের দখল থেকে রাজউক উদ্ধার করেছে, এক বিঘা ১৩ কাঠা জমির মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান, পরে তার অস্ট্রিয়ান স্ত্রী ইনজে মারিয়া প্লাজ এর মালিক হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ছেড়ে গেলে ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়ার অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে তাতে আইনি লড়াই চালিয়ে হারেন মওদুদ।
বুধবার দুপুরে রাজউক মালামাল সরিয়ে নেওয়া শুরুর পর থেকে মওদুদ বিমর্ষ মুখে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ইফতার অনুষ্ঠানের পর সেখানে যান খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া গেলে তার সঙ্গে কথা বলেন মওদুদ। তিনি দলীয় চেয়ারপারসনকে বলেন, তার বাড়ির মালামাল বিনষ্ট করে সরকার সরাচ্ছে।
কীভাবে সরকার কোনো নোটিস ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে, তা বিশদভাবে খালেদা জিয়াকে বলেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকনও এসময় খালেদার সঙ্গে ছিলেন।
ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, মওদুদ আহমদ বিএনপি করেন বলেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
“যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাহেব বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা, তাকে হয়রানি করবার জন্যে, তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যে, প্রতিহিংসামূলকভাবে অন্যায়ভাবে তাকে বাড়ি থেকে বের করা হয়েছে।”
“উনি ভীষণ অসুস্থ, প্রতিদিন ২২টা ওষুধ খেতে হয়, লাইফ সেভিং ড্রাগ নিতে হয়। উনাকে সময় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ওষুধগুলো নেওয়ার, তার ফার্নিচারগুলো বের করার।”
“আমরা কোন দেশে বাস করছি জানি না। আমার কাছে মনে হয়, আমরা জঙ্গি দেশে বাস করছি,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
মওদুদকে বাড়ি থেকে উৎখাতের প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।”