মওদুদের বাড়ির সামনে খালেদা 

আদালতের রায়ে গুলশানের বাড়ির দখল হারানো দলীয় নেতা মওদুদ আহমদকে দেখতে গেলেন খালেদা জিয়া; আইনি লড়াইয়ে হারের পর সাত বছর আগে তাকেও একইভাবে সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 02:29 PM
Updated : 7 June 2017, 04:48 PM

গুলশানে মওদুদের বাড়ির দখল বুঝে নিতে বুধবার দুপুর থেকে রাজউকের অভিযান চলার মধ্যে সন্ধ্যায় ইফতারের পর সেখানে উপস্থিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন।

শুরু থেকে বাড়ির ফটকে বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন মওদুদ। খালেদা জিয়া গেলে তার সঙ্গে কথা বলেন মওদুদ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য দলীয় চেয়ারপারসনকে বলেন, তার বাড়ির মালামাল বিনষ্ট করে সরকার সরাচ্ছে।

কীভাবে সরকার কোনো নোটিস ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে, তা বিশদভাবে খালেদা জিয়াকে বলেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ।

প্রায় ১৫ মিনিট ওই বাড়ির সামনে ছিলেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন।

ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, মওদুদ আহমদ বিএনপি করেন বলেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

“যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাহেব বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা, তাকে হয়রানি করবার জন্যে, তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যে, প্রতিহিংসামূলকভাবে অন্যায়ভাবে তাকে বাড়ি থেকে বের করা হয়েছে।”

“উনি ভীষণ অসুস্থ, প্রতিদিন ২২টা ওষুধ খেতে হয়, লাইফ সেভিং ড্রাগ নিতে হয়। উনাকে সময় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ওষুধগুলো নেওয়ার, তার ফার্নিচারগুলো বের করার।”

“আমরা কোন দেশে বাস করছি জানি না। আমার কাছে মনে হয়, আমরা জঙ্গি দেশে বাস করছি,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মওদুদকে বাড়ি থেকে উৎখাতের প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।”

বাড়ির মালামাল সরানোর সময় বিমর্ষমুখে প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

মওদুদের দখলে থাকা গুলশান এভিনিউর ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে এক বিঘা ১৩ কাঠা জমির উপর নির্মিত বাড়িটির মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান, পরে তার অস্ট্রিয়ান স্ত্রী ইনজে মারিয়া প্লাজ এর মালিক হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ছেড়ে গেলে ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন।

কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়ার অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে তাতে আইনি লড়াই চালিয়ে হারেন মওদুদ।

২০১০ সালে খালেদা জিয়াকে একইভাবে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল; ওই আইনি লড়াইয়ে তার আইনজীবী ছিলেন মওদুদ। তখন আইনি লড়াইয়ে হারের জন্য মওদুদকে দায়ী করেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা।

মওদুদের বাড়িতে যাওয়ার আগে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে এক ইফতার অনুষ্ঠানে এ নিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।

এ্যাবের ইফতারে খালেদা জিয়া

তিনি বলেন, “বিএনপির লোক, সে না কি বাড়ি দখল করেছে। এই বাড়িতে ব্যারিস্টার মওদুদ ৩০ বছর যাবত আছেন, আজকে থেকে তাকে রাস্তায় বের করে দিয়েছে।

“আমার বাড়িতে আমি প্রায় ৪০ বছর যাবত ছিলাম, আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এক কাপড়ে।”

“জনগণ তো এদেরকে (সরকার) দেখবেন, জনগণ সব হিসাব রাখছে। এদেরকেও ওই এক কাপড়ে বাড়ি-ঘর থেকে সবাইকে বিদায় করে দেবে। এরা মনে করে, এরা খুব ভালোভাবে থাকবে। জনগণ এটা হতে দেবে না। আল্লাহতালার একটা বিচার আছে,” বলেন খালেদা।

মানুষ বিচার পাচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, “আজকে আমরা এত অসহায়! এই যে এত অত্যাচার-জুলুম হচ্ছে, তার জন্য যে বিচার চাইব, বিচারের জন্য কোর্টে গেলেন, বিচার নাই। কারণ সেখানেও আওয়ামী লীগের থাবা। নিম্ন আদালত পুরো তাদের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে তারা যাকে বলবে, সে নিরাপরাধ হলেও তাকে সাজা দেবে। যে অপরাধী, তাকে ছেড়ে দেবে।”

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা বলেন, “আপন জুয়েলার্স নিয়ে অনেক ঘটনা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। কারণ টাকা-পয়সা লেন-দেন হলেই, সোনা-দানা লেনদেন হলেই সব কিছু তদন্ত চেপে যায়।

“এখন বুঝতে বাকি থাকে না, এই সোনা পাচারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বড় বড় লোকজন জড়িত। যার জন্য এতে সোনা অবাধে দেশে আসতে পেরেছে এবং অল্প কিছু ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে লোক দেখানোর জন্য। এটাই হচ্ছে বাস্তব অবস্থা।”

বিএনপি সমর্থক প্রকৌশলীদের সংগঠন এ্যাবের ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আগামী নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। 

তিনি বলেন, “হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে না এবং নির্বাচন কমিশন চাইলেও তা সুষ্ঠু হবে না। সেজন্য প্রয়োজনে হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।”