নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, তবে জেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করবে দলটি।
Published : 17 Nov 2016, 09:38 PM
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
খালেদার গুলশানের কার্যালয়ে দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের বৈঠক শুরুর মাঝে বেরিয়ে এসে ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এই জন্য যে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।
“বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সেই কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন শেষ মুহূর্তে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ওই সিদ্ধান্তে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছিলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তে নিজেকে ‘কুরবান’ দিয়েছেন তিনি।
জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর এবারও মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হতে ইচ্ছুক।
নির্দলীয় ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী দলের আরেক নেতা এ কে এম সেলিম ওসমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় প্রার্থীর তালিকায় তৈমুরের নাম ছিল এবং তিনি সাত হাজারের বেশি ভোটও পেয়েছিলেন।
তখন নির্দলীয়ভাবে হলেও স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর এবার দলীয় প্রতীকে হবে নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন। অর্থাৎ মেয়র প্রার্থীরা নৌকা, ধানের শীষসহ দলীয় প্রতীক নিয়েই ভোটের লড়াইয়ে নামবেন।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নারায়ণগঞ্জই হতে পারে শেষ সিটি নির্বাচন।
এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা থাকলেও তাদের অধীনে খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতেছিল বিএনপি।
ঢাকার দুটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি গেলেও ভোট গ্রহণের মাঝপথে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে যায়।
জেলা পরিষদের নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েই আপত্তি তুলেছে বিএনপি। তারা বলছে সরাসরি ভোটে না হয়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন সংবিধান পরিপন্থি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি, জেলা পরিষদ নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া সংবিধানে নির্বাচন সম্পর্কে যে নির্দেশনা রয়েছে, তার সাথে সাংঘর্ষিক।
“এই নির্বাচনের ফল আগেই প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। কারণ জেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা ভোটার হবেন, তারা কিন্তু আগের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন। বেশিরভাগ, ৯৯.৯% সরকার নিয়ে চলে গেছে।”
“দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না বলেই আমরা জেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
২১ নভেম্বর বিক্ষোভ কর্মসূচি
১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালনের এক মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ২১ নভেম্বর বিক্ষোভ করবে বিএনপি।
ফখরুল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মহানগর হাকিম আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এতে স্থায়ী কমিটি তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
“সভা মনে করে, সামগ্রিক যে নীল নকশা ও সামগ্রিক যে চক্রান্ত বাংলাদেশকে রাজনীতি বির্বজিত করা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা এবং দেশনেত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এতে আবারও প্রমাণিত হল, দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয় এবং জনগণের আস্থা এই বর্তমান বিচার ব্যবস্থার উপর প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এর প্রতিবাদে আগামী ২১ নভেম্বর সারাদেশে জেলা ও মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে বলে ফখরুল জানান।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলের প্রতি তার ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় বলে জানান মহাসচিব।
বৈঠকে ফখরুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।