খালেদা জিয়ার জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ডাক ফলপ্রসূ করতে জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর ‘শুভ বুদ্ধি’ জাগ্রত হয়ে তারা বিএনপি থেকে সরে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠনের নেতা অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ।
Published : 16 Jul 2016, 09:40 PM
গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর জঙ্গিবাদ ঠেকাতে খালেদা জিয়ার দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় আগে তাদের জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার শর্ত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীদের কেউ কেউও স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে ছাড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এ প্রেক্ষাপটে শনিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “একটি কথা, একটি প্রশ্ন বার বার উত্থাপন করা হয়- যতক্ষণ ২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী থাকবে, ততক্ষণ কোনো কোনো মহল থেকে বাধা আসতে পারে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও বলেছেন।
“জাতীয় ঐক্য স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে যদি হয়, তাহলে জাতীয় আন্দোলনকে সফল করতে চুপচাপ করে তারা (জামায়াত) একগুয়ে হয়ে বসে থাকবে না; হয়তো বা তাদের গুড জাজমেন্ট, একপাশে সরে দাঁড়াতেও পারে।”
বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের সংগঠন ‘শত নাগরিক কমিটি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন মনে করেন, খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ‘বিএনপির জন্য একটা মস্তবড় সুযোগ, একটি মুভমেন্ট’।”
এই সুযোগ কাজে লাগাতে বিএনপি নেত্রীকে পরামর্শও দিয়েছেন তিনি: “এখন বিএনপি চেয়ারপারসনকে অন্তত সব বিভাগীয় শহরে যাওয়া উচিৎ। এই আন্দোলন সফল করতে পারলে গত আট বছরে আমরা যা হারিয়েছি, তার প্রত্যেকটি আমরা ফিরে পাব।”
একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন বলেন, “জামায়াতের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর জন্ম একাত্তরের পরে। তারা এই মাটির সন্তান। তারা যদি জাতির কাছে ক্ষমা চায় যে, তাদের মুরুব্বিদের ভুল হয়েছিল, তারা যদি মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে নেয়, তাহলে তো আপত্তির কিছু থাকে না।”
বিএনপি সমর্থক চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) উদ্যোগে ‘জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা হয়।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজ উদ্দিন বলেন, “দেশের এই সংকটময় অবস্থায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়াটা সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তারা পারেনি। পারেনি এজন্য বলছি যে, বরাবর তারা অস্বীকার করেছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। জঙ্গিবাদ তো দেখা দিল।
“প্রধানমন্ত্রীরই উচিত ছিল, জাতীয় পর্যায়ে একমত হওয়ার জন্য সবাইকে একত্রিত করা। সহমত প্রতিষ্ঠার করার জন্য তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতাকে মূলধন করে তার সরে যাওয়া ন্যায়ের পথ, ক্ষমতায় থাকা উচিত না।”
গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে বলব, অন্য দেশের ওপর ভরসা করবেন না। আপনার শক্তি এদেশের মানুষ, আমরা। আপনার বাবাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) যারা ভালোবেসে ছিলেন, তারাই আপনার বন্ধু। তাই এখন জাতীয় ঐক্য নিয়ে কোনো অজুহাত তৈরি করবেন না। প্লিজ।”
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক একেএম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের প্রধান অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।