ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে সরকার: হাফিজ

সরকার দেশে ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ চালু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2016, 01:09 PM
Updated : 28 April 2016, 01:09 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ চক্রান্তের’ মামলায় বিএনপিঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ তুলে এ অভিযোগ করেন তিনি।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, “আমেরিকার একটি আদালত প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের অভিযোগ আমলেই নেয়নি। তাদের রায়ে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। যে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আমলে নেয়নি, সেখানে বাংলাদেশের আদালত সেটিকে আমলে নিয়ে একজন প্রথিতযশা সাংবাদিককে জেলে নিক্ষেপ করেছে, তার উপরে নির্যাতন চালাচ্ছে।

“কিসের জন্য? এটি শুধু দেশবাসীকে ভয় দেখাবার জন্য। এই দেশে এখন ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। দেশবাসীকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বাবু সুনীল গুপ্ত স্মৃতি সংসদের’ উদ্যোগে সাবেক মন্ত্রী সুনীল গুপ্তের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সুনীল গুপ্ত।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ অভিযোগ করে বলেন, “নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি নুর হোসেনকে একবারও রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। অথচ অশীতিপর ৮২ বছর বয়স্ক সাংবাদিক শফিক রেহমানকে দুই দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একজন সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছেন- এটাই তার অপরাধ।”

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ‘তাণ্ডবের চিত্র’ তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচনের নামে একের পর এক প্রহসন চলছে। আজকের পত্রিকায় দেখবেন, মুন্সিগঞ্জ অঞ্চলের একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজেই বিএনপির প্রার্থীকে চাপাতি দিয়ে আহত করেছে খোদ ওসির সামনে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই হচ্ছে দেশের সার্বিক অবস্থা।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইউপি নির্বাচনের ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে অভিযোগ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে এই আওয়ামী লীগ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। যেমন ধ্বংস করেছে পৌরসভা ও উপজেলা ব্যবস্থা। একইভাবে ধ্বংস করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ।”

সাম্প্রতিক বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিগত বিএনপি সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “আমরা কখনোই হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না। আমরা এসব হত্যার নিন্দা জানাই। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বার বার প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান করছেন, দেশের এই দুঃসময় সংলাপে বসুন। কিন্তু সরকারের কোনো আগ্রহ নেই।”

বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশ একটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশপ্রধান বলেছেন, তিনি কোনো মানুষের বাড়িতে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না।

“তাহলে পুলিশের কাজটা কী? ‍পুলিশের কি একমাত্র কাজ হচ্ছে- বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে ধরে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানো। শুধুমাত্র নির্বাচনে সরকারি দলের নৌকামার্কা প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য কর্ম তৎপরতা-এটাই কি তাদের দায়িত্ব।”

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে অভিযোগ করে তা অবসানের আহ্বান জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “আজকে সময় এসেছে, সব প্রশ্নের জবাবদিহি করার। দেশে কারও জবাবদিহিতা নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। এর অবসান ঘটাতে হবে।”

অনুষ্ঠানে প্রয়াত সুনীল গুপ্তের বর্ণাঢ্য জীবনী তুলে ধরে তার আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি।

সংগঠনের সভাপতি আ ফ ম রশীদ দুলালের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকার সাবেক ডেপুটি মেয়র আবদুস সালাম ও খালেকুজ্জামান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।