রোববার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য লতিফের ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে বসে হায়দার প্রিন্টার্সের চিফ ডিজাইনার কবির হোসেন বললেন, সবই তার ‘ভুল’।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “লতিফ সাহেবের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে যে ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল তা আমি ড্রপ বক্স থেকে খুলতে পারিনি। পরে লতিফ সাহেবের কোটপড়া ছবি থেকে ফটোশপ করে মুখমণ্ডল বসিয়ে দেওয়া হয়।”
এতে যে ছবি বিকৃতি ঘটছে- সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন না দাবি করে ডিজাইনার কবির ক্ষমাও চেয়েছেন।
“আমার ধারণার মধ্যে ছিল না- এ নিয়ে এতো কিছু হবে।”
কবির হোসেন বলেন, “৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আসার কথা। এ কারণে খুব কম সময়ে কিছু ব্যানার-ফেস্টুন করা হয়েছিল।”
“পাঁচ ফুট বাই ১০ ফুটের একটি ফিগার দরকার ছিল। স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধুর একটি পরিপূর্ণ ছবি এমপি সাহেবের কাছ থেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ড্রপবক্স ফাইল কীভাবে ডাউনলোড করতে হয় তা আমার জানা ছিল না।”
দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এ ভুল হয়েছে দাবি করে কবির বলেন, “নিজস্ব চিন্তা থেকেই করেছি, কারও কথায় করি নাই।”
রাজীব দাশ নামে চট্টগ্রাম চেম্বারের এক কর্মকর্তার মোবাইল ফোনের ছবি থেকে বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডল ওই ‘ফিগারে’ বসিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান কবির।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘চেম্বারের অন্য যতো কাজ হয়েছে, স্যারের (লতিফ) অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে। তবে বিলবোর্ড-ফেস্টুনের ছবিটি তিনি দেখেননি।’’
গত শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের আগে লতিফের নির্বাচনী এলাকায় (বন্দর, কাঠগড় ও পতেঙ্গা) সড়কের পাশে কয়েক ডজন বিলবোর্ড লাগানো হয়।
এসব বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর দাঁড়ানো অবস্থার একটি ছবি এবং এম এ লতিফের নামে দেওয়া বক্তব্য ছিল।
কিন্তু ওই ছবি নিয়ে ফেইসবুকে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। বলা হয়, ছবির দেহাবয়ব, পাজামা ও জুতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
চট্টগ্রামের ছাত্র ও যুবলীগের একদল নেতা-কর্মী বিক্ষোভ-প্রতিবাদের পাশাপাশি ‘জামায়াত-ঘনিষ্ঠ’ লতিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা হয় আদালতে।
আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চট্টগ্রাম চেম্বারের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে রোববারের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সংসদ সদস্য লতিফ বলেন, “জাতির জনকের ছবি নিয়ে বিতর্কের পর ঢাকা থেকে ফিরে একজন একজন করে জিজ্ঞেস করে এ পর্যায়ে এসেছি। যারা এসব করেছে, তাদের মিডিয়ার সামনে নিয়ে এসেছি। তারাই আপনাদের সব বলেছে।”
তবে রোববারের সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আগের দিনের ওই অভিযোগ ‘প্রত্যাহার’ করে নেওয়ার কথা বলেন লতিফ।
তিনি বলেন, “অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই ভেবেছিলাম ‘ওই মহল’ করতে পারে। অতীতের মতোই হয়তো হতে পারে ভেবেছিলাম। কিন্তু যারা করেছে তারা স্বীকার করেছে। আসল সত্য বেরিয়ে এসেছে।”
সত্য বেরিয়ে আসায় ‘সেই সন্দেহ আর নেই’ মন্তব্য করে লতিফ বলেন, “গতকালের (শনিবার) প্রেস কনফারেন্সে দেওয়া আমার বক্তব্য আামি প্রত্যাহার করছি। এটা এখন প্রমাণিত এটা কে করেছে। তাই আমার আর ওই মহলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই।”
তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির এই ঘটনায় ‘অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে’ বলে আফসোস করেন লতিফ।
“আমার উপর দিয়ে যে কী গেছে তা বোঝাতে পারব না। আমার শুধু মানহানি নয়, আমিতো জাতির কাছে একেবারে নিলাম হয়ে গেলাম।”
তিনি জানান, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। ছবি বিকৃতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দায় স্বীকার করে নেওয়া কবির বেশ কয়েক বছর ধরেই নগরীর নজির আহমদ চৌধুরী রোড এলাকার হায়দার প্রিন্টার্সে চিফ ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন। তার বাড়ি ঢাকার ধামরাই এলাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হায়দার প্রিন্টার্সের মালিক হায়দার আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে চেম্বারের সব প্রিন্টিংয়ের কাজ তার প্রতিষ্ঠান থেকেই করানো হয়েছে। তবে ছবি বিকৃতিতে সাংসদ লতিফ যুক্ত নন।
২০০৮ সালে হঠাৎ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি বনে যাওয়া লতিফের বিরুদ্ধে জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইল তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমি কোন দলের সাথে যুক্ত ছিলাম বলতে পারলে আমি এখান থেকে চলে যাব। বঙ্গবন্ধু কন্যার কারণে আমি এমপি হয়েছি। ভালো বলুক, মন্দ বলুক, আমি আমার কাজ করে যাব।”