মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 04 Feb 2016, 11:54 AM
এই রায়ের ফলে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের এই সভাপতি টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপ-নির্বাচনে আর অংশ নিতে পারছেন না।
সেই সঙ্গে ওই নির্বচন অনুষ্ঠানেও আইনগত আর কোনো বাধা থাকছে না বলে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জানিয়েছেন।
কাদের সিদ্দিকীর রিট আবেদন ও রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করে।
ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের কারণে শূন্য কালিহাতীর ওই আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে কাদের সিদ্দিকীর দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল ইসি।
অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের কারণ দেখিয়ে প্রার্থিতা বাতিলের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী রিট আবেদন করলে হাই কোর্ট স্থগিতাদেশে উপ-নির্বাচন আটকে যায়।
সাবেক সংসদ সদস্য কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে হাই কোর্টে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ইয়াসীন খান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়, কাদের সিদ্দিকী যে রিট আবেদন করেছেন, হাই কোর্টে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
রায়ের পর কাদের সিদ্দিকী আদালত অঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একজন আইনজ্ঞের সন্তান, আমি সারা জীবন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছি। তাই এ আদালতের প্রতিও আমার শ্রদ্ধা আছে। আমরা আলোচনা করে দেখব, আইনজ্ঞরা যদি বলেন যে আপিল করতে হবে, আমরা আবার আপিল করব। আইনে যতদূর যাওয়া যায়, আমরা আইনকে মান্য করে অগ্রসর হব।”
নির্বাচন কমিশনের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার ইয়াসীন খান বলেন, “রিট খারিজের ফলে তার মনোয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলো। তিনি আর নির্বাচন করতে পারছেন না, কাদের সিদ্দিকী আর প্রার্থী থাকছেন না, উনার প্রতীকও থাকছে না। উনি ছাড়া বাকি প্রার্থীদের প্রতীক দিয়েই সেখানে নির্বাচন হবে।”
অন্যদিকে কাদের সিদ্দিকীর আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালে করতে হবে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর যখন ট্রাইব্যুনাল হবে সেই ট্রাইব্যুনালে এটার নিষ্পত্তি হবে। উনি ঋণ খেলাপি কি না- এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আদালত দেয়নি।”
হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করলে ইসি গতবছর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ভোটের দিন ঠিক হয় ১০ নভেম্বর। কাদের সিদ্দিকীসহ মোট ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান বাছাই শেষে কাদের ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীসহ চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। ঋণ খেলাপের কারণ দেখিয়ে কাদের ও নাসরিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন কাদের ও নাসরিন সিদ্দিকী। কিন্তু কমিশনের শুনানিতেও তাদের আবেদন টেকেনি।
এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, তাকে ‘ঋণ খেলাপি’ বানাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ‘ছলনার’ আশ্রয় নিয়েছে।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে ২০ অক্টোবর হাই কোর্টে তিনি রিট আবেদন করলে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন আদালত কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্দেশসহ রুল দেয়।
হাই কোর্টের আদেশে ২২ অক্টোবর সব প্রার্থীদের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীকেও প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর তার মনোনয়নপত্র নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে ২৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন।
পরদিন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন এবং ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় গতবছর ২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের আবেদনটি আপিল বেঞ্চে ওঠে। শুনানি শেষে আদালত তা নিষ্পত্তি করে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে দেওয়া রুল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়ে ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত করে।
হাই কোর্টের রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ইয়াসীন খান বলেন, সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত যে কার্যক্রম চলবে তার বিরুদ্ধে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের আওতায় রিট আবেদন করে প্রতিকার পাওয়া যাবে না বলে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
এই যুক্তিতে কাদের সিদ্দিকীর রিট আবেদনটি ‘মেনটেইনেবল না, তাই তা খারিজ হয়ে গেছে।
“এ বিষয়ে প্রতিকার চাইতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় তাকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। সেখানে যেতে হবে নির্বাচনের পরে।”