মার্চে জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠনের কাজ শুরু করছে বিএনপি। পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়ে চলবে দল গোছানোর এই কার্যক্রম।
Published : 01 Feb 2016, 11:16 AM
এর অংশ হিসেবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটে, ৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে ও ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে বলে জেলা নেতারা জানিয়েছেন।
এছাড়া খুলনা, বাগেরহাট, মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, ঝালকাঠি, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, শেরপুর, শরীয়তপুরসেহ ৩৮টি জেলার সম্মেলনও এই মাসে করে ফেলার কথা জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
জেলা কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে কমিটিগুলোর নেতৃত্ব ঠিক করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা নতুন কিছু নয়। যে কোনো সংগঠনের জাতীয় পর্যায়ের কাউন্সিল হলে এটা করতে হয়।”
ওয়ান-ইলেভেনের পর বিএনপির জেলা কমিটিগুলো বেহাল হয়ে পড়লে তা থেকে উত্তরণে তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন উদ্যোগ নিলেও কোনো কাজ হয়নি। যেটা হয়েছে ওয়ান-ইলেভেনের আগে প্রায় সব কমিটি থেকে বহিষ্কৃত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়ার অনুসারী ‘সংস্কারপন্থি’ নেতাদের বাদ দিয়ে নতুনরা নেতৃত্ব নিয়েছেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও সরকারের দমন-পীড়নে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো এখন অনেকটাই নড়বড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির অধিকাংশই সম্মেলন করে কমিটি করতে পারেনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বান্দরবানসহ হাতেগোনা কয়েকটি জেলায় কমিটি নিয়মিত বলে জানা গেছে। অন্যসব কমিটিগুলো তামাদি অর্থাৎ দীর্ঘদিনের পুরনো।
গত ৮ অগাস্ট তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরুর পর দুই দফায় সময় বাড়িয়েও তা শেষ করতে পারেনি বিএনপি। সেসময় যে দুই তৃতীয়াংশ কমিটি হয়েছে, তার মধ্যে অনেক কমিটি ‘পকেট’ কিংবা ‘পুরনো’ কমিটিকে নতুনভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে ওইরকম কমিটি করতে হয়েছে বলে অনেক নেতা অভিযোগও করেছেন।
এ সংক্রান্ত নানা অভিযোগ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জমা পড়েছে। কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারপারসনের নির্দেশ আছে, সবার মতামতের ভিত্তিতে অথবা নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা। সেখানে যেন কোনো ‘পকেট’ কমিটি না করা হয়।
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানে প্রধান সাংগঠনিক প্রক্রিয়া হচ্ছে কাউন্সিলর নির্ধারণ। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক স্তরের জেলা/মহানগর/উপজেলা/থানা/পৌরসভা/ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা-মহানগর থেকে দুইজন নারী সদস্য কাউন্সিলর হবেন। সেজন্য সাংগঠনিক স্তরের বিশেষ করে ৭৫ সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্ব ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের কাউন্সিলে যেসব সাংগঠনিক স্তর রয়েছে, তাতে মোট কাউন্সিলর হবেন ৩০০০ হাজার। কিভাবে তারা কাউন্সিলর হবেন, তা গঠনতন্ত্রে বলা আছে। জেলা থেকে থানা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এজন্য এই বিশাল কর্মযজ্ঞে আমাদের একটি ভালো স্থান প্রয়োজন, যাতে সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলদের আমরা আনতে পারি।”
কিন্তু মার্চের তৃতীয় সাপ্তাহে ঢাকায় ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেও এখনও স্থান না পাওয়ায় দিনতারিখ ঘোষণা করতে পারছে না বিএনপি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন অথবা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র– তিনটির যে কোনোটির অনুমোদন চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিলেও এখনও সাড়া মেলেনি।
দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “কাউন্সিলের জন্য আমরা স্থান চেয়ে চিঠি দিয়েছি, এখনও জবাব মেলেনি। আমরা আশা করছি এই সপ্তাহে জবাব পাব। স্থানের অনুমতি নিশ্চিত হলেই আমরা জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করতে পারব।”
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া এই দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর।