ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিটি ইসিতে রোববার পৌঁছায়; একই দিন লতিফ সিদ্দিকীর একটি চিঠিও আসে ইসিতে, যাতে তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ করা হয়।
নিউ ইয়র্কে এক সভায় হজ নিয়ে এক মন্তব্যের জের ধরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্যপদ হারান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।
দেশে ফিরে ধর্ম অবমাননার মামলায় কয়েক মাস কারাবাসের পর সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য এবং সাবেক তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী।
দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তার দল আওয়ামী লীগের মতামত চেয়েছিল ইসি।
মতামত জানিয়ে আওয়ামী লীগের দেওয়া চিঠি দলের উপ দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ও সহ সম্পাদক এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে দিয়ে আসেন।
দলের প্যাডে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সব সদস্য পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেউ নন।
“সংবিধানের ৬৬ (৪) অনুচ্ছেদ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২ (১) অনুচ্ছেদ, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি ১৭৮ ধারা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকীর সদস্য পদ বাতিলের জন্য অনুরোধ করছি।”
ইসির কাছে চিঠি হস্তান্তরের পর মৃণাল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী মহানবী (সা.) সম্পর্কে অযাচিত, দুর্ভাগ্যজনক, অশোভন, অরুচিকর, অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।”
দল থেকে বহিষ্কারের পর লতিফ সিদ্দিকীর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবেও থাকার কোনো সুযোগ আইন অনুযায়ী নেই।
“কমিশন বলেছে, আইন অনুযায়ী আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দল ও ওই সাংসদের শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করে জানানো হবে। নির্ধারিত সময়ে আমরা দলের বক্তব্য তুলে ধরব। এরপর ইসি পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে,” বলেন মৃণাল।
দুজনের বক্তব্য পাওয়ার পর ইসি এখন আইন মেনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান।
তারা বলেন, সপ্তম সংসদে বিএনপির মো. আখতারুজ্জামানের সংসদ সদস্য পদও একই পদ্ধতিতে বাতিল করা হয়েছিল। এবার লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে বিতর্ক নিষ্পত্তির বিষয়ে স্পিকারের অনুরোধ পাওয়ায় ইসি দুজনের বক্তব্য নিয়েছে। শুনানি শেষে সদস্য পদ বাতিলে ইসির সিদ্ধান্ত ফের স্পিকারকে জানানো হবে।
ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের নজির, আইন ও সংবিধান দেখে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হবে। কমিশন মনে করলে শুনানি নেবে।”
আসন শূন্য করতে স্পিকারের অনুরোধ পেলে উপ-নির্বাচনের পদক্ষেপ নেবে ইসি।
এদিকে আওয়ামী লীগের চিঠি যাওয়ার আগে দুপুরে সিইসিকে লেখা লতিফ সিদ্দিকীর একটি চিঠি ইসি সচিবালয়ে দিয়ে আসেন তার ব্যক্তিগত সহকারী।
“জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে বক্তব্য দিয়েছি বলে বিবেচনার সুযোগ নেই। আমাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ভুল ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে।”
সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিষয়টি স্পিকারের কাছে পাঠানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেন তিনি।