ঝরনার নাম হরিণমারা

নতুন ঝরনা, নতুন ট্রেইল! ভ্রমণ পাগল মানুষের কাছে এসব নিয়ে বেশ কৌতুহল। বেশ কিছু দিন হয় নতুন ঝরনার খোঁজ করা হচ্ছিল। অবশেষে দীর্ঘ ট্র্যাকিংয়ের পর নতুন ঝরনার সন্ধান পেলাম। রাঙামাটির অন্যতম উঁচু ঝরনা, উচ্চতায় প্রায় ১৫০ ফুট। ঝরনার নাম হরিণমারা।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2015, 08:53 AM
Updated : 15 July 2015, 09:05 AM

সকাল থেকেই বৃষ্টি! ঝমঝম বৃষ্টি পুরো পাহাড় তখন প্রায় সাদা। এমনই এক ঘোরলাগা পরিবেশ। দীর্ঘদিন ধরে নতুন ঝরনার ট্রেইল ধরে হাঁটার ইচ্ছা। তাই বৈরি প্রকৃতিতে দিঘীনালা থেকে রওনা হলাম। মোটরবাইকে ক্ষণস্থায়ী ভ্রমণ শেষে পৌছাই মূল ট্রেইলে। এখান থেকে পুরোটা হাঁটার পথ।

বৃষ্টিতে উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ বেশ পিচ্ছিল। আকাশের রূপ তখনও বেশ মেঘকালো। সময় আর দূরত্বের কথা বিবেচনা নিয়েই দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম ট্রেইলের পথ ধরে। তবে ঘন জঙ্গল আর ধারালো শনপাতা হাঁটার গতি ধীর করে দেয়।

মন জুড়ানো সব ‘ল্যান্ডস্কেপ’। সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আদিবাসী বসতি। সুবজ পাহাড়জুড়ে জুমচাষ, বড় বড় বৃক্ষরাজি! পথ চলতে চলতে কানে আসে বজ্রপাতের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ।

এমন বর্ষণমুখর দিনে ঝরনার পথটাই সত্যিই বেশ রোমাঞ্চকর। ট্রেইলের পথ চলতে চলতে স্থানীয় এক আদিবাসী বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল। তাকেও সঙ্গী করালাম।

দূর পাহাড় থেকে কানে আসছে বৃষ্টির আগমনি শব্দ। বোঝা যাচ্ছিল বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। নিরুপায় হয়ে সবাই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। এই বৃষ্টির মধ্যে আমাদের বিরতিহীন পথ চলা। তবে বৃষ্টিতে পায়ে হাঁটার পথটা ধীরে ধীরে আরও বেশি সরু হয়ে আসছিল এবং ঘন ঢাকা পথে পা কোথায় ফেলছি তাও বোঝা যাচ্ছিল না।

ঘন সুবজের জঙ্গল, জোক আর কালো মেঘের আকাশ পেরিয়ে ঝরনার কাছে আসতেই শব পানির শব্দ পেলাম।  পৌঁছাতে মনে হল, দীর্ঘ খাড়া পথ বেঁয়ে নামতে হবে। আর নামার পথেই যত বিপত্তি, ট্রেইলটা প্রায় ৮০ ডিগ্রি খাড়া।

পাথর আর ঘন জঙ্গলের পথ মাড়িয়ে নামা খুব কষ্টকর। সঙ্গে থাকা দেশি দা দিয়ে জঙ্গল কেটে কেটে নিচে নামতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে পথের ঝুঁকি আরও বেড়ে গেল। পাথরের খাঁজ ধরে এমন পাহাড়ি ট্রেইলে নিচে নামা রোমাঞ্চের বিপরীতে ভয়ই ছিল বেশি।

ট্রেইলের ঘন জঙ্গলের ভিতরে নামতে নামতে চোখ পড়ে বিশাল ঝরনার ধারার ওপর। অতিবৃষ্টির কারণে ঝরনায় পানির গতি ছিল খুব বেশি। কলকল ঝরনার তীব্র ধ্বনি‍! প্রায় ১৫০ ফুট উপর থেকে বেয়ে পাথরের পথ বেয়ে নেমে আসছে পানির ধারা। ঢাল বেয়ে নেমে আসা জলের স্রোত মিশেছে ঝিরিতে। পাহাড়ের প্রাচীন পাথর বেয়ে সাদা রেখার নিচে নেমে আসছে ঝরনার পানি। সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে ঝরনা থেকে ফেরার পালা। প্রায় অন্ধকারে ট্রেইল ধরে আবার হাঁটার পথ শুরু।

যেভাবে যাবেন

প্রথম যেতে হবে খাগড়াছড়ি অথবা দিঘীনালা। দিঘীনালা বাস টার্মিনাল থেকে মোটরবাইক বা চাঁদের গাড়ি করে দশ নম্বর নামে পরিচিত জায়গায় নেমে, পাহাড়ি ট্রেইল ধরে পায়ে হেঁটে ঝরনায় পৌঁছানো যাবে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

ঝরণা দেখতে গিয়ে আশপাশে কোনো প্ল্যাস্টিক, বোতল, প্যাকেট ফেলে ঝরনাকে নোংরা করবেন না। প্রৃকতিকে তার মতো করে থাকতে দিন। বর্ষার সময় রাস্তা পিচ্ছিল থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। জোঁক হতে সাবধান। হরিণ মারা ঝরনা ভ্রমণে কোনো তথ্য ও সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮১৫৮৫৬৪৯৭ নম্বরে।

ছবি: লেখক।