বর্ষায় সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত জায়গা হারবাড়িয়া, কটকা, করমজল ইত্যাদি।
Published : 26 Jun 2015, 06:19 PM
নদী আর খালের বাঁকে বাঁকে সবুজের তীব্রতা। এই ঝুম বৃষ্টি, এই রোদ। আকাশ কখনও মেঘে ঢাকা, কখনও আবার ঝকঝকে নীলাকাশ। পর্যটকের ছিটেফোটাও নেই কোথাও। বন্যপ্রাণীদের ডরভয়ও তাই অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম। তাই খুব কাছে থেকেই দেখা যায় নানান বন্যপ্রাণী।
প্রায় ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি আয়তনের বাংলাদেশ সুন্দরবন। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল উপকূলীয় এলাকা জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। ‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’ দুটি বিভাগের অধীনে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে সুন্দরবনকে। রেঞ্জগুলো হল- চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা।
১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। এক হিসাব মতে সুন্দরবনে বর্তমানে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বেঙ্গল টাইগার ও ত্রিশ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণ আছে। এছাড়া মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুঁইসাপ, ভোদর, ডলফিন, নোনাপানির কুমির, কিং কোবরা, অজগর ইত্যাদি নানান বন্যপ্রাণীর বসবাস আছে সুন্দরবনে।
স্থানীয় ও পরিযায়ী মিলে সুন্দরবনে প্রায় ২৭০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে বড় সাদা বক, সি ঈগল, বাজ, মাস্ক ফিঙ্কফুট, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙ্গা, ফিঙ্গে, সুই চোরা, কাঠঠোকরা, বন মোরগ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রায় চারশ রকম মাছ পাওয়া যায় সুন্দরবন এলাকায়।
বর্ষায় সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত জায়গা হারবাড়িয়া, কটকা, করমজল ইত্যাদি। এ সময়ে সমুদ্র ও নদী বেশি উত্তাল থাকে বলে কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট ভ্রমণে যাওয়া নিরাপদ নয়। কটকা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা হলেও সুন্দরবনের ভেতরের ছোট ছোট নদী কিংবা খাল ধরে জায়গাটিতে পৌঁছানো যায়।
বর্ষায় সুন্দরবনের গাছপালা বেশ সজীব হয়। সুন্দরবনে বৃষ্টির চরিত্রও বেশ আলাদা। বর্ষার জোয়ারের উচ্চতাও একটু বেশি হয়। এ সময়ে তাই বনের বেশিরভাগই পানিতে ডুবে যায়।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। মংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া টহল ফাঁড়ির পাশেই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের অবস্থান। এর সামনের খালটি কুমিরের অভয়ারণ্য। তবে বর্ষায় কুমির দেখা প্রায় অসাধ্য।
হাড়বাড়িয়া খালের পাড়ে এখানকার বন কার্যালয়। এরপরে ছোট্ট খালের উপরে ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমশ বেশি। ঝুলন্ত সেতুটি পেরিয়ে সামান্য সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের মাঝে গোলপাতার ছাউনি সমেত একটি বিশ্রামাগার। ঘরটির চারপাশে বসার জন্য বেঞ্চি পাতা। পুকুরের পাড় থেকে কাঠের তৈরি সেতু গিয়ে পৌঁছেছে ঘরটিতে। পুকুরের পাড় ধরে যে কোনো হাতের ডান কিংবা বাঁয়ে গেলেই কাঠের ট্রেইল। যে কোনো একদিক থেকে ঢুকলে অন্যদিকে এ পথের শেষ করা যায়।
বর্ষায় ভ্রমণের জন্য সুন্দরবনের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা কটকা। এখানে পর্যটক লঞ্চ নোঙ্গর করে কটকা খালে। খালের পশ্চিম পাড়ের জেটি পেরিয়ে উপরে উঠলেই বন কার্যালয়। এর সামনে দিয়ে সোজা পশ্চিমমূখী ইট বাঁধানো পথটি কিছু দূর চলার পরে শেষ। কটকা বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমূখী কাঠের তৈরি ট্রেইল। এটি কিছু দূর গিয়েই শেষ হয়েছে। এখান থেকে হাতের ডানে জঙ্গল ধরে সামান্য হাঁটলেই টাইগার ডেন, আর বাঁয়ে সামান্য গেলে সমুদ্র।
কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে ছোট খাল চলে গেছে সোজা পূবে। কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে জেটি। ওপরে উঠলে ওয়াচ টাওয়ার। এ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বর্ষায় সুন্দরবনের সৌন্দর্য।
কটকা ওয়াচ টাওয়ারকে পেছনে রেখে উত্তরে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। জামতলা সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। তবে বর্ষায় জামতলা সৈকত বিপজ্জনক। এ সময়ে এর সৌন্দর্য দেখেই তৃপ্ত হতে হবে, পানিতে নামা যাবে না।
কীভাবে যাবেন
সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে অবশ্যই অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। বর্ষায় সুন্দরবনে নিয়মিত প্যাকেজ ভ্রমণ পরিচালনা করে থাকে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস।
এবারের ঈদে এ প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজ ভ্রমণের শুরু ২২ জুলাই থেকে। এ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হবে হারবাড়িয়া, কটকা ও করমজল। খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা, তিন রাত তিন দিনের এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ হবে ১১ হাজার টাকা। বিদেশিদের জন্যে ১৫ হাজার টাকা। ভ্রমণ মূল্যে অন্তর্ভুক্ত খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা যাতায়াত, ভ্রমণকালীন থাকা, খাবার, সুন্দরবনে প্রবেশ মূল্য, নিরাপত্তা কর্মী, গাইড সেবা প্রভৃতি। যোগাযোগ: ০১৭৭৫১০৫৩৫১।
এছাড়া ঈগল, সোহাগ, হানিফ, সৌদিয়া, দ্রুতি ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া জনপ্রতি সাড়ে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। তবে ঈদের সময়ে এসব ভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সপ্তাহের বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস যায় খুলনা। ভাড়া ৩৯০ থেকে ১ হাজার ৫শ’ ৯৯ টাকা।
এছাড়া ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার, ইউএস বাংলা এয়ার, ইউনাইটেড এয়ারে আকাশ পথে যশোর পৌঁছেও সেখান থেকে সহজে খুলনা যাওয়া যায়। এ পথে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ হাজার ১০০ টাকা।