পাহাড়ের ঝরনা নাফাখুম

ভরা বর্ষা ছাড়াও বছরের যেকোনো সময় ঘুরে আসা যায়।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2015, 10:03 AM
Updated : 10 May 2015, 11:20 AM

নাফাখুম বাংলাদেশের ঝরনার নাম। বর্ষায় এক ঘোরলাগা বৃষ্টিমুখর পরিবেশে রওনা হলাম নাফাখুমের পথ। সবুজ পাহাড়, মেঘ, তীব্র স্রোতের সাঙ্গু নদী, জুমের ক্ষেত— প্রায় একই রকম নদীপাড়ের বিচ্ছিন্ন বসতি এসব নিয়ে থানচি–রেমাক্রির জনপথ। দলে অভিযাত্রীর সংখ্যা ২২ জন। বান্দরবান থেকে গন্তব্য থানচি উপজেলা।

বান্দরবান থেকেই রওনা হতেই দেখা গেল আকাশকে ঘিরে ধরেছে কালোমেঘ। সবুজ পাহাড়ের উপর ঘেঁষে থাকা মেঘগুলোকে বড় রহস্যময় মনে হয়! উঁচু পাহাড়ের আকাশ ছুঁয়ে বাস চলছে তীব্র গতিতে। উপরের আকাশে মেঘের তীব্র গর্জন। হঠাৎ হঠাৎ বড় বড় বজ্রপাত– ভয় ধরায় মনে! রাস্তাগুলো উঁচু পাহাড় ধরে গেছে বলে নিচের পাহাড়ের উপর মেঘগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যেন পাহাড়ের উপর চেপে বসা মেঘের দল।

রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বাস যাত্রায় কিছুক্ষণের বিরতি।  

থানচিতে পৌঁছতে সন্ধ্যা নামলো। তারপর রাতের অন্ধকার, চারপাশের পাহাড় ডুবে গেছে ঘুমের দেশে। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল থানচি গেস্ট হাউজ। এখানে পযর্টক থাকার জন্য সরকারি গেস্ট হাউজই একমাত্র অবলম্বন।

তখনও বৃষ্টি থামেনি ভালো করে। টিপটিপ বৃষ্টিতে মেঘের কুণ্ডলী উড়ে যাচ্ছে কাছে-দূরে। রাতের আহারের পবর্টা থানচি বাজারেই সেরে নেওয়া হল।

পরদিন ভোরের ঝকঝকে আকাশ। কোথাও কোনো মেঘের চিহ্ন নেই। সাদামেঘে ঢাকা আকাশের সবটুকু নীল জমিন। ঘুমন্ত পাহাড়গুলো জেগে উঠেছে ভোরের আলোয়। কলকল ধ্বনির স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদীর পানি থেকে উঠছে ভোরের হালকা কুয়াশা।

তিনটি দেশি নৌকায় করে রওনা হলাম সবাই। নদীর কূল ছাপিয়ে জেগে থাকা পাহাড়গুলো অভ্যার্থনা জানাচ্ছে অভিযাত্রীর দলকে।

তীব্র স্রোতের বাঁকগুলোতে নৌকা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় সবাইকে।  অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতি বছরে ভরা বর্ষায় নাফাখুম ভ্রমণ বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।

নাফাখুম যেতে পথে পরে তিন্দু। কিছুক্ষণের বিরতি দেওয়া হয় তিন্দু বাজারে। নদীর পাড়ের এই বাজারে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে আবার রওনা হলাম। বড় বড় পাথরের জঙ্গল নদীর পাড়জুড়ে পাথরের ভিড় ঠেলে নৌকা চালানোটা বেশ ঝুকিপূর্ণ।

দুপুর নাগাদ পৌঁছায়ে যায় রেমাক্রি বাজারে। বাজারের পাশেই গেস্ট হাউজে নিজেদের থাকার ব্যবস্থা হল। দুপুরের রোদে রওনা হলাম পাহাড়ে ঝরনা নাফাখুমের পথে।

রেমাক্রি থেকে পায়ে হেঁটে ঘণ্টা তিনেকের পথ। বৃষ্টি হওয়ায় পথটা বেশ পিচ্ছিল। কখনও নদীর স্রোত কখনও বা নদীর পাড় ধরে পথ শেষ করছি। অনেক সময় সাঁতার দিয়ে যাওয়াটায় অনেক সহজ মনে হয়। নদীর কোথাও বুক সমান আর কোথাও মাথা সমান পানির স্রোত।

অনেক দূরে থেকেই ঝরনার শব্দ পাওয়া যায়। সবুজ পাহাড়ের বুকে নেমে আসছে নাফাখুমের স্রোত। কাছে যেতেই মনে হল এই যেন এক বিস্ময়ের ঘোর! দু’পাশে পাহাড়, ক্যাসকেট থেকে বয়ে আসছে তীব্র গতির পানি স্রোত। বৃষ্টি হাওয়ায় স্রোতের গতিটা যেন বেড়েছে কয়েকগুণ। নাফাখুমে এসে মনে হল অনেক দিনের স্বপ্ন যেন হাতে পেলাম! ঝরনার পাড়ে কিছুক্ষণের মধ্যে নেমে আসে অন্ধকার। এবার ফেরার পালা।

প্রয়োজনীয় তথ্য: ভরা বর্ষা ছাড়া নাফাখুমের ঘুরে আসতে পারেন বছরের যেকোনো সময়। ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি বান্দরবান। বান্দরবানের থানচি বাস স্টেশন থেকে প্রতিদিন বাস ছাড়ে থানচির পথে। তাছাড়া রিজার্ভ চান্দের গাড়িতে থানচি পৌঁছানো যাবে।

থানচি থেকে রির্জাভ বোট নিয়ে রেমাক্রি পযর্ন্ত যাওয়া যাবে। রেমাক্রি থেকে পায়ে হেঁটে নাফাখুম পৌঁছানো যাবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৫৫৬ ৭১০০৪৩, ০১৮১৫ ৮৫৬৪৯৭।

কোথায় থাকবেন: রেমাক্রি বাজারে থাকার ব্যবস্থা আছে । তাবু থাকলে নাফাখুমের পাশেও নাইট ক্যাম্প করা যায়।

খেয়াল করবেন: অতিরিক্ত পযর্টকের চাপে বাংলাদেশের অনেকগুলো সুন্দর স্থান দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। ঝরনার আশপাশে কোনো ধরনের প্ল্যাস্টিক, ময়লা, আবর্জনা ফেলবেন না। হাতে সময় থাকলে ঝরনার আশপাশটা একটু পরিষ্কার করে আসবেন। প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে সবার আগে।

ছবি: লেখক।