বর্ষায় কক্সবাজার

মানুষের ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি ভ্রমণ যাদের পছন্দ, তাদের কক্সবাজার যেতে হবে বর্ষায়।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2015, 10:03 AM
Updated : 11 July 2015, 11:34 AM

এই ঋতুতে কক্সবাজার যেন বদলে যায় পুরোপুরি। সৈকতে পর্যটকের ভিড় থাকেনা,  আবার কম খরচেও বেড়ানো যায়। বাদল দিনের নির্জন সৈকতে বেড়াতে চাইলে দুতিন দিনের সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে।  

ঢাকা থেকে রাতের বাসে চড়ে চলে যান কক্সবাজার। পছন্দসই কোনো হোটেলে উঠে পড়ুন।

এ ভ্রমণের প্রথম দিন রাখতে পারেন সৈকত ভ্রমণের জন্য। কক্সবাজার শহরে সমুদ্র সৈকতের তিনটি জনপ্রিয় পয়েন্ট হল লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী।

লাবনী ও সুগন্ধা সৈকতে পর্যটকের আনাগোনা অপেক্ষাকৃত বেশি। কলাতলী পয়েন্টে সবসময়ই পর্যটক কম থাকে। তিনটি সৈকতই পাশাপাশি। পছন্দসই যে কোনো সৈকতে বেড়াতে পারেন। ইচ্ছে হলে ছাতার নিচে আরামচেয়ার ভাড়া নিয়েও সমুদ্র উপভোগ করতে পারেন।

তবে বর্ষায় সমুদ্র স্নানের জন্য নিরাপদ জায়গা লাবনী ও সুগন্ধা সৈকত। কারণ এ দুটি সৈকতেই সার্বক্ষণিত লাইফ গার্ড আছে। দিনের প্রথম অংশ রাখতে পারেন সমুদ্র স্নানের জন্য। দ্বিতীয় অংশ সৈকতে ঘুরে বেড়ান। সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখতে ভুলবনে না। ইচ্ছে হলে রাত অবধি তিনটি সৈকতেই থাকতে পারেন।

বর্ষায় কক্সবাজার ভ্রমণের দ্বিতীয় দিনে যেতে পারেন হিমছড়ি ও ইনানী। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষা হিমছড়ি সমুদ্র সৈকত। এখানকার পাহাড়ে উঠে চোখের সামনে দেখুন সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র। এছাড়া বর্ষায় হিমছড়ির পাহাড়ের হিম শীতল ঝরনাগুলোও প্রাণ ফিরে পায়। এ পাহাড়ের উপরে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। এখানকার সমুদ্র সৈকত স্নানের জন্য উপযোগী নয়।

তাছাড়া বর্ষায় এ সৈকতে ঢেউও বেশি থাকে। দুপুরের খাবার সেরে চলে যেতে পারেন ইনানী সমুদ্র সৈকত।

হিমছড়ি থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পূর্ব দিকে আরেকটি আকর্ষণীয় সৈকত ইনানী। এখানে রয়েছে পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার ভেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে ইনানীর কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এ সৈকতে বেড়িয়ে সময় থাকলে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে আরও কিছুটা সামনে ঘুরে আসতে পারেন। সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসুন হোটেলে।

হিমছড়ি আর ইনানী ভ্রমণে পর্যটকের সংখ্যা অনুযায়ি সারা দিনের জন্য ভাড়া নিতে পারেন অটো রিকশা কিংবা জিপ। অটো রিকশায় তিনচার জন আর জিপে ১০ থেকে ১২ জন পর্যন্ত ভ্রমণ করা যায়।

কক্সবাজার শহর থেকে সারা দিনের জন্য একটি অটো রিকশার ভাড়া ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ১ হাজার টাকা এবং সিএনজি চালিত অটো রিকশা পাওয়া যাবে ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকায়। জিপের ভাড়া পড়বে ৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা।

ভ্রমণের তৃতীয় দিনে যেতে পারেন রামু। তবে এদিন খুব সকালে উঠে যেতে পারেন শহরের ফিশারি ঘাটে। কক্সবাজার বিমান বন্দরের পাশে বাকখালী নদীর তীরের ফিশারি ঘাটে খুব সকালে দেখা যাবে প্রচুর সামুদ্রিক মাছ।

ফিসারি ঘাট দেখে সকালের খাবার সেরে রওনা দিতে পারেন রামুর উদ্দেশ্যে। কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী এ থানায় আছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। রামুর বৌদ্ধ মন্দির ঘুরে যেতে পারেন ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে রয়েছে এই সাফারি পার্ক। কক্সবাজার জেলার ডুলাহাজরা বনাঞ্চলের ডুলাহাজরা ও হারগোজা ব্লকের প্রায় ৯০০ হেক্টর জায়গার এই পার্কে দেখা মিলবে নানান রকম প্রাণী।

প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। এখানে নির্দিষ্ট প্রবেশের জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

রামু ও ডুলাহাজরা যাওয়ার জন্য কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া এদুই জায়গা ভ্রমণের জন্য একটি গাড়িও ভাড়া করে নিতে পারেন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারেন সড়ক ও আকাশপথে।

ঢাকা থেকে সরসরি কক্সবাজার যায় সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ১ হাজার ৭শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা।

এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারের বিমান নিয়মিত চলাচল করে কক্সবাজারের পথে।

আকাশ পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক পথের সর্বনিম্ন ভাড়া ৪ হাজার ৫শ’ টাকা। 

কোথায় থাকবেন

কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে। ধরণ অনুযায়ী এ সব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।

কক্সবাজারের সর্বাধুনিক হোটেলগুলো হল: কলাতলী সড়কে ওশেন প্যারাডাইস (০৩৪১-৫২৩৭০, ৫২৩৭৯) ও লং বিচ (০৩৪১-৫১৮৪৩-৬), সৈকত সড়কে কক্স টুডে (০৩৪১-৫২৪১০-২২) ও সি-গাল (০৩৪১-৬২৪৮০-৯১)। কলাতলী সৈকতে সায়মন বিচ রিসোর্ট (০৩৪১-৫১৩৫০)।

এছাড়া কক্সবাজার সৈকতের কাছাকাছি অন্যান্য ভালো মানের হোটেল হল সুগন্ধা সৈকতে হোটেল, প্রাসাদ প্যারাডাইস (০১৫৫৬৩৪৭৭১১), লাবনী সৈকতে হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল (০৩৪১-৬২৮৮১-৫), হোটেল মিশুক (০৩৪১-৬৪৩২০) ইত্যাদি।

কক্সবাজার ফিশারিঘাটে সামুদ্রিক মাছ। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

প্রয়োজনীয় তথ্য

ঈদের ছুটির কয়েকটি দিন বাদে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত অফসিজন ছাড় আছে। এছাড়া বিভিন্ন হোটেলে আছে সামার অফারও।

ইউএস বাংলা এবং নভো এয়ারের বিশেষ সামার প্যাকেজও আছে কক্সবাজারে।

সতর্কতা

বর্ষায় কক্সবাজার ভ্রমণে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ। সমুদ্র স্নানে নামার আগে জোয়ার ভাটার তথ্য জেনে নিন। সৈকতে টাঙানো সবুজ পতাকা জোয়ারের নির্দেশ করে। এসময়ে সমুদ্রে স্নান করা নিরাপদ। ভাটার সময় লাল পতাকা টাঙানো থাকে। এ সময়ে সমুদ্র স্নানে নামা যাবে না।

একই সঙ্গে একটু উপর নিচ করে দুটি লাল পতাকা টাঙানো জায়গা বরাবর চোরাবালি কিংবা চোরা খাল নির্দেশ করে। এ জায়গায় স্নানে নামা যাবে না।

সাঁতার জানা থাকলেও সমুদ্রে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট কিংবা টিউব নিয়ে নিন। সমুদ্রে নামতে ট্রাউজার কিংবা হালকা পোশাক পরিধান করুন। লুঙ্গি ও শাড়িজাতীয় কাপড় পরে সৈকতে নামবেন না।

কোন রকম ময়লা আবর্জনা সৈকতে ফেলবেন না।