২০২০ সালের জুনে চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে অভিষেক হয় সুহাসের।
Published : 22 Apr 2024, 10:55 PM
মধ্য ইউরোপের দেশে চেক প্রজাতন্ত্র। দেশটির ক্রিকেট পরিচালনা করে ‘চেক ক্রিকেট ইউনিয়ন’। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদস্য এ দেশটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করে ২০০৮ সালে, ওয়েলসে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে। তার পর থেকে ইউরোপীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের নানা আয়োজনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে দেশটি।
তাদের টি-টোয়েন্টি জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন একজন বাংলাদেশি। নাম সুহাস ফারহাদ। ১৯৯০ সালের ২০ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া এ তরুণের বাড়ি বাংলাদেশের মেহেরপুরে। সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে তিনি। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক বাবা ও গৃহিণী মায়ের চার ছেলে-সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সুহাস।
২০২০ সালের জুনে চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে অভিষেক হয় সুহাসের। ডানহাতি পেস বোলার ও ব্যাটার সুহাসের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বোলিং-এ ধারাবাহিক কৃতিত্বে দলে জায়গা পাকা করেছেন তিনি। ইউরোপীয়ান ক্রিকেটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী ২০২০-২৩ সালে খেলা মোট ৪০টি টি-টোয়েন্টি ও টি-টেন ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ৪৫, ইকোনমি রেট ৯.২৫।
সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন সুহাস। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানিয়েছেন তার পথচলার গল্প।
ক্রিকেট খেলার শুরুটা কীভাবে?
আমার বাবা ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি করেছেন। যখন ছোট ছিলাম, বাড়ির উঠোনে বাবা বল করতেন, আর আমি ব্যাট করতাম। বাংলাদেশে যেটা হয়, কেউ ক্রিকেটার হতে চাইলে প্রথম বাধাটা পরিবার থেকে আসে। পড়াশোনা করো, ক্যারিয়ার গড়ো- এ ধরনের ব্যাপার থাকে। আমি ভাগ্যবান, এ ধরনের কোন সংকট ছিল না। সব সময় পরিবারের সমর্থন পেয়েছি। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতাম। ২০০৮ সালে আমি জেলা লীগে খেলেছি। হাই স্কুলে পড়ার সময় থেকে জেলাভিত্তিক স্কুল ক্রিকেটে খেলতাম। জেলার হয়েও খেলতাম। ইমরুল কায়েস ভাই তখন আমার সিনিয়র।
বিদেশের মাটিতে ক্রিকেট খেলা শুরু কীভাবে?
আমি প্রথম বিদেশে গিয়েছি ২০১০ সালে, লন্ডনে। ইন্টারমিডিয়েট শেষ করার পর সেখানে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট লীগের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। লন্ডনের ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তারপর কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে আসি। ২০১৬ সালে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যাই চেক প্রজাতন্ত্রে। সেখানকার বোহেমিয়ান ক্রিকেট ক্লাবের নিয়মিত সদস্য হই। প্রথম মৌসুমেই জাতীয় ক্লাব ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি লীগে দশ ম্যাচ খেলি। পাঁচের নিচে ইকোনমি রেট দিয়ে পাই ১৭ উইকেট। সেরা বোলিং ছিল ভালভারি ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ১১ রানে ৫ উইকেট। ৪/৫ পজিশনে ৭ ম্যাচে ব্যাটিং করে ৪১.৭১ গড়ে মোট রান করি ২৯২, এর মধ্যে একটি অর্ধশতকও রয়েছে।
চেক প্রজাতন্ত্রের জাতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেলেন কখন?
২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি লীগ দিয়ে আমার চেক প্রজাতন্ত্রে ক্রিকেট খেলা শুরু। আমি যেখানে চাকরি করতাম সেখানের এক পাকিস্তানি সহকর্মী আমাকে লীগে খেলার জন্য নিয়ে যান। তার নাম জাবেদ ইকবাল। আইসিসির একটা নিয়ম আছে, কোন দেশের হয়ে খেলতে হলে তাকে একটানা তিন বছর ওই দেশে থাকতে হবে। তবেই ন্যাশনাল টিমে খেলতে পারবে। আমি যদি অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট হোল্ডার হই, অন্য দেশের নাগরিক হই, তাহলে তিন বছর সে দেশে থাকতে হবে। যে কারণে যথেষ্ট পারফর্ম করার পরও জাতীয় দলে খেলতে আমার সময় লেগে যায়।
চেক প্রজাতন্ত্রে ক্রিকেট কেমন জনপ্রিয়?
শুরুতে ওরা ক্রিকেটকে বেসবলের মতো মনে করতো। এখন আইসিসি চাচ্ছে ইউরোপে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে, ওদের একটা পৃষ্ঠপোষকতা আছে। স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেটে ফান্ডিং করছে। আমাদের ক্রিকেট দলের সবাই প্রবাসী, একজন শুধু স্থানীয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য আর পাকিস্তান থেকে আসা অভিবাসী তারা। বাংলাদেশের কেবল আমি। এখানে প্রায় পাঁচ-ছয়শ বাংলাদেশি থাকেন। তারা ক্রিকেট ভালোবাসে। চেক সরকার ও স্পোর্টস মিনিস্টার থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা পাই। আমাদের প্রধান কোচ অস্ট্রেলিয়ার, নাম চার্লস ক্রাউচার। উনিও খুব আন্তরিক। তবে আমরা খুব কম ম্যাচই খেলার জন্য পাই, যার কারণে র্যাংকিং একটু পেছনে। টেস্ট স্ট্যাটাস এখনও পাইনি, কিন্তু ডমেস্টিক ওয়ানডে খেলতে পারি।
অবসর সময়ে কী করেন? দেশে এসে কেমন লাগছে?
ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। এখনো বিয়ে করিনি। বিদেশে থাকলেও নাড়ির টান তো এখানে। চেক প্রজাতন্ত্রের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছি, ওদের সঙ্গে থাকতে থাকতে। তবে পৃথিবীর যেখানেই যাই, যা কিছুই করি, দেশের জন্য অনুভূতি অন্য রকম। দেশটা তো নিজের, অন্য কিছুর সঙ্গে এর তুলনা হয় না।
বাংলাদেশে কিংবা মেহেরপুরে ক্রিকেটের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে কিনা?
মেহেরপুরে আমাদের বাসার নিচে একটি ক্লাব আছে। গ্রামে ফান্ড রাইজ করে নানা রকম খেলাধুলা চালাই। আমার দাদা নছিম উদ্দিন একজন অবস্থাসম্পন্ন কৃষক ছিলেন, তার দান করা একটা বড় মাঠ আছে, যেখানে খেলাধুলা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর ইত্যাদি দিবসগুলোতে ওই মাঠে নানা প্রতিযোগিতায় আয়োজন করা হয়। খেলা না থাকলে আমি ছুটি নিয়ে কখনও এক-দুই সপ্তাহের জন্য দেশে আসি। গ্রামের কিশোর-তরুণদের সময় দিই।