মশলাদার মে

গ্রীষ্ম চলে এসেছে আর ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে বড় বাজেটের সিনেমাগুলোর মুক্তির হিড়িক। যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যান্য দেশের সিনেমাগুলোর মধ্যে চলছে চোখে পড়ার মত প্রতিযোগিতা। এরকমই আটটি সিনেমা রয়েছে মে মাসে মুক্তির অপেক্ষায়।

শরীফুল হক আনন্দবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2015, 03:17 PM
Updated : 2 May 2015, 03:52 PM

১. স্পাই

‘ব্রাইডসমেইডস’ আর ‘দ্য হিট’-এর মতো ব্লকবাস্টার হিট সিনেমার নির্মাতা পল ফিগ আবারও হাজির কমেডির জাদু নিয়ে। তার প্রিয় অভিনেত্রী মেলিসা ম্যাকার্থিকে এবার দেখা যাবে এক সিআইএ অ্যানালিস্টের ভূমিকায়, ঘটনার পরম্পরায় যিনি জড়িয়ে যান এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কর্মকাণ্ড ফাঁস করে দেওয়ার অভিযানে। মেলিসার সঙ্গে এবার আরও আছেন জুড ল আর জেসন স্ট্যাথামের মতো তারকারা। হলিউড রিপোর্টার দাবি করছে, ম্যাকার্থির কাছ থেকেই নাকি এবার ‘সত্যিকারের অ্যাকশন’ দেখা যাবে!
 

সিনেমাটি অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পাচ্ছে ২১শে মে, ভারতে ২২শে মে এবং আর্জেন্টিনায় ২৮শে মে।

২. গুড কিল

২০১৪ সালটা দারুণ কেটেছে মার্কিন অভিনেতা ইথান হকের। মুক্তি পেয়েছে ‘বয়হুড’, যাতে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন সব মহল থেকেই। এবার তিনি আসেছেন পুরোপুরি বিপরীতধর্মী একটি চরিত্র নিয়ে। অ্যান্ড্রু নিকোলের ‘গুড কিল'-এ তাকে দেখা যাবে বিমান বাহিনির এক সাবেক পাইলট হিসেবে, লাস ভেগাসের পাশের এক মরুভূমিতে তালেবানদের বিরুদ্ধে একাকী লড়াইয়ে যার দিন কাটে।

ড্রোন পাইলটদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার বিষয় নিয়ে ‘গ্যাটাকা’ খ্যাত অ্যান্ড্রু নিকোল নির্মাণ করেছেন রাজনৈতিক ড্রামাধর্মী এই সিনেমা। একজন সাবেক পাইলটের হতাশা, নিজের প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ- সব ধরনের মানসিক কষ্টই পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন ইথান হক। সিনেমাটি নিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকা টেলিগ্রাফ-এর মন্তব্য, “গুড কিল একটি বাস্তবধর্মী, উত্তেজনাপূর্ণ আধুনিক যুদ্ধের সিনেমা, যা ক্লিন্ট ইস্টউডের ‘আমেরিকান স্নাইপার’ এর গল্পের গতিকেও হার মানায়।”

সিনেমাটি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাচ্ছে ১৫ই মে।

 

৩. আই অ্যাম বিগ বার্ড: দ্য ক্যারল স্পাইনি স্টোরি

টিভি পর্দায় ক্যারল স্পাইনির ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৬৯ সালে শিশুতোষ টিভি সিরিজ ‘সেসামি স্ট্রিট’ এর বিগ বার্ড হিসেবে। স্কুল জীবনে অপমানের শিকার এক কিশোর থেকে থেকে মার্কিন টেলিভিশনের অন্যতম প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়া স্পাইনির জীবনের আলেখ্য উঠে এসেছে ‘আই অ্যাম বিগ বার্ড: দ্য ক্যারল স্পাইনি স্টোরি’ তথ্যচিত্রটিতে।

এম্পায়ার বলছে, তথ্যচিত্রটিতে থাকছে তার ছোটবেলার বিভিন্ন হোম ভিডিওর ফুটেজ, খিটখিটে বাবার সঙ্গে তার বেড়ে ওঠা, পাপেটিয়ার হিসেবে তার কর্মজীবনের প্রথমভাগ এবং সর্বোপরি বিগ বার্ড হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার গল্প। বর্তমানে ৮১ বছর বয়সী স্পাইনি এখনও ব্যস্ত রয়েছেন তার পাপেট জগত নিয়ে।

তথ্যচিত্রটি মার্কিন যুক্তরাজ্যে মুক্তি পাচ্ছে ১ মে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাচ্ছে ৬ মে।

৪. ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড

ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক এবং কবি থমাস হার্ডির উপন্যাস অবলম্বনে সেই ষাটের দশকেই দৃঢ়চেতা বাথসেবা এভারডিনের ভূমিকায় সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী জুলি ক্রিস্টি। এবার তার জুতোতেই পা গলিয়েছেন এই প্রজন্মের অভিনেত্রী ক্যারি মুলিগান।

ড্যানিশ পরিচালক থমাস ভিন্টেনবার্গের ‘ফার ফ্রম ম্যাডিং ক্রাউড’-এ এর মধ্যেই সমালোচক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে মুলিগানের অভিনয়। প্রশংসা থেকে বাদ পড়েননি মাইকেল শিন, টম স্টারিজ এবং ম্যাথিয়াস শোয়েনার্টসও, যারা অভিনয় করেছেন বাথশেবার তিন প্রেমিক চরিত্রে।

‘দ্য হান্ট’ এর মতো সিনেমা নির্মাণ করে সমালোচক মহলে ভালই সাড়া ফেলেছিলেন ভিন্টেনবার্গ। সিনেমাটি ২০১৪ সালে সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমা বিভাগে মনোনয়ন পায়।

এবারের সিনেমাটি যুক্তরাজ্যে মুক্তি পেয়েছে ১ মে। ২০ মে বেলজিয়াম এবং ১৫ জুলাই সিঙ্গাপুরে দেখা যাবে সিনেমাটি।

 

৫. টুমরোল্যান্ড

“কি হতে পারে ভবিষ্যতে? ছোটবেলায় আমরা জানতাম, ভবিষ্যতটা অনেক দারুণ আর সুন্দর। এখন বড় হওয়ার পরও দেখছি পৃথিবী যে অন্ধকার অবস্থায় পড়েছিল, এখনও সেরকমই আছে। সে সুন্দর পৃথিবীর আশা কোথায় গেল, কোথায় হারালো সে ভবিষ্যত?”-এরকম এক প্রশ্ন থেকেই জন্ম ‘টুমরোল্যান্ড’-এর।

‘র‌্যাটাটুয়ি’ আর ‘দ্য ইনক্রেডিবলস’- এর মতো সফল অ্যানিমেশন সিনেমার অস্কারজয়ী নির্মাতা ব্র্যাড বার্ড এই ধারণা নিয়েই পুরোপুরি ভিন্ন স্বাদের এক সাই-ফাই থ্রিলার নিয়ে আসছেন । ‘টুমরোল্যান্ড’কে বলা হচ্ছে ‘ডিজনির এক ভিন্ন জগত’- যার পরতে পরতে উত্তেজনার বারুদে ঠাসা।

সিনেমার প্রধাণ চরিত্রগুলোতে দেখা যাবে জর্জ ক্লুনি এবং হিউ লরির মত তারকাকে। ভবিষ্যতের নিষ্ঠুর শাসক ডেভিড নিক্সকে থামাতে এক ভয়ংকর অভিযানে নামবেন জর্জ ক্লুনির চরিত্র ফ্র্যাঙ্ক ওয়াকার। সময় এবং মহাশূন্যের মাঝামাঝি একটি জগত নিয়ে ব্র্যাডের সঙ্গে সিনেমাটির গল্প লিখেছেন ডেমন লিন্ডলফ।

সিনেমাটি যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাচ্ছে ২২ মে, ফ্রান্সে ২০ মে এবং ব্রাজিলে ২৮ মে।

৬. ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড

পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপ্টিক জগত নিয়ে জর্জ মিলারের বিখ্যাত সিরিজ ‘ম্যাড ম্যাক্স’ আবারও ফিরছে বড় পর্দায়। মূল চরিত্রে অবশ্য থাকছেন না আশির দশকে ‘ম্যাড ম্যাক্স’ ট্রিলজিতে অভিনয় করা মেল গিবসন। তার জায়গায় ম্যাক্স রকাটান্সকি চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব পড়েছে টম হার্ডির ওপর। তার বিপরীতে থাকছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন।

মেল গিবসনের জুতোয় পা গলানো হার্ডিকে নিয়ে বেশ আশাবাদী পরিচালক মিলার। তার মতে, “হ্যাঁ অবশ্যই, মেল যে চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিল, সেটিই অপরিবর্তিত থাকছে। আমরা সেই একাকী যোদ্ধা ম্যাক্সকেই দেখবো, যে কি না পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে, টম হার্ডি চরিত্রটিকে টম হার্ডি সুলভই করে তুলেছে। তার অভিনয়ের অভিনবত্ব ম্যাক্সকে ভিন্ন রূপ দিয়েছে।”

সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে ১৫ মে।

 

৭. হোয়েন মার্নি ওয়াজ দেয়ার

স্টুডিও ঝিবলির শেষ সিনেমা হিসেবে হিরোমাসা ইয়োনবায়াসির এই অ্যানিমেশন সিনেমাটি আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে গত বছর থেকেই। ২০১৪ সালেই জাপানে মুক্তি পেলেও বিশ্বব্যাপী সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে এ মাসে। 

‘স্পিরিডেট অ্যাওয়ে’ কিংবা ‘হাওলস মুভিং ক্যাসেল’-এর মতো চলে ফিরে বেড়ানো ঘর-বাড়ি, বনের ভিতর দিয়ে ঘুরে বেড়ানো রহস্যময় ভূত প্রেত হয়তো নেই এই সিনেমায়, তবে জোয়ান জি রবিনসনের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই সিনেমারও আছে একবারে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য। আর তাই ‘হোয়েন মার্নি ওয়াজ দেয়ার’ দর্শকদের সামনে খুলে দেয় নতুন এক জাদুর জগৎ।

ভ্যারাইটির মতে, “যা হতে পারতো একটি যুগের সমাপ্তির নির্দেশক, সেটাই বরঞ্চ সূচনা ঘটিয়েছে আধুনিক দর্শকদের উপযোগী এক দারুণ পরম্পরার। যা কি না সেল অ্যানিমেশনে স্টুডিও ঝিবলির সেই যত্নে ভরা কারিগরির কথাই মনে করিয়ে দেয় বারবার।”

সিনেমাটি গল্প বলে দুরন্ত এক কিশোরীর। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্রামে; সেখানেই তার পরিচয় হয় মার্নি নামের আরেক রহস্যময় কিশোরীর সঙ্গে। বন্ধু হতে দেরি হয় না তাদের, আর এই দুই বন্ধুর রোমাঞ্চকর অভিযান নিয়েই এগিয়েছে সিনেমাটি।

সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে ২২ মে।

 

৮. স্লো ওয়েস্ট

ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মার্কিন ওয়েস্টার্ন গল্প; তাও আবার উনিশ শতকের প্রেক্ষাপটে, যার পরিচালক আবার ব্রিটিশ জন ম্যাককেলেন। ‘স্লো ওয়েস্ট’ তাই অভিনব গল্পের, অন্যরকম নির্মাণশৈলির এক অদ্ভূতুড়ে সিনমা।

স্কটিশ ভূমি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো পর্যন্ত নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে বের করতে অভিযানে নামে ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ। তার সঙ্গে জুড়ে যায় সিলাস নামে একজন কাউবয়, যে টাকার বিনিময় নিশ্চিত করবে কিশোরের নিরাপত্তা।

সিনেমাতে সিলাসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাইকেল ফাসবেন্ডার। কোডি স্মিট-ম্যাকফি অভিনয় করেছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রটিতে। নিউজিল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে করা হয়েছে সিনেমাটির পুরো শুটিং। সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে ১৫ মে।