পহেলা অগাস্ট বিয়ের পর্বটা সেরে ফেলেছেন সংগীতশিল্পী হৃদয় খান এবং মডেল ও অভিনেত্রী সুজানা জাফর নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর এই নবদম্পতি তাদের প্রেমকাহিনি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন গ্লিটজের সঙ্গে।
Published : 03 Aug 2014, 08:43 PM
হৃদয়-সুজানার গল্পের শুরুটা চার বছর আগে। ভালো লাগার কথাটা জানিয়ে দিয়েছিলেন তখনই, কিন্তু হৃদয়ের ডাকে সাড়া দেননি সুজানা। বন্ধুর হাতটিও ছেড়ে দেননি। আত্মভোলা, অগোছালো বন্ধুটিকে বলেছিলেন, এত সহজেই হ্যাঁ বলছেন না তিনি। হৃদয় কেবল বন্ধুর কাছে অনুরোধ জানালেন, বন্ধুত্ব যেন অটুট থাকে। কোনো কারণে যেন বন্ধুটি তাকে ছেড়ে না যায়। সুজানা তখন শর্ত জুড়ে দিলেন, ‘নিজেকে পাল্টাও’।
নিজেকে বদলানোর গল্পটি শোনালেন হৃদয় খান।
“আমি খুব অগোছালো। কাজের ব্যাপারে শতভাগ পেশাদার হতে পারিনি। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। নিজেকে ট্র্যাকে ফেরাতে পারছিলাম না। একাকীত্ব তখন গ্রাস করে ফেলেছে আমাকে। কিন্তু নিজেকে তো পাল্টাতে হবে। ধীরে ধীরে নিজেই নিজেকে বদলাতে শুরু করলাম। তবে বন্ধু সুজানা আমার হাতটি ছেড়ে দেয়নি। প্রিয় বন্ধুটি বন্ধুর মতোই সারাক্ষণ পাশে ছিল।”
‘আড়াল’ গানের মিউজিক ভিডিওর জন্য মডেল খুঁজছিলেন হৃদয় খান। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মডেল সুজানাকেই যুৎসই মনে হল। তরুণ গায়ক হৃদয় খানকে চিনতেন না সুজানা, ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন প্রায়। পরে তার বন্ধুরা জানালেন, এই হৃদয়ই গেয়েছেন ‘চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারও হও।’ গানটি সুজানার ভালো লাগার তালিকায় ঢুকে পড়েছে ঢের আগেই। সেই ভালো লাগা থেকেই সুজানা হৃদয়ের সঙ্গে মিউজিক ভিডিওতে পারফর্ম করলেন। সেই থেকে পরিচয় আর বন্ধুত্ব।
হৃদয় ও সুজানা জানালেন, তাদের বন্ধুত্বের ভিত বড় শক্ত।
“জীবনে কতজনই তো বন্ধু হয়। খুব কাছের বন্ধুও অনেকেই আছে। কিন্তু সত্যিকারের বন্ধু আসলে একজনই হয়। হৃদয় আমার সেই বন্ধুটি। ওর সঙ্গে আমি ব্যক্তিগত বিষয়তো বটেই আমার কাজের ব্যাপারগুলো নিয়েও খোলামেলা আলোচনা করতে পারতাম। যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না, হৃদয় খুব সহজে সেসব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারত।”
সুজানার কণ্ঠে যখন হৃদয়ের স্তুতি, হৃদয় তখন সুজানার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
আর তাই দেরি করেননি হৃদয়। ভণিতা না করে সুজানাকে বলেই ফেললেন তার মনের কথা। সুজানা সেদিন হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন হৃদয়ের কথা।
“হৃদয় হঠাৎ করেই প্রেমের প্রস্তাব দিলে সেটা আমার কাছে খুব হাস্যকর মনে হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম, ও দুষ্টুমি করছে। কতজনই তো আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছে। হৃদয়কে সেদিন আমি পাত্তা দিইনি। সত্যিকারের ভালোবাসা বলে মনে হয়নি।”
তবে হৃদয় দমে যাননি, বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন।
এর মধ্যে হৃদয়, সুজানা-দুজনের জীবনেই অনেক পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের সঙ্গে দুরত্ব বেড়েছে হৃদয়ের। ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন সুজানাও। সুজানার বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। তখন হৃদয় পরম মমতায় আগলে রেখেছেন বন্ধুকে।
“মানুষের খারাপ সময়ে যারা পাশে এসে দাঁড়ায় তারাই প্রকৃত বন্ধু। আমি খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম। সবকিছু মিলিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। হৃদয় তখন আমার পাশে ছিল। আমাকে নতুন করে পথ চলতে শিখিয়েছে সে।”
সুজানা ততদিনে টের পেয়েছেন হৃদয় তার মন জয় করে নিতে শুরু করেছে। আর হৃদয়ও নিজেদের সম্পর্কের ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলতে শুরু করেছেন।
তখনও কিন্তু সুজানার মন পুরোপুরি গলেনি। হৃদয়ের আকুতি ফুটে উঠলো ‘বল না তুই বল না’ গানে। সুজানা তাতেও সায় না দেননি। হৃদয়ের কণ্ঠে তাই অভিমানের সুর, ‘এত কিছু বোঝ, মন বোঝ না’। হোক এফএম রেডিও বা টেলিভিশনের লাইভ প্রোগ্রাম, হৃদয় সুজানাকে একের পর এক গান উৎসর্গ করতে লাগলেন।
অবশেষে সায় দিলেন সুজানা। কিন্তু এরই মধ্যে তার পরিবারের সদস্যরা উঠেপড়ে লেগেছেন তার বিয়েরন জন্য। হৃদয়কে সব খুলে বলতেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন মনের মানুষকে একেবারে নিজের করে নেবেন।
“সুজানার বিয়ের খবরে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। সুজানা পর হয়ে যাবে, এ কথা আমি মানতে পারছিলাম না। সুজানাকে হারাতে চাইনি আমি। তাই দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে আমরা বিয়ে করব।”
স্বামী হিসেবে নিজেকে মূল্যায়নের কথা বলতেই, হৃদয় বললেন, “আমি মনে করি না আমি ১০০% পারফেক্ট হাজব্যান্ড। কিন্তু আমি সুজানাকে সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসি। ওকে সুখী করতে যা করার আমি করব।”
হৃদয়ের কথা কেড়ে নিয়ে সুজানা বললেন, “আমার শতভাগ পারফেক্ট হাজব্যান্ড লাগবে না। তুমি এখন যেমন আছ, তেমন থাক। আমাকে এমনি করেই ভালোবেসো। এর বেশি কিছু চাই না আমি।”
এই বদলে যাওয়া হৃদয়কে নিয়ে সুজানা হাঁটতে চান জীবনের বাকিটা পথ। জানালেন, স্বামীর জন্য কাজ থেকেও লম্বা ছুটি নিচ্ছেন তিনি।
“হৃদয়কে নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবনের বাকিটা পথ হাঁটতে চাই আমি। নানা ব্যস্ততায় হৃদয়কে সময় দিতে পারিনি। এবার লম্বা ছুটি নিচ্ছি। হৃদয়কে বেশ খানিকটা সময় দিতে চাই।”
সেই সঙ্গে সমালোচকদেরও এক হাত নিয়েছেন সুজানা।
“আমার ও হৃদয়ের সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই নানা কুকথা ছড়িয়েছে। আমাদের নামে কুৎসা রটিয়ে ওদের কি লাভ হল? জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে সব আল্লাহ লিখে দেন। আল্লাহ চেয়েছেন বলে আমাদের বিয়েও হয়েছে। অনেকেই হিংসা করবেন, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।”
হৃদয়ও সায় দিলেন তার কথায়। হৃদয়ের সরল স্বীকারোক্তি, “সুজানা আছে বলে এখন আমি অনেক নির্ভার। ও শুধু আমার বন্ধু আর স্ত্রী-ই নয়, সহকর্মী হিসেবেও সে দারুণ।”
আড্ডার শেষে সুজানার করে বসলেন মারাত্মক এক অভিযোগ।
“হৃদয় গানের মানুষ। সারাদিন গান নিয়ে পড়ে থাকে। আমাকে গান উৎসর্গ করে। কিন্তু আমাকে কখনও সে সামনাসামনি গান শোনায় না। ওকে কতবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু ও নাকি লজ্জা পায়।”
হৃদয়ও কম যান কিসে, বললেন, “আমার দুজনের মধ্যে সুজানা সবচেয়ে বেশি কথা বলে। ও যখন বলতে শুরু করে তখন আমার বলার কোনো সুযোগ নেই।”