ঢাকা ঘুরে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও নির্মাতা অঞ্জন দত্ত। পঞ্চমবারের মত তার ঢাকা সফরে সঙ্গে ছিলেন একমাত্র ছেলে নীল দত্ত, তিনি পেশায় সুরকার আর সতীর্থ অমিত দত্ত, গিটারিস্ট হিসেবে যিনি সুপরিচিত। তিন দত্ত মিলে ঈদের পরদিন ঢাকা ক্লাবে আড্ডা দিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। আড্ডার কিছু অংশ গ্লিটজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরছেন চিন্তামন তুষার।
Published : 02 Aug 2014, 10:42 AM
গ্লিটজ: ঊনষাটে কী শুনতে পাবো?
অঞ্জন: ঊনষাট আমি যখন করতে চলেছি, তখন আমার সলো অ্যালবাম বের হয় না এক যুগ ধরে। আমি আর নীল মিলে একটা অ্যালবাম করলাম ২০০০ সালে। এরপর আমার মনে হলো আমি আর ভালো কিছু করতে পারছি না। আমি তখন পুরোনো গানই গাইতে থাকলাম। সঙ্গে নীল যে কম্পোজিশন করছে তাতেই কণ্ঠ দিচ্ছি। কারণ আমি কিছু অনুভব করতে পারছি না আর। গত বছর আমার মনে হলো, না এবার একটা বয়স হচ্ছে। আমি সিক্সটিতে চলে যাচ্ছি। একটা অন্য কিছু বলতে চাইছি আমি। অন্যরকম কথা। শুধু কিছু চেনা মানুষ, রাস্তার গল্প না। এবার সব নিজের কথা। এর মধ্যে আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়েছি আমি। এবার সেই মিউজিক আমি করব বলে ঠিক করলাম। নীল বললো, ঠিক আছে তুমি করো। কিন্তু অমিত দত্তর সঙ্গে।
অমিত: আমরা বলি না, সিঙ্গার-সংরাইটার। একজন বাজাচ্ছে সেই গান লিখছে, সুর করছে। সেটা একটা আছে, তার মধ্যেই কিন্তু তিনটা ডিভিশন আছে। একটা হচ্ছে গান লেখা, মানে গীতিকবিতা বা লিরিক। দ্বিতীয়টা সুর (মেলেডি) তৈরি করা বা গানের একটা আউটলাইন দেওয়া। তৃতীয়টা কিন্তু সবার দৃষ্টির বাইরে, সেটা হচ্ছে সংগীত প্রযোজনা বা পরিচালনা। সিঙ্গার-সংরাইটাররা যার উপরে নির্ভর করে আছে।
গানের কথা বলতে গেলে সেটা যেই বাঙ্গালিই হোক-- বেশি গুরুত্ব দেই গানের কথার প্রতি। খুব ভালো বিষয়, কিন্তু গান তো সংগীতের উপর নির্ভর করে আছে। একই কারণে শিল্প-কৌশলও আড়ালে থেকে যায়। এই বয়সে এসে আমার বলতে বাধা নেই, বাঙালির এটা একটা বাজে ব্যাপার।
আমাকে যখন অঞ্জন বললো, আমি প্রত্যেকটা গানের কথা শুনলাম। প্রথমে আমি ঠিক করলাম-- গানের বিষয়গুলোর মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। এরপর ভাবলাম, গানের যে একটা শিল্পমান আছে, সংগীত করার ক্ষেত্রে তার সঠিক উপস্থাপন যেনো হয়। সংগীতশিল্পী হিসেবে অঞ্জনের গানের শিল্প-কৌশলের সঙ্গে যোগযোগ করা খুব কঠিন ছিল।
আপনারা অ্যালবামটা শুনলে বুঝবেন। এর সংগীত আপনাকে একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। গানের কথা তো ভালো লাগবেই, পরে কিন্তু আগ্রহ জন্মাবে গানের কথার পেছনে কি বাজছে সেটা শোনার জন্য। যারা গানের কথা নিয়ে পড়ে থাকে তাদের মজা যেমন দেবে তেমনি যারা সংগীত নিয়ে ভাবেন তাদের জন্য একটা বক্তব্য হচ্ছে এই অ্যালবাম। লোক দেখানোর জন্য না, আমি এটাই সবসময় করি। সেদিক থেকেই তুলে ধরা হয়েছে অঞ্জনের গানকে।
অঞ্জনের গানের একটা মান আছে যার ফলে সংগীতের দিকটা নিতে পারে অনায়াসেই। তাই অ্যালবামটিতে আয়োজন আছে, সংগীত আছে, গানের কথাও আছে।
গ্লিটজ: রং পেন্সিল পর্যন্ত যে ধরনের গান পাওয়া গেছে অঞ্জনের কাছ থেকে, এই অ্যালবাম নিয়ে কি সেখান থেকে অনেক দূরে চলে এসেছেন আপনারা, কিংবা একেবারেই অন্য কিছু আছে কী?
অমিত: হারমোনিকালি ঊনষাট অনেক বেশি জটিল। আগের অ্যালবামগুলোর সঙ্গে প্রায় কোনোই যোগাযোগ নেই। শুনলে মনে হবে, কান্ট্রি বা ফোক ধাঁচের কিন্তু তলানিতে একটু ভিন্নতা আছে। মিউজিশিয়ানরা শুনলে বুঝতে পারবেন। যারা গানগুলো বাজাবে তাদের কাছে ধরা পড়বে জটিলতার বিষয়গুলো। সহজে তুলতে পারবেন না তারা।
গ্লিটজ: অঞ্জনের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগে আপনার? ঠিক কোথায় আপনাদের রসায়ন কাজ করছে, দিনের পর দিন আপনারা একসঙ্গে আছেন। তার ছেলে তাকে আপনার সঙ্গে কাজ করতে বলছে।
অমিত: আমার কাছে বিষয়টা বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ের। নীল আমার ছোট ভাই, বন্ধু এবং ছেলের মতো। নীল কিন্তু অঞ্জনের কাছেও একইরকম। বাবা-ছেলে হাসিঠাট্টা করছে, ঝগড়া করছে, আবার তাদের মধ্যে পানাহারও চলছে।
আমাদের মধ্যে যে কেমিষ্ট্রি, উই আর ট্রায়ো। এতে কিন্তু একটা সম্পর্ক এমনিতেই আছে। কিন্তু অঞ্জনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হচ্ছে, বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ে। যেমন— অঞ্জন আমার সঙ্গে স্টেজে কথা বলে মুখে, আমি তার উত্তর দেই গিটারে। অঞ্জন কিন্তু ঠিকই বুঝে নেয় আমি কী বলছি। এই যোগাযোগটা বিমূর্ত। ছোঁয়া বা অনুভব করা যায় না। এই যোগাযোগটা তৈরি করার জন্য আপনার রেডার আরও উচ্চমানের হতে হবে। আর আমাদের দুজনের বয়স হয়েছে, জীবনটাকেও দেখলাম। এদিক থেকে একটা মিল আছে আমাদের। অঞ্জনের সঙ্গে আমার আলাপ প্রায় ৩০ বছরের মতো। একসঙ্গে মিউজিক করলে এমনিতেই গাঢ় হয়ে যায় সম্পর্ক। অনেক সূক্ষ্ণ বিষয়ে আমরা আলাপ করি। মিউজিক, গানের কথা, জীবন— প্রায় সবকিছু নিয়েই আলোচনা করি। এই সম্পর্কের কারণে আমরা রাত ১টা অব্দি গান নিয়ে ভাবি। সুর বের করার চেষ্টা করি। অন্তত একটা যোগাযোগ কাজ করে তখন। অন্য একটা পর্যায়ের চলে চাই তখন আমরা। সেটা থেকেই মিউজিকটা বের হয়।
ঊনষাটটা কোনও দিন জনপ্রিয় হবে না। খুব জটিল হয়ে গেলে কোনও কিছুই পপুলার হয় না। কিন্তু বাদ্যযন্ত্রীদের একটা বক্তব্য আছে, সেটা জানানোর জন্য আমরা কারো তোয়াক্কা করিনা।
গ্লিটজ: অঞ্জন দত্তের গান নিয়ে যে ক্রেজিনেসটা ছিল বা এখনও আছে….
অঞ্জন: না না, ছিল বলাই ভালো। এটা বলাতে আমার কোনও সমস্যা নেই। একটা বিষয়— আমি কিন্তু ছোটবেলায় জানতাম আমি নাম করবো। আমার বাবা বলেছিল, ‘এই লাইনে গেলে মারা যাবি তুই।’ যে কারণে আমার বাবা আমার সঙ্গে কথা বলেননি ছমাস। কিন্তু যেহেতু আমি জানতাম আমি নাম করবো। কিন্তু আমি নাম করার পর না আমার কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ, আমি এমন কিছু একটা হইনি যা আমার হওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল আমি নাম করবো। সুতরাং নাম করলে নাম থেকে চলে যেতেও হবে। পথ ছেড়ে দাঁড়াতেই হয় একটা সময়। আমি কিন্তু সবসময় প্রস্তুত ছিলাম বিখ্যাত হওয়ার জন্য এবং বিস্মৃত হওয়ার জন্য। আর বিস্মৃত হয়ে আমার অবস্থা কাহিল— প্রচণ্ড মাতাল হয়ে ভাববো, আমার জীবনে এটা কী হলো, এও হবে না। আমি খুব নরমালি আবার সকলের সঙ্গে মিশে গিয়ে বেরিয়ে যাবো। সেই জন্যে আপনি স্বচ্ছন্দ্যে বলতে পারেন, ছিল।
গ্লিটজ: ঊনষাট দিয়ে কি ধরা সম্ভব হবে নব্বইয়ের সেই ক্রেজিনেসটা?
অমিত: লিরিক্যাল দিক থেকে হতে পারে। কিন্তু মিউজিক্যালি আমি তা মনে করি না। কারণ মিউজিকটা আরেকটু জটিল ধরনের। কথাটা আপনি বুঝতে পারবেন। অনেক প্রশ্ন আছে প্রত্যেকটা গানে। যেমন-- এটা কেন হয়েছে? জীবনে এমন কেন হয়? অঞ্জন প্রথম থেকেই লিরিকে খুব ভালো। এখনও শুনছে তার গান। এখনও কেন শুনছে? এই প্রশ্নও এসেছে এবারের ঊনষাটে। যারা গভীর চিন্তাভাবনা করে, তাদের সবার জীবনেই এই প্রশ্নগুলো আসে, আসা উচিত বলে আমি মনে করি এবং আসবেও একদিন। এই দিকটা যোগাযোগ রক্ষা করবে, জনপ্রিয়তা পাবে কিন্তু সংগীতের দিকটা আমি ঠিক করে বলতে পারবো না। যেহেতু মিউজিক একটু জটিল।
গ্লিটজ: তার সেই সহজ-সরল সুর থাকছে না? হঠাৎ করে মাতানোর মতো কোনো কিছু নেই?
অমিত: কি ধরনের মেতে ওঠা বুঝতে হবে আমাদের। সেটা কী লাফিয়ে নাচা? আবার টুপ করে ঘুমিয়ে পরাটাও কিন্তু মেতে ওঠা। এই বুদ্ধিবৃত্তিক সূক্ষ্ণতা ঊনষাটে আছে। দেখুন মিউজিক শুধু শিল্প না এটাকে বলা হয় ফাইন আর্ট। যে কারণে শিল্পজ্ঞান যেদিন আসবে ঊনষাট তখনই যাবে ওইখানে। ওই ‘বেইলি রোডে’র কাছেই চলে যাবে।
গ্লিটজ: ঊনষাট অ্যালবামের সংগীতায়োজন অমিত দত্তকে করতে দিলেন কেন?
নীল: অঞ্জনের নতুন করে কিছু বলার ছিল বলেই ঊনষাট অ্যালবাম। তার যদি মনে হতো আমি বেলা বোস পার্ট টু লিখবো, তাহলে তিনি তা করতেন না। সে কারণেই ২০০০ সালের পর থেকে আর গান করেননি তিনি। তারপরও অঞ্জন দত্তের গান পূজো বা পূজোর পরে বেরোচ্ছিল এরকম হয়নি। তার মনে হয়েছিল আর কিছু নতুন বলার নেই। নতুন কিছু বলার জন্য যে জায়গা এবং যাকে হাজির করবে, যার সঙ্গে একাত্ম হবে, সেই ক্ষমতা এবং পরিপক্কতা আমার নেই। আমি বিচার করবো না। আমার মনে হয়েছে আমার বন্ধু, শিক্ষক, মেন্টর অমিত দত্ত, যার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি, যার সঙ্গে থাকি পরিবারের মতো, তার ইনপুটটা খুব প্রয়োজন। আমাদের সংগীতজগতে তার অবদান থাকা খুব দরকার।
আপনি বললেন না মেতে ওঠা। কিন্তু মেতে ওঠাটা কী? বাইরে ঝড় হচ্ছে। আপনি রবীন্দ্রসংগীত শুনছেন। রবীন্দ্রনাথ কী অল্প বয়সী রোমান্টিসিজমকে আপিল করে না? করে নিশ্চয়। সেইখানে রবীন্দ্রনাথকে যতোটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন, অন্য গান, নব্বই দশকের গানগুলোকেও সেই সিরিয়াসনেস নিয়ে দেখা উচিত। আমি অনুষ্ঠান করে দেখেছি। এ ধরনের গানগুলো একটা আইটেম হয়ে দাড়িয়েছে। যেটা বাংলা ব্যান্ডেও হয়ে যাচ্ছে। যে কোনও জায়গা থেকেই বলবে, ‘আমি ভালো মানসিকতা জানি না, আমাকে একটা আইটেম করে দাও।’ স্ট্যান্ডব্যাকে একটা লাস্ট আইটেম। প্রথমে অঞ্জন দত্ত, পরে ফসিলস হলো। যাই হোক, গান এখন একটা আইটেম, ক্রাউড পুলার। কিন্তু ক্রাউডকে কেনো পুল করছে সেটা কেউ দেখল না। কেনো ‘বেলা বোস’ ভালো লাগছে, ব্যাস একটা ফোন নাম্বার দেয়া আছে এই জন্যে? চাকরিটা না পাওয়ার যন্ত্রণা বাঙ্গালীর থেকে আর কে বেশি বোঝে? কিন্তু সেটাকে কেউ প্রাধান্য দেই না। ‘আমি বৃষ্টি দেখেছি’, ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’, ‘চোখ দুটো দেখছে কী সত্যি’, ‘শেষ বলে কিছু নেই’ এই ধরনের গানের চেয়ে বিখ্যাত হয়েছে রঞ্জনা। হ্যা, কিছু কথার মজা। একটা শ্রোতামহল আছে যারা বেশি মাতোয়ারা হয়ে নাচানাচি করে না। তারা চুপচাপ শোনে, তাদের কাছে যদি ঊনষাট পৌছায় তারা কিন্তু একটা নতুনত্ব পাবে।
সিগনেচার অঞ্জন দত্ত কিন্তু আছে, কথা, গায়কীতে আরও পরিণত হয়েছেন তিনি। কিন্তু সেইখানেও অমিত দত্তের অংশগ্রহণ, অ্যালবামের কারিগর দরকার আছে। সেইটার জন্য মনে হয় ঊনষাট আমার কাছে একটা অবিস্মরণীয় অ্যালবাম। যেটা বলছিলাম বাংলাদেশে এতো ফ্যান আছে। তাদের অনেকেই ফেইসবুক আর টুইটারে বলেন নতুন গান হচ্ছে না কেনো? এবার তারা ঊনষাটটা সবার আগেই পাচ্ছেন। গ্রামীনফোনের মাধ্যমে অ্যালবামটি রিলিজ হবে।
অল্প সংখ্যক মানুষ যেটা অমিতদা বলছে তাদের সিরিয়াসনেস আছে। যদি সিরিয়াস হয়ে আমি দেবলীনার গানটা না শুনি বা শেষ বলে কিছু নেই না শুনি আমি সংগীতের প্রাণ ভোগ করতে পারবো না। আমাকে শুধুই কিছু কথার মজা দিয়ে গেলো। সেই যদি মাতোয়ারা হয় তাহলে কিন্তু ঊনষাট ওইভাবে মাতাবে না। অঞ্জন দত্তের গান যারা পছন্দ করে, ‘আমি বৃষ্টি দেখেছি’, ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’, ‘মাসের প্রথম দিনটা’ বা ‘দাস কেবিন’ যাদের কাছে আপিল করেছে তাদের কাছে ঊনষাটটা আপিল করবে। তাদের কাছে হয়তো ‘রাজা রায়’ অতোটা আপিল করেনি। তাদের কাছে হয়তো পরের দিকে কয়েকটা গান এক রকম হয়ে গেছে। তাদের কাছে মনে হয়েছে প্রোডাকশন কোয়ালিটি সাফার করে যাচ্ছে। একরকম অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়ে যাচ্ছে। সরলের মধ্যেও জটিলতা হয়। ঊনষাট শুনতে খুব সিম্পল মনে হবে, কিন্তু আসলে কিন্তু এটা অনেক কমপ্লেক্স।
গ্লিটজ: সংগীতশিল্পী পরিচয় সিনেমার ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করছে না?
অঞ্জন: একজন সফল অভিনয়শিল্পী যদি পরিচালনায় নামে কিছু লোক যাবে। যারা আমায় শোনে তারাও সিনেমাটা দেখবে। সেইসঙ্গে অন্য লোকের গান পছন্দ করে কিন্তু আমার গান পছ্ন্দ করে না তারাও আসে। কিছুটা হেল্প করছে। কিন্তু এটাও ঠিক আমার সিনেমা করাটাও আমার গানকে হেল্প করেছে। শুধু দর্শক পাওয়ার জন্য না। নিজে পরিণত হওয়ার জন্যেই কাজে লেগেছে। যদি একটা মানুষ বেড়িয়ে যায়, দেশ দেখে, সে গ্রো করবে অ্যাজ অ্যান আর্টিস্ট। শুধুই বাড়িতে বসে বসে হাজারটা ফিল্ম স্ক্রিপ্ট লিখে যায় তাহলে সে গ্রো করবে না। একটু তাকে শহরের সঙ্গে মিশতে হবে, দেশ দেখতে হবে। সো এই নানা কাজের একটা কাজ আরেকটা কাজকে ট্রিগার অফ করেছে। গ্রো করতে সাহায্য করেছে।
নীল: আমার মনে হয়, আপনি অঞ্জন দত্তের গান শুনছেন। কী এমন পেলেন যেটা অন্য কেউ লেখেনি। তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো কবিতা লিখছেন না। তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো গান লিখছেন। কী পেয়েছেন? সিনেমার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে ওই রকম একটা সিকোয়েন্স বাংলা গানে আসে না। মাসের প্রথম দিনটা অফিস থেকে বাড়ি ফেরা। এমন ভাবনা তো একটা চিত্রনাট্য, বেলা বোসও তাই। দেয়াল, সোফা প্রত্যেকটাই একেকটা গল্প বলছে।
অঞ্জন: ধরুন আমি যখন একটা গান লিখছি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় লোকটার বয়স কতো, তিনি কীভাবে বড় হয়েছেন, তার বাড়িটা দেখতে কেমন, কতো টাকা মাইনে পায় সে— এসব জানা। একটা স্ক্রিপ্ট লিখতে দরকার পড়ে এসব তথ্যের। তেমনি তা গানে সব না উঠে আসলেও আছে বলেই ওই চরিত্রটা জ্যান্ত হয়ে উঠছে। তাই এগুলো খানিকটা সহায়তা করে। যেমন-- রংয়ের জ্ঞান না থাকলে ভালো মিউজিশিয়ান হওয়া যায় না। যারা সিরিয়াসলি কাজ করছে তাদের ক্ষেত্রে বলছি।
আর এক ধরনের গান যেটা আমরা কেউই বলছি না। সেটা অনেকেই করছে, চার-পাঁচটা লাইন লিখে ফেলেছি চলো এবার ধুমধারাক্কা বসিয়ে দিই। সেটা যতো কমে যাবে, ততো ভালো কাজ বাড়বে। মানে প্রচুর খারাপ সিনেমা যেখানে হয়, সেখানে ভালো সিনেমা হওয়া মুশকিল। আলাদা করে একজনের যতো ট্যালেন্ট থাকুক। সে ভালো সিনেমা করতে পারবে না।
সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক যখন সিনেমা করেছিলেন, তখন তথাকথিতভাবে আর্ট সিনেমা করেছিলেন। তখনকার কমার্শিয়াল সিনেমার পরিচালকদের নাম দেখুন, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, অজয় কর, অসিত সেন। তাদের যে মাপ, লেভেল অফ সিনেমা সেইখানে দাড়িয়ে সত্যজিত রায় ‘পথের পাঁচালি’ করছে। তো যেখানে তেলেগু সিনেমা রিমেইক হয়, আর আইটেম নাচ হয়। সেখানে কেমন করে ভালো সিনেমা হবে? যদি ভালো কমার্শিয়াল সিনেমা তৈরি করতে না পারে আটর্ সিনেমাও গ্রো করবে না। অসম্ভব এটা হতে পারে না। যে পাগলু হচ্ছে টু এরপর ‘পথের পাঁচালী’— হতেই পারে না, সম্ভব না।