কিছুদিন আগেই তার অভিনীত ‘বিসর্জন’ জিতে নিলো ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ব্যক্তি জয়া আহসানও কম যান না। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জিরো ডিগ্রি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ফের জিতলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
Published : 19 May 2017, 08:23 PM
এই নিয়ে পরপর তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতলেন জয়া। প্রাপ্তির ঝুলিটা যখন ক্রমশই বাড়ছে তখন তিনি যেন আরও বেশি দায়িত্বশীল। স্বপ্ন দেখছেন দেশীয় চলচ্চিত্র নিয়ে। হ্যাট্রিকের খবরে গ্লিটজের মুখোমুখি হয়ে তেমনটাই জানালেন তিনি।
(গাড়ির শব্দ) কোথায় যাচ্ছেন?
কলকাতা যাচ্ছি, কাল খুব ভোরে শুটিং। ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ নামে একটা ছবির। নতুন একজন ডিরেক্টর নির্মাণ করছেন এটি, নাম অর্ণব পাল।
পরপর তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতলেন, কেমন লাগছে?
যদিও আমি গত দুবছর পেয়েছি, কিন্তু যতবারই এটা পাওয়া হয়, ততবারই মনে হয়, এ প্রাপ্তি নতুন। কারণ আমি যখনই কোন ছবিতে অভিনয় করি, মনে করি যে এটাই আমার প্রথম ছবি। তাই অ্যাওয়ার্ডটাও যখন আমি পাই, তখন নতুনের মতোই আনন্দ হয়। আমি অসম্ভব খুশি এবং কৃতজ্ঞ আমার বাংলাদেশের সমস্ত দর্শকের প্রতি, পরিচালক এবং টিমের প্রতি। সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ জুরি বোর্ডের প্রতি, যারা আমাকে মনোনীত করেছেন। কারন এটা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান।
সবাই বলছে যে ভালো বাছাই হয়েছে জুরি বোর্ডের। তারা যে শিল্পমানের ছবিগুলোকে উৎসাহ দিচ্ছে এটা নি:সন্দেহে প্রশংসার। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ সরকারের প্রতি। কারন আপনারা জানেন, আমি এবার একটা ফিল্ম প্রডিউস করছি যার সিংহভাগ অর্থই সরকারের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পেয়েছি (হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে ‘দেবী’)। বাংলাদেশের প্রডিউসারশিপতো সেভাবে দাঁড়ায়নি, প্রডিউসারতো সেভাবে নেই, আমরা যারা শিল্পমানের কাজগুলো করতে চাই, মানে যেসব নির্মাতারা চান তাদের পাশে তো প্রযোজকরা সেভাবে দাঁড়ায় না। সে জায়গায় আমি দেখেছি সরকার খুব সহজ ও শর্তহীনভাবেই বেশ বড় অংকের একটা টাকা দিচ্ছে। কেউ যদি একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেই চায় তাহলে সেটা অনেক বড় সাপোর্টের।
কিন্তু অনুদানের টাকা নিয়ে নানা ধরণের সংকটের অভিযোগ করেন নির্মাতারা…
এখন, না পারাটা আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য ও ব্যর্থতা। সে প্রেক্ষিতে সরকার আসলে প্রচুর হেল্প করছে। আমিতো নতুন নতুন ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করি, আমি এটা নিজের চোখে দেখেছি। আমি নিজেও এখন একজন প্রডিউসার। আমি এখন বুঝতে পারছি, সরকার যে আমাদের সবাইকে দিচ্ছে, দিনশেষে আমি তো দেখি নতুন যে ডিরেক্টর তাদের কাছে এটাই একধরণের সম্বল বলতে গেলে। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে আরও অনেক কিছুই আছে করার, সেগুলোর কথা নাই বললাম। সরকার যেভাবে পাশে দাড়াচ্ছে সেভাবে অন্য কেউ দাড়াচ্ছে না। তাই আমাদেরও উচিত, ওইধরণের বাণিজ্যিকঘরাণার ছবিগুলো না বানিয়ে আমাদের নিজেদের ছবি দিয়ে মধ্যবিত্ত দর্শক হলে ফেরে এমন ছবিগুলো বানানো। আমাদের এখানে কতো ভালো ভালো ছবি হয়, এগুলো যেন একটা সময় বিশ্বচলচ্চিত্রে জায়গা করে নেয়- এমনভাবেই উদ্যোগটা নেওয়া।
চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শেষ। প্রাথমিকভাবে আমরা যে ৩৫ দিনের পরিকল্পনা করেছিলাম সেই নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা আমাদের চলচ্চিত্রটি নির্মাণের কাজ শেষ করতে পেরেছি। দশদিন কমিয়ে ২৬ দিনের মধ্যে শুটিং শেষ করেছি। আমি আসলে বলতে চাই, এটা চাইলেই সম্ভব। আমরা যদি একটু গোছানো হই, যার যার ডিপার্টমেন্ট থেকে একটু সচেতন হই তাহলেই সম্ভব। আমি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ আমার ডিরেক্টর অনম বিশ্বাস-এর প্রতি। আমার যে এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার, আমার টিম, আমার যে অ্যসিন্টেট তারা আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সেটা অভাবনীয়। এছাড়া অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাই আমার আর্টিস্টরা- বিশেষ করে চঞ্চল চৌধুরী, যে কিনা অনেক সাহায্য করেছে। আমার চিত্রগ্রাহক, আমার কস্টিউম ডিজাইনার সবাই আমার জন্য দাড়িয়ে ছবিটা শেষ করেছেন। আশা করছি বাকি কাজ শেষ করে এ বছরই মুক্তি দিতে পারবো।
কবে ফিরছেন কলকাতা থেকে?
যে ছবিটার কাজে যাচ্ছি ওটার একটা পার্ট শেষ করে ফিরবো ঢাকায়। তারপর ঢাকায় আমার যেসব ছবির শুটিং বাকি আছে সেগুলো শেষ করবো। এর মধ্যে সামুরাই মারুফ-এর একটা ছবির কিছু অংশ বাকি আছে, আরও একটা ছবি বাকি আছে সেসব শেষ করে তারপর আবার কলকাতায় এ ছবিটার কাজে শিডিউল দিবো।
আপরার মুক্তিসম্ভাব্য কোন চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে আপনি আশাবাদী?
আমাদের দেশে নানা কারণে নির্মাতারা ছবি নিয়ে আটকে যান। এ ধরণের কিছু ছবি আছে যেগুলোতে আমি আমার পার্টটা শেষ করে এসেছি। নুরুল আলম আতিক-এর ‘পেয়ারার সুবাস’, মাহমুদ দিদার-এর ‘বিউটি সার্কাস’ কিংবা আকরাম খান-এর ‘খাঁচা’ চলচ্চিত্রগুলোর ব্যাপারে আমি খুব আশাবাদী। ডিরেক্টরদের কাছে আমার আবেদন যে-তোমরা তাড়াতাড়ি ছবিগুলো দেখতে দাও দর্শকদের।
আর ওপারে?
জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘ভালোবাসার শহর’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ইন্টারনেটে মুক্তির জন্য এই প্রথম একটা ছবি করলাম আমি। ছোট ছবি। সেটা রিলিজ পাচ্ছে।