সুকণ্ঠী গায়িকা হিসেবে মন জয় করেছেন উপমহাদেশের লক্ষ-কোটি শ্রোতার। অল্প বয়েসেই উঠেছেন খ্যাতির চূড়ায়।বলিউডের চলচ্চিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্লে-ব্যাক সংগীতশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল। গেয়েছেন প্রায় চারশ’ চলচ্চিত্রে। পাশাপাশি স্টেজ পারফর্মেও জুড়ি নেই তার।মানুষের মুখে মুখে ফেরা সাম্প্রতিক জনপ্রিয় গানগুলো যে তারই।নিজের পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ঢাকায় গাইতে আবারও এসেছিলেন এই শিল্পী। বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী হলের গ্রিনরুমে ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় গ্লিটজের মুখোমুখি হন তিনি..
Published : 02 Apr 2017, 06:49 PM
গ্লিটজ: আপনার শুরুর কথাটা জানতে চাই। যখন থেকে শ্রেয়ার কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া হয়ে ওঠা..
শ্রেয়া: ছোটবেলা তো খেলায় খেলায়, গানে গানে-গান শিখতে শিখতেই চলে গেছে। আমি কখনো জানতামওনা যে আমি প্রফেশনালি গান শিখবো। আমি যেখানে বড় হয়েছি (রাজস্থান) সেখানে অনেক শান্তি, শহর থেকে অনেক দূরে। গুরুজীদের কাছ থেকে গান শিখেছি, আমার মায়ের কাছ থেকে অনেক গান শিখেছি। মুম্বাই শিফট হলাম আমি ১৯৯৭ এ। ১৩ বছর বয়স ছিলো। তখন থেকে আমার জার্নিটা শুরু। সেখানে আমার স্টুডিও রেকর্ডিংয়ের এক্সপেরিয়েন্স শুরু হলো। সা রে গা মা-র দিনগুলিতো আমার রাজস্থানে থাকতেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো।
দু’ মাস বয়স থেকেই রাজস্থানে বড় হয়েছি। আমি অনেক লাকি যে অনেক জায়গায় যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। অনেক জায়গায় থাকতে হয়েছে। তাদের ভাষা-সংস্কৃতি-আর্ট সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বাঙালি মেয়ে হয়েও মারাঠি সংগীত শিখেছি, যেখানেই গেছি, সবকিছু শিখতে শিখতে বড় হয়েছি।
গ্লিটজ: কীভাবে অ্যাডজাস্ট করলেন নিজেকে?
শ্রেয়া: ছোটবেলা থেকেই আমি অনেক মানুষের সাথে মিশতে চেয়েছি, তাদের ভাষা-কালচার সম্পর্কে, খাবার সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিলো। এ জন্যই আমি অনেক ভাষায় গাইতে পারি। অ্যাডজাস্টের চেয়ে এটা আসলে আমার জন্য একটা নেসেসিটি। আই লাইক দ্য চেঞ্জ।
গ্লিটজ: হিন্দিসহ প্রায় দশ বারোটি ভাষায় কণ্ঠ রেখেছেন। নানা জনরায় গান করছেন। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে শ্রেয়া ঘোষালের মৌলিকত্বের কোন সংকট কি তৈরি হচ্ছে?
শ্রেয়া: দেখুন, আজকাল ভাষার সীমানাটা খুলে গেছে। আমি একটু পরেই হয়তো গাইতে উঠবো মঞ্চে। আমার বাংলাদেশি শিল্পীরা যারা গাইছেন, শুনতে পাচ্ছি-তারাও অনেক জনরায় গাইছে, কেউ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে, কেউ নজরুলগীতি, কিন্তু সবাই কনটেম্পরারি স্টাইলে, নিজের মতো করেই গাইছে। তাই ভাষা এবং জনরা আমার কাছে এখন আর কোনো বিষয় নয়। আমি সব গাইতে পছন্দ করি।
শ্রেয়া: হিন্দি গানের পাশাপাশি সবসময়ই বাংলা গান আমার কেরিয়ারে প্যারালালি চলেইছে। সো, আই ফিল ভেরি কানেক্টেড টু বেঙ্গলি মিউজিক, বেঙ্গলি ফিল্মস। আমার আসলে অ্যালবাম অতো করা হয়না। কিন্তু ফিল্মে আমি সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় বড় আর্টিস্ট, কম্পোজার, লিরিসিস্ট, ডিরেক্টর, কো আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি একটা কথাই বলবো, বেঙ্গলি মিউজিক কিপস মি গ্রাউন্ডেড এন্ড ভেরি স্যাটিসফায়েড।নিজের ভাষায় গাওয়াটা আলাদা আনন্দ।
গ্লিটজ: স্টেজ পারফর্ম কবে থেকে শুরু হলো?
শ্রেয়া: আমি স্টেজে পারফর্মেন্স অনেক পরে করেছি। সিনেমায় যখন গেয়েছি ১৬ বছর বয়েসে।১৮ পেরুনোর পর আমি স্টেজে উঠেছি। আমি খুব লাকি এ কারনে যে আমার অভিভাবকরা আমাকে আজও গাইড করছে। এটা নিশ্চিত করেছে যে আমি গান শিখতে এসেছি এবং পারফর্মিং আর্টিস্ট হতে এসেছি।
গ্লিটজ: স্টেজ পারফর্মেন্সে এখনও আপনি খুব নার্ভাস থাকেন এমনটা বলেছিলেন এক সাক্ষাতকারে..
শ্রেয়া: ১৮ বছর বয়েসে আমি স্টেজে উঠি। পুরোই নার্ভাস পারফর্মার।কিন্তু গানটাতো জানতাম। মাইক্রোফোনের সামনে গানটা গেয়ে দিয়ে আসতাম। জার্নিটা খুব সুন্দর এখনও পর্যন্ত। এত বড় বড় অডিয়েন্সের সামনে যাই, এত জায়গায় যাই এখনও কিছুটা নার্ভাস তো লাগেই। কিন্তু লাইভ পারফর্মেন্সের জার্নিটা আমার খুব ভালো লাগে।
গ্লিটজ: সঞ্জয়লীলা বনসালীর হাত ধরে ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্লে-ব্যাক শুরু। এখনও গাইছেন তার ফিল্মে। প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবেও বলিউডে অপ্রতিদ্বন্দী হয়ে উঠেছেন। সঞ্জয়লীলার সঙ্গে কীভাবে কাজ শুরু হয়েছিলো আপনার?
শ্রেয়া: আমার কাছে যখন কল এসেছিলো তখন আমি সিক্সটিন। নট ইভেন সিক্সটিন-ফিফটিন এন্ড হাফ। অবশ্যই এটা অপ্রত্যাশিত ও চমকপ্রদ ব্যাপার ছিলো আমার জন্য। আমি কখনো ভাবতেই পারিনি তার অফিস থেকে আমার কাছে কল আসবে। আমরা ডিরেক্ট কথা বলবো। উনি আমার ব্যাপারে খুবই নিশ্চিত ছিলেন। আমি জানতামও না যে তিনি আমার সম্পর্কে স্টাডি করেছেন আগে। সারেগামা-য় আমার গাওয়া গানগুলো শুনেছেন। আমি সত্যিই খুবই ব্লেসড ছিলাম। সিনেমায় গানের ক্ষেত্রে অবশ্যই ‘দেবদাস’ থেকে শুরু করেআজ ‘বাজিরাও মাস্তানি’ পর্যন্ত এতগুলো ফিল্মে গান গাইতে পেরেছি এতগুলো ডিফারেন্ট ডিফারেন্ট মাইলস্টোন হয়েছে,এতকিছু শিখেছি অবশ্যই এটা তার জন্য। তার মতো একজন মেনটর পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
গ্লিটজ: তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘পদ্মাবতী’ চলচ্চিত্রের শুটিং চলছে যতদূর জানি। কটা গান থাকছে সেখানে?
শ্রেয়া: সেখানে তিন চারটা গান থাকছে..
গ্লিটজ: গানের বাইরে ব্যক্তি শ্রেয়া ঘোষাল কেমন?
শ্রেয়া: সবসময় যে এন্টারটেইনিং মুডে থাকি তা নয়, কখনো কখনো বাসায় নিজের কাছে ফিরে যাই, একা একটা রুমে থাকতে ভালোবাসি, কখনো কখনো খুব আনন্দ করি। আমি আসলে আমার কম্ফোর্ট টা চাই। নিজের মতো থাকতে ভালোবাসি।
গ্লিটজ: নরেন্দ্র মোদি কিংবা অমিতাভ বচ্চনের পরেই মাদাম তুসোয় আপনার মূর্তি রাখা হচ্ছে। তুলনা করা হচ্ছে ভবিষ্যত শ্রেয়া ঘোষাল হবেন লতা মঙ্গেশকর কিংবা আশা ভোঁসলের মতো কেউ। অল্পবয়েসে এত খ্যাতি পেয়ে শ্রেয়া কী ভাবছে নিজের কেরিয়ার নিয়ে?
গ্লিটজ: বাংলাদেশে প্রায়ই আসছেন। কেমন লাগছে?
শ্রেয়া: বাংলাদেশকে নিজের বাড়িই মনে হয়। এতবার এসেছি বাংলাদেশে। অন্যান্য জেলা শহরগুলোতেও গেছি। ঢাকায় হয়তো একটু বেশি এসেছি। এত ভালো লাগে এখানে গাইতে, অনেক ভালোবাসা পাই।মিউজিকের প্রতি, ভালো গানের প্রতি এখানের শ্রোতাদের অনেক টান।
গ্লিটজ: এ দফায় ইলিশ খেয়েছেন?
শ্রেয়া: ঢুকেই ফার্স্ট দিন এসেই ইলিশ খাওয়া হয়ে গেছে। আরও কতো রকমের খাবার আছে। ঢাকা মানেই দারুন খাবার। আসলে ঢাকার সঙ্গে তো আমার শেকড় জড়িয়ে। এত ভালোবাসা পেয়েছি, যখনই যেখানে গেছি-ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার..
গ্লিটজ: এখানে কাদের গান ভালো লাগে আপনার?
শ্রেয়া: রেজওয়ানা ম্যামের (রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা) গান খুব ভালো লাগে। আসলে আজকাল এত ভালো ভালো গান হচ্ছে এখানে, আমাকে খুব ইনস্পায়ার করে এখানকার গান..