সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের এক সার্কুলারে দেশের সব মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসেস প্রোভাইডার ব্যাংক ও তাদের সহযোগী কোম্পানিকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসেস এর মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে টাকা পাঠানো, বেতন ভাতা দেওয়া, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, যানবাহনের টিকেট কাটা, চেইনশপে কেনাকাটা এবং মার্চেন্ট পেমেন্ট কার্যক্রমসহ ১৫ ধরনের সেবা দেওয়া হয়।
তবে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসাবেই বেশি ব্যবহার হয় বলে ‘ভোট কেনাবেচার’ আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে ইসির এই ‘অনুরোধ’। ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময়ে এসে একজন প্রার্থীও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এ বিষয়ে দুটি সার্কুলার জারি করলে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
বেলা ১২টায় জারি করা প্রথম সার্কুলারে বলা হয়, “এই সার্কুলার পাওয়ার সময় থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে কর্মরত সকল মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসেসের গ্রাহক পর্যায়ে ক্যাশ-ইন, ক্যাশ-আউট, ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি টু পি), মার্চেন্ট পেমেন্ট এবং মোবাইল টপ-আপ এর লেনদেন সীমা সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হল।”
এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি সার্কুলার আসে।
এতে বলা হয়, “নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে এখন থেকে ২৮ এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশে কর্মরত সকল মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসেসের গ্রাহক পর্যায়ের লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হল।”
মোবাইল ফোনের রিচার্জ বা আই-টপের বিষয়ে দ্বিতীয় সার্কুলারে কিছু বলা না থাকায় বিভ্রান্তি আরও বাড়ে।
দুই রকম নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক কে এম আবদুল ওয়াদুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে আমরা আগামীকাল রাত পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন সীমা সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু পরে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুরোধ করে লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখতে বলা হয়।”
এরপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বিতীয় সার্কুলারটি জারি করে বলে আবদুল ওয়াদুদ জানান।
“আমরা জনস্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনাটি দিয়েছি। এই নির্দেশনার ফলে যেটা দাঁড়াল, তা হচ্ছে আগামীকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না।”
টপ-আপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মোবাইল টপ-আপ বলতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ করার ব্যবস্থা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে যে টক টাইম কেনা যায় সেটিও এক হাজার টাকার বেশি কেনা যাবে না প্রথমে বলা হয়েছিল। পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অন্যসব মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মতো এ সেবাও মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।”
মোবাইল ফোনের কার্ড বা দোকানে গিয়ে সাধারণ যে ব্যালেন্স রিচার্জ বা ফ্লেক্সিলোডের ব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এ নির্দেশনার কোনো সম্পর্ক নেই বলে আবদুল ওয়াদুদ জানান।
সারা দেশে ১৮টি ব্যাংকে প্রায় এক লাখ এজেন্টের মাধ্যমে এক কোটির বেশি গ্রাহককে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে।