আটক সোনা যাচ্ছে যেথায়

গত কয়েক মাস ধরে শাহজালাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দরে সোনার বেশ কয়েকটি বড় চালান আটকের খবর জানা গেলেও এই মূল্যবান ধাতব পদার্থের শেষ গন্তব্য অনেকেরই অজানা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2014, 10:09 AM
Updated : 27 April 2014, 10:19 AM

শনিবার শাহজালালে দুবাই ফেরত একটি উড়োজাহাজ থেকে ১০৬ কেজি সোনা আটকের পর কৌতূহলী আবদুল্লাহ মাহমুদ খানের মনে প্রশ্ন এল, আটকের পর এই সোনা কোথায় যায়?

ঢাকার পুরানা পল্টনের একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন ফার্মের এই মালিকের সন্দেহ, আটক করা এই সোনা হয়ত ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়।

সামনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদককে পেয়ে সন্দেহ ঘোচাতে আবদুল্লাহ খান প্রশ্ন করলেন- “বলেন তো সাংবাদিক ভাই। এই সোনা আসলে কী হয়?”

আবদুল্লাহ খানের মতো অনেকেরই কৌতূহল আটক এই সোনার গন্তব্য নিয়ে।

গত কয়েক মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিমানবন্দরে চোরাই পথে আনা কয়েকশ’ কেজি সোনা আটক হয়, যা আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা।

আবদুল্লাহ খানের কৌতূহল মেটাতে শাহজালাল বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উত্তর মেলেনি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যে কোনো সোনা আটকের পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা সেরে সঙ্গে সঙ্গে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেই। সোনার ব্যাপারে আমাদের কাজ শেষ। যে মামলা হয় তা নিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকি। আটক করার সোনার কী হল, সে খবর আর আমরা রাখি না।”

শনিবার যখন শাহজালালে সোনা আটক করা হয়, তখন সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বিমানবন্দর থেকে খবর শুনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন তখনি অর্থসচিব ফজলে কবীরকে টেলিফোন করে সোনা আটকের খবর জানান।

অর্থসচিব তখন সংবাদ সম্মেলনে থাকা অর্থমন্ত্রীকে সোনার চালান আটকের এই খবর দেন।

এরপর থেকেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। তবে কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেও জানা যায়নি, আটক এই স্বর্ণ যায় কোথায়?

শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার কামরুল ইসলামের কাছে সোনার গন্তব্যের বিষয়ে উত্তর না মিললেও একটা পথ পাওয়া যায়, তা হল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ওই সূত্র ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অবশেষে মেলে এর উত্তর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আটক করা গোল্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসার পর সঙ্গে সঙ্গে তা ভল্টে ঢোকানো হয়। এরপর আটক করা গোল্ডের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো ভল্টেই থাকে।”

মামলা শেষ হলে সরকার এই সোনা বাজেয়াপ্ত করে। এরপর দুটি প্রক্রিয়ায় এর ভাগ্য নির্ধারণ হয়।

প্রথমটি হচ্ছে- বাজেয়াপ্ত করা সোনাগুলো নিলামে তোলা হয়। বিক্রি করা টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়।

“তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে, তার রিজার্ভে সোনা যোগ করবে, আর সেই সোনার গ্রেড যদি আন্তর্জাতিক মানের হয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক বাজার দরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নেয়। সেই সোনা তখন রিজার্ভে জমা হয়,” বলেন ছাইদুর রহমান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পৃথিবীর সব দেশেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কিছু না কিছু গোল্ড থাকে।

“অনেক দেশ ব্যবসার বিষয়টি (মুনাফা) বিবেচনায় রেখে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গোল্ড কিনে রিজার্ভে জমা রাখে। দাম বাড়লে তা বিক্রি করে দেয়।”

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান ২ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভে আটক সোনার কোনো অবদান নেই বলে জানান মহাব্যবস্থাপক ছাইদুর রহমান।

সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিনও বলেন, “আটক করা সোনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনলেও তা রিজার্ভে তেমন প্রভাব ফেলে না।”