দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডেকেছে সরকার, যাতে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে।
Published : 26 Jun 2013, 09:06 AM
যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার সাংবাদিকদের জানান, সেতু বিভাগ ও সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের ওয়েবসাইটে এই দরপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দৈনিক পত্রিকাতেও এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে বলে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।
৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলা সড়কপথে সরাসরি যুক্ত হবে রাজধানীর সঙ্গে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১.২ শতাংশ বাড়বে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
যোগাযোগ মন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পের জন্য প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ঠিকাদাররাই এই দরপত্রে অংশ নিতে পারবেন।
৭ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টা পর্যন্ত দরপত্র জমা দেয়া যাবে। দরপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে অফেরতযোগ্য ১ লাখ টাকা। ৯ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় আগ্রহী দরদাতা বা তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ দরপত্র খোলা হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক সফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুরুতে এ প্রকল্পের প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক তালিকায় মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ছিল। তবে বিশ্বব্যাংক অযোগ্য ঘোষণা করায় চায়না কমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডকে কিছুদিন আগে বাদ দেয়া হয়েছে।
ফলে সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা স্যামসাং সি অ্যান্ড টি কর্পোরেশন, চায়না জংটি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, ডেনিম ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড এবং ভিঞ্চি-এইচসিসি জয়েন্টভেঞ্চার অব ইন্ডিয়া-ফ্রান্স এই দরপত্রে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে বলে সফিকুল ইসলাম জানান।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে চীনের পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ফেং ঝেংলিনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণেই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে চীন থেকে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এ ধরনের কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মিত হবে।”
নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো অর্থ সরকারের হাতে আছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
মহাজোট সরকারের অন্যতম এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ছয় হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এ প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জে মোট দুই হাজার ৪৫২ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ২৬০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়েছে। জমির দাম বাবদ ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হচ্ছে প্রায় এক হাজার ১৪ কোটি টাকা।
যোগাযোগমন্ত্রী এর আগে জানিয়েছিলেন, নদী শাসন, মাওয়া ও জাজিরা এপ্রোচ রোড, সার্ভিস এরিয়া, পুনর্বাসন, সুপারভিশন কনসালটেন্ট, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, টোল প্লাজা, ভূমি অধিগ্রহণসহ পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পদ্মা সেতু নির্মাণে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হলেও পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি ঝুলে যায়।
দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে চলতি বছর জানুয়ারিতে সরকার বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়। সে সময় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯০ কোটি ডলার।
বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়।চীন ও মালয়শিয়া সেতু নির্মাণ করে দেয়ার বিষয়ে আলাদা বিনিয়োগ প্রস্তাব দিলেও সেগুলো সরকারের সায় পায়নি।