নতুন ভ্যাট আইনের নানা সুবিধা ব্যবসায়ীদের দেখালেন আইনমন্ত্রী  

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের নানা সুবিধার দিক দেখিয়ে আশ্বস্ত করার প্রয়াস চালালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2017, 01:17 PM
Updated : 25 April 2017, 01:17 PM

মঙ্গলবার মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বাস্তবায়ন বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তিনি ব্যবসায়ীদের বলেছেন, নতুন ভ্যাট কার্যকর হলেও কর বাড়ছে না।

২০১২ সালে প্রণীত নতুন আইনটি গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা করা হলেও ব‌্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা থেকে সরে এসেছিল সরকার। তবে আগামী ১ জুলাই থেকে আইনটি কার্যকরে অনড় অবস্থান নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নতুন আইনে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের দাবি তুলেছেন।

এনবিআরের ‘ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ আর্থিক খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে চায় সরকার।

“আমাদের দেশে এ বছর ৪ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হবে। সরকারের এই টাকা লাগবে। কোথা থেকে আসবে? সেক্ষেত্রে আমরা যেটা করার চেষ্টা করেছি, তা হচ্ছে, করের বোঝা না চাপিয়ে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা এনে যেন উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারি। ১৫ শতাংশ আগেও ছিল এখনও আছে। নতুন করে করের বোঝা চাপানো হচ্ছে না।”

সরকারের কর নির্ভরতার নজির দেখিয়ে আনিসুল হক বলেন, “১৯৮৬ সালে আমি লন্ডনে পড়াশোনা করতাম। আমার স্ত্রী চাকরি করতেন, আমি পড়তাম। ওখানে চাকরি করলেই কর দিতে হয়, একটা জাতীয় বীমা আছে, সেটা দিতে হয়। যেহেতু যিনি চাকরি করছেন, তার স্বামী চাকরি করেন না, সেহেতু একটা রিবেটের পদ্ধতি আছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

“আমি দেখলাম, একটা ফরম বাসায় রাখা আছে। ফরমটা পূরণ করে দেওয়া হল। টাকা তখন নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু দুই মাস পর রিফান্ডের টেকটা পাঠিয়ে দিল। কে কী করেছে, আমরা কিন্তু তার কিছুই দেখতে পেলাম না।”

১৯৯১ সালে করা ভ্যাট আইনটির নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় নতুন আইনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলে যুক্তি দেখান আনিসুল হক। আইনটি কার্যকরে সবার সহযোগিতা চান তিনি।

অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন পুরনো ভ্যাট আইনের সঙ্গে নতুনটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন।

তিনি বলেন, পুরনো আইনে বিক্রি যাই হোক, সব প্রতিষ্ঠানকেই কর দিতে হত। নতুন আইনে বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানকে কর দিতে হবে না। ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

“পুরাতন আইনে রেয়াত ব্যবস্থায় নানা শর্ত ছিল। যেটা নতুন আইনে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিফান্ড ব্যবস্থাও জটিল ও সময় সাপেক্ষ ছিল। এখন রিফান্ড ব্যবস্থাকে সহজ করে ফেরত প্রদানের পূর্ণ ক্ষমতা মাঠ পর্যায়কে দেওয়া হয়েছে।”

অনলাইন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে এনবিআর সদস্য জাহাঙ্গীর বলেন, নতুন আইনে শুনানি ছাড়া আর কোন প্রতিষ্ঠানকে কোনো ক্ষেত্রেই ভ্যাট অফিসে যেতে হবে না। ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে মাসের শেষে। ভ্যাটের হিসাব করা হবে ব্যবসা করার পরে। আগে কোনো টাকা জমা দিতে হবে না।

এনবিআর বলছে, বর্তমানে ভ্যাট এক্সক্লুসিভ হিসাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হয়। নতুন হিসাবে ‘ইনক্লুসিভ’ হিসাবে বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ভ্যাট হিসাব হবে। এতে নিট কর ভার ১৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ পড়বে। বর্তমানের রেয়াতের ক্ষেত্র সীমিত হওয়ায় করের উপর কর হয়। ফলে পুরো সরবরাহ লাইনে ১৫ শতাংশের বেশি ভ্যাট আরোপিত হয়। বর্তমানে পুরো সরবরাহ লাইনে সবাই মিলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিবে। যার করভার হবে ১৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

কর ব্যবস্থা অনলাইনে হওয়ার প্রশংসা করে এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, আগে এক টাকার ট্যাক্সে তিন টাকার হয়রানি হত। তখন এনবিআরকে ‘বাঘের মতো’ ভয় করত সবাই, কেউ এনবিআরে যেতে চাইত না।

১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিরোধিতায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন (ফাইল ছবি)

এখন পরিস্থিতি বদলালেও ব্যবসায়ীদের কর না দেওয়া নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

“আমাদের ৮-সাড়ে ৮ লাখ (ভ্যাট) নিবন্ধনের মধ্যে টাকা দেয় ৩০ হাজার। এই জিনিসটা লজ্জার। সবাই কেন দেবে না?”

তবে ভ্যাটের হার কমাতে ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনার আহ্বানও জানান মাতলুব। সেবা খাতকে ভ্যাটের বাইরে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করেন তিনি।

নতুন ভ্যাট আইনে মূল্য ঘোষণার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের উপর ছেড়ে দেওয়ার প্রশংসা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

“এনবিআর ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছে। এখন আমিই আমার পণ্যের দাম ঘোষণা করব। যখন বিশ্বাস থাকবে, তখন আমরা এগিয়ে যাব। আমরা ব্যবসায়ীরা আরও দায়িত্বশীল হব। আগে কিছুটা এদিক-ওদিক করলেও এখন দায়িত্বশীল হয়ে যাব।”

নতুন বাজেটে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে নতুন উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান মাতলুব। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, তারা দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

সভায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল ইসলাম ভ্যাটের হার কমিয়ে ৭-১০ শতাংশ করার দাবি করেন। একবার এই হার চালু করে পরে আস্তে আস্তে তা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের আলোচনায় সন্তুষ্ট আইনমন্ত্রী বলেন, “এটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। যার যার কারণে আমি আনন্দের সাথে বলতে পারি, এখানে একটা ঐক্যমত দেখছি যে, এই আইনটার প্রয়োজন আছে।”