ভ্যাট: অর্থমন্ত্রী অনড়, আশায় ব্যবসায়ীরা

নতুন আইন অনুসারে আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকরের অবস্থানে অনড় থাকার কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মুখ থেকে শুনলেও আশা ছাড়ছেন না ব্যবসায়ীরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2017, 03:01 PM
Updated : 17 April 2017, 04:25 PM

নতুন অর্থবছরের বাজেটের আগে সোমবার ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভ্যাটের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানান।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুহিত বলেন, ভ্যাট আইন এবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে।

হার কী হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি বিষয় তিনি ব্যবসায়ীদের বলে দিয়েছেন, একটি হল ১ জুলাই থেকেই আইনটি কার্যকর হবে, দ্বিতীয়টি হল হার ১৫ শতাংশই থাকবে।

ব্যবসায়ীরা তা মেনে নিয়েছেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, “সেটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন।”

২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীর থাকলেও ব‌্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা থেকে সরে এসেছিল সরকার। তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হবে।

এই অবস্থান থেকে পিছু হটবেন না বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়ে আসছেন। সোমবারের বৈঠকেও ব্যবসায়ীদের কাছে একই অবস্থান জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান ও এ কে আজাদ, সভাপতির চলতি দায়িত্বে থাকা সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ প্রমুখ।

শফিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ১০ শতাংশের প্রস্তাবের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেননি অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “দেশে ২ কোটি ২৪ লাখ প্রান্তিক ব্যবসায়ী রয়েছে। কিন্তু ভ্যাট পাই আমরা একেবারেই কম। এই মার্জিনাল বিজনেস কমিউনিটির জন্যই আমরা এখানে রিপ্রেজেন্ট করছি। আমরা চাই এটা সিমপ্লিফাইড ওয়েতে এবং বিজনেস কমিউনিটিকে যুক্ত করে তারপর যাতে ভ্যাট আইনের প্রয়োগ করা হয়।

“তিনি (মুহিত) এটা বিবেচনায় নিয়েছেন। উনি নোট নিয়েছেন এবং আমাদেরকে বলেছেন, আরেকবার আলোচনা করে বাস্তবায়নে যাবেন।”

আগামী ১ জুলাই থেকে আইন কার্যকর হবে বলে মনে করছেন কি না- প্রশ্নে এফবিসিসিআই সহসভাপতি বলেন, “আমরা চাই, আমাদের বিষয়গুলো সুরাহা করে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে যেন তা করা হয়।

“আমরা মনে করি, এটি জনগণের সরকার। জনগণের সেন্টিমেন্ট এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সেন্টিমেন্টকে উপেক্ষা করে এটি করবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।”

সরকারের কাছে আশা রেখে তিনি বলেন, “আলাপ-আলোচনার বিকল্প নাই। আমরা আশা রাখতে চাই।”

এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা ও ভ্যাট আইন বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ বলেন, “আমরা যেটা বলতে চাই, অর্থমন্ত্রী কিন্তু এক্সটেনশন অব ব্যুরোক্রেসি না। আমলারা যা বলে দেবে, তা করা তার কাজ না। উনি জনগণের প্রতিনিধি। তাকে কনজিউমার ইন্টারেস্ট দেখতে হবে। ১৫ শতাংশের টোটাল ভ্যালু কনজিউমার লেভেলে যাতে ৪৫ শতাংশ না হয়ে যায়।

গত বছর ব্যবসায়ীদের এই আন্দোলনই ঠেকিয়েছিল ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আইন

“আমরা বলেছি, যারা কিনে কনজিউমারের কাছে বিক্রি করেন, সেখানে ভ্যাটের রেট যেন দশমিক ৫ শতাংশের বেশি না হয়। ইউরোপে এটা দশমিক ৮ শতাংশ আছে। আমাদের এখানে যাতে সবাই ভ্যাট দিতে আগ্রহী হয়। ১৫ শতাংশ দিতে হলে কেউ আগ্রহী হবে না। তাতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। মুদ্রাস্ফীতি হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে এফসিসিসিআই উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে সে রকম দিক-নির্দেশনা না পেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

“অঙ্কগুলো যদি না মেলে, যেমন একটা বিজনেসের টার্নওভার ৮০ লাখ টাকা থেকে আমরা ৫ কোটি বলেছি। যেমন এখানে যদি ১ কোটি টাকা দেয়, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব।”

তবে তিনি বলেন, “২০০৯ সাল থেকে আমরা এ বিষয়ে আলাপ করছি, আমরা অন্য সময়ের চেয়ে আজকে বেশি আশাবাদী হয়ে যাচ্ছি।”

ফলপ্রসূ এবং যুক্তিপূর্ণ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায়। আমাদের অনেক কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের এটা মেয়াদেরও শেষ সময়।

“আমাদেরকে একদিকে ভ্যাট আইনটা যেমন কার্যকর করতে হবে। অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থকেও আমাদের রক্ষা করতে হবে।”

অর্থমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা জিনিস তিনি বলে গেছেন, এই সরকার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে। এমন সিদ্ধান্ত হবে, যাতে জনগণ খুশি হবে, ব্যবসায়ীরাও খুশি হবে।”