ভ্যাট আইন: সরকারকে উদার হতে বলল সংসদীয় কমিটি

‘জটিলতা’ দূর করে সরকারকে উদার মনোভাব বজায় রেখে আগামী বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ভ্যাট আইন কার্যকর করার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2017, 11:09 AM
Updated : 15 March 2017, 11:21 AM

একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদেরকেও নমনীয় হতে বলেছে কমিটি।

বুধবার সংসদ ভবনে ভ্যাট আইন নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “২০১২ সালে প্রণীত এই আইনটি নানা জটিলতায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আগামী পয়লা জুলাই থেকে আইন বাস্তবায়ন করবে। আর ব্যবসায়ীরাও একটা মনোভাব নিয়ে আছে।

“কমিটি সরকারকে উদার হয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে আইন বাস্তবায়নের কথা বলেছে। আর ব্যবসায়ীদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।”

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিআই, এমসিসিআই, ঢাকা চেম্বাস অব কমার্স, দোকান-মালিক সমিতি, ঢাকা দোকান মালিক সমিতি, প্লাস্টিক পণ্য নির্মাণকারীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা করা হলেও ব‌্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা থেকে সরে এসেছিল সরকার।

এরপর নতুন আইনে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগের মতো এলাকা ও ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এনবিআরের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট হারের ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ চালু রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন।

তারপর সরকার সেই দাবি মানলেও প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে বলেছিল, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে।

ব্যবসায়ীদের আপত্তির মধ্যে পিছু হটার পর এবার আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের কথা বলছে সরকার। এবার পিছু হটবেন না বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে আসছেন।

এখন ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছেন। তবে তাতে আপত্তি রয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের।

অর্থমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাজ্জাক বলেন, “অর্থমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, তিনি এটি চাপিয়ে দেবেন না। আমরা কমিটির পক্ষ থেকে বলেছি, আগামী বাজেটের আগেই বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় আসতে হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, “আইনে কিছু জটিলতা আছে। এগুলো নিরসন করতে হবে। আরও বাস্তবমুখী করতে হবে। ব্যবসায়ীদেরকেও বোঝাতে হবে। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও এখনও সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের কম।”

এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ

অফশোর ব্যাংকিংয়ের নামে দেশ থেকে অর্থ পাচারের দায়ে বেসরকারি এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিট থেকে চার বিদেশি কোম্পানির নামে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩৪০ কোটি) বের করে নেওয়া হয়েছে।

ঋণের অর্থ অন্য হিসাবে পাচার করা হয়েছে। অর্থ পাচার হয়েছে সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

প্রতিষ্ঠান চারটি হল- সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্লোবাল এমই জেনারেল ট্রেডিং ও সেমাট সিটি জেনারেল ট্রেডিং, সিঙ্গাপুরের এটিজেড কমিউনিকেশনস পিটিই লিমিটেড ও ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড। এ ঋণের অন্যতম সুবিধাভোগী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস। তিনি এবি ব্যাংকেরও সাবেক চেয়ারম্যান।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাজ্জাক বলেন, “পাচারকৃত অর্থের মধ্যে রহিমা আফরোজ লিমিটিডে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত দিয়েছে। বাকি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশি বলে কিছু সময় বেশি লাগছে।

“কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তাদের ইনটেলিজেন্স এই পাচারের স্থানীয় বেনিফিশয়ারিদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে। এজন্য তাদের কিছুটা সময় লাগবে।”

গত বছরের অগাস্ট মাসে সংসদীয় কমিটি অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনা করে।  ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছিল, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবি ব্যাংককে সময় দেওয়া হয়েছে।

বুধবার কমিটির সভাপতি বলেন, “আরও কিছু সময় লাগবে। আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”

আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং আখতার জাহান অংশ নেন।