পায়রা বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে পায়রা; পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই সমুদ্র বন্দরটি দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতির চিত্র বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধিজ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2016, 06:18 AM
Updated : 13 August 2016, 02:19 PM

শনিবার সকালে ঢাকায় গণভবনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ‌্যমে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ‌্য খালাস কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নতুন এ বন্দর ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য গড়ে উঠবে। শুধু দক্ষিণাঞ্চল না, সমগ্র বাংলাদেশ এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্যও একটা শুভ সূচনা।”

প্রকল্পের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। 

ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় নেতারা ‘অবহেলিত’ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে নিজেদের আশার কথা জানান।   

শনিবার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নিরাপদ বাল্কপণ্য নদীপথে পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হল বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. সাইদুর রহমান।

পায়রায় ভেড়া জাহাজ

পদ্মা সেতুর পাথর নিয়ে আসা এমভি ফরচুন বার্ড থেকে পণ্য ‌খালাসের মধ‌্য দিয়ে পায়রার যাত্রা শুরু হয়। পাথর সরবরাহকারী চীনা কোম্পানির প্রতিনিধিও পায়রা বন্দরে বসে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব‌্য রাখেন।  

শেখ হাসিনার সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে ১০টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে তার একটি পায়রা ‘গভীর সমুদ্র বন্দর’, এর মধ‌্যে রয়েছে পদ্মা সেতুও। মহেশখালীতে আরেকটি গভীর সমুদ্র বন্দরও রয়েছে অগ্রাধিকারের তালিকায়।

২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে ১৬ একর জমির উপর পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ‌্যে এই সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জাহাজ ভেড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় আগেই ভিড়তে শুরু করেছে জাহাজ।

শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সময় দক্ষিণাঞ্চল সফর করার সময় ওই অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয়টি নজরে আসার পর পায়রা বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

“পায়রা বন্দরের নামটা আমি দিয়েছি। পায়রা নামটাও খুব সুন্দর। পায়রা শান্তির প্রতীক।”

বন্দরের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস স্থাপনের কথাও জানান সরকার প্রধান।

তিনি আরও বলেন, সেখানে জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে।

“পরিকল্পনা আছে, রেল যোগাযোগও পায়রা বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাব।”  

এই সমুদ্র বন্দরটি ব‌্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও আগ্রহের কথাও জানান শেখ হাসিনা, যা থেকে বাংলাদেশও উপকৃত হবে।  

“উত্তরে আসামের করিমগঞ্জ পযন্ত নৌপরিবহণের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে। যেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ না, আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”

ভবিষ্যতে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর হবে বলে জানান তিনি।

ক্যাপ্টেন সাইদুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করে নৌপথে পরিবহন করা হবে। পণ্য খালাস ও পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছেছে ১৫টি লাইটার জাহাজ।”

বন্দর এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করতে বিরামহীন কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেটি ও অত্যাধুনিক কনটেইনার ক্যারিয়ার, পানি শোধনাগার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক স্টেশন, নিরাপত্তা ভবনসহ প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ হচ্ছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডও।

পায়রা বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় জাহাজ যেন রামনাবাদ চ্যানেলে নির্বিঘ্নে চলাচল এবং মূল বন্দরের জেটিতে নোঙ্গর করতে পারে সেজন্য চ্যানেলের গভীরতা পর্যবেক্ষণ করে খননের (ড্রেজিং)কাজ অচিরেই শুরু হবে।

পটুয়াখালীর রাজস্ব বিভাগের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ১ অগাস্ট বিকালে ৫২ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে নোঙ্গর করে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড।

“এই পাথর ব্যবহার করা হবে পদ্মা সেতুর কাজে। গত ১ অগাস্ট পণ‌্য খালাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা স্থগিত করা হয়।”

পায়রা বন্দর দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয়দের আশা, বন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে।