ছিনতাইয়ের ঘটনায় তরুণীর মৃত্যু: চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ১

চট্টগ্রামে ছিনতাইয়ের সময় চলন্ত রিকশা থেকে পড়ে এক তরুণী নিহত হওয়ার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2017, 05:36 AM
Updated : 21 June 2017, 03:44 PM

গ্রেপ্তার এরশাদ উল্লাহ (৩৩) নগরীর কোতোয়ালি থানার লাভলেইন এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জানান, মঙ্গলবার লাভ লেইন এলাকার বাসা থেকে এরশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার আরেক সহযোগী এ ঘটনায় জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

নগরীর জামালখান এলাকায় গত ১৩ জুন মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা শিরিন আক্তার নামের ২৪ বছর বয়সী এক রিকশাআরোহী তরুণীর ব্যাগ ধরে টান দিলে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন।

ছয়দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান শিরিন। 

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার চক্রশালা এলাকার মৃত ফজলুল করিমের মেয়ে শিরিন ঈদের কেনাকাটা করতে নগরীর ব্যাটারি গলিতে বোনের বাসায় এসেছিলেন।

ওই ঘটনার পর চকবাজার থানা পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা আসামিদের ধরতে কাজ শুরু করেন।

এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার এরশাদকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

লাভ লেইনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযানের সময় এরশাদের বাসার খাটের নিচ থেকে বস্তাভর্তি ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরশাদের মোটর সাইকেলটিও পুলিশ নিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এরশাদ ও তার এক সহযোগী দীর্ঘদিন ধরে মোটর সাইকেল নিয়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। এরশাদ আগেও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

শিরিনের কাছ থেকে খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটিও পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

বিকালে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ছিনতাই হওয়া স্থানের আশপাশের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে।

উদ্ধার করা মোটর সাইকেলটি গত ১৩ জুনের ছিনতাই কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “ওইদিন এরশাদ মোটর সাইকেল চালিয়েছিল এবং তার সহযোগী শিরিনের ব্যাগ টান দিলে তিনি রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে মারা যান।”

তিনি জানান, এরশাদের বাসা থেকে অন্তত ৫০টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো সে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাই করে বাসায় এনেছিল। ওইসব ব্যাগে থাকা লেডিস ছাতাসহ নানা ধরনের জিনিসও পাওয়া গেছে।

গত বছরের জুন মাসে এরশাদ চকবাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় মোটর সাইকেলসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। প্রায় সাড়ে তিন মাস পর কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পান।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার দিন এরশাদ মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে তার সহযোগীকে মোটর সাইকেলে তুলে নেনে। তারপর ওয়াসা হয়ে টাইগারপাস পর্যন্ত গিয়ে চেরাগী পাহাড় এলাকায় আসেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা সিসিটিভি ফুটেজে দেখছি জামালখান এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা শিরিনের অটোরিকশাটিকে টার্গেট করে এরশাদ তার সহযোগী।

“রীমা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে এরশাদ পুনরায় মোটর সাইকেল ঘুরিয়ে জামালখান মোড়ের দিকে আসার সময় শিরিনের হাত থেকে ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে পুনরায় চেরাগী পাহাড়ের দিকে চলে যায়।”

এরশাদ পেশাদার ছিনতাইকারী বলে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, একসময় তিনি ছোটখাটো চুরির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন মোটর সাইকেল নিয়ে ছিনতাইয়ে নেমেছেন।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রউফ বলেন, জামাল খান, ওয়াসা, টাইগারপাস, চৌমুহনী এলাকায়ই মূলত ছিনতাই করেন এরশাদ।

রউফ জানান, আগেও কয়েকবার এরশাদ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। কারাগার থেকে বের হয়ে পুনরায় ছিনতাই কাজে জড়িয়ে পড়ে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এরশাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি ও চকবাজার থানায় চারটি ছিনতাই ও চুরির মামলা পাওয়া গেছে।

এরশাদ নিজেরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যারও আসামি জানিয়ে তিনি বলেন, এ মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলায় প্রায় সাড়ে তিন বছর তিনি কারাগারে ছিলেন।

এদিকে গ্রেপ্তার এরশাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ওসি নুরুল হুদা।