দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হলেও ‘খুনিদের’ বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছাত্রলীগ নেতা মো. মামুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্বজনরা।
Published : 04 Jan 2017, 10:45 AM
ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের বোন জুবাইদা সরওয়ার চৌধুরী বলেছেন, ভাই হারানের পর এখন উল্টো তাদেরই ‘ভিকটিমাইজ’ করা হচ্ছে বলে তার মনে হচ্ছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজ ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুন ছিলেন দিয়াজের অনুসারী।
দিয়াজের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ দাবি করে শুরু থেকেই বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিল মামুন ও তার অনুসারীরা। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের মামলায় গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুর রব হলের সামনে থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ।
দিয়াজের বোন জুবাইদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাজিম ও তোহকে পুলিশ খুঁজছে। অথচ আমাদের বাসায় ভাংচুর-লুটপাটের মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
“হত্যা মামলার আসামিরাও গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো যারা দিয়াজের হত্যার বিচার চেয়েছে তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা খুব হতাশ। আমরা ভাই হারালাম। এখন উল্টো মনে হচ্ছে- আমাদেরই ভিকটিমাইজ করা হচ্ছে।”
গত ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেইট সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজের লাশ উদ্ধার করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদনে দিয়াজের গলায় দাগ ছাড়াও দুই হাতের কনুইয়ের আশপাশে লালচে দাগ এবং বাঁ পায়ে ‘সামান্য আঘাতের চিহ্ন’ থাকার কথা বলা হলেও প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়- ঘটনাটি ‘আত্মহত্যা’।
ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। তাতে ছাত্রলীগ নেতা টিপু ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।
দিয়াজের মায়ের আবেদনে লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকায়। এর ধারাবাহিকতায় রোববার চট্টগ্রামে এসে দিয়াজের লাশ উদ্ধারের কক্ষ ঘুরে দেখেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। দিয়াজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তারা কথা বলেন।
রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পুনঃময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের সামনেই মামুন ও তার অনুসারীদের উপর হামলা চালায় টিপুর সমর্থকরা। কাছাকাছি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবদুর রব হলে মামুন অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েকটি কক্ষে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
এরপরই রোববার রাতে মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমান সে সময় বলেছিলেন, গত বছরের ৩০ অক্টোবর ও ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি হিসেবে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই দুই মামলায় মামুনকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) এইচ এম মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামুনের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”
দিয়াজের বোনের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমান বিডিনিউজকে বলেন, “নাজিম ও তোহাও মামলার আসামি। আসামি পাওয়া গেলে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে।”
দিয়াজের মায়ের করা হত্যা মামলায় আসামি টিপু চট্টগ্রামের পূর্ব রেলের টেন্ডার নিয়ে বিরোধে জোড়া খুনেরও আসামি। টিপু এবং দিয়াজের বাসায় লুটপাটের মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মুজিবুর বলেন, এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
দিয়াজের বোন জুবাইদা বলেন, “ঢাকার ময়নাতদন্তকারী দল সুরতহাল প্রতিবেদনের সময় উপস্থিত হাটহাজারীর ইউএনওর সাথে কথা না বলেই চলে গেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে কত লাগে জানি না।”
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের এএসপি অহিদুর রহমান বিডিনিউজকে বলেন, হাটহাজারীর ইউএনও কার্যালয়ে গেলেও তিনি উপস্থিত না থাকায় ময়নাতদন্তকারী দল তার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।
“তবে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কয়েকজন সাক্ষী এবং সুরতহালের সময় উপস্থিত এসআই মনজুরের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন ভিসেরা ও ডিএনএ প্রতিবেদন পেলেই হয়ত তারা প্রতিবেদন দেবেন।”
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা কম বলে জানান এই সিআইডি কর্মকর্তা।
দিয়াজ, টিপু ও মামুন সবাই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কোন্দল মেটাতে গত ২৫ ডিসেম্বর বন্দরনগরীতে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেদিন সকালে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় এক বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিষয়ে আলোচনা করতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও টিপু সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
পরদিন ২৭ ডিসেম্বর টিপু সংবাদ সম্মেলন করে দিয়াজের মৃত্যুর জন্য তারই অনুসারী মামুন, নিজাম, সৌমেন পালিত ও আবু বকর তোহাকে দোষারোপ করেন।