বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নোমান নতুন ঘোষিত কমিটিতেও একই পদ পেয়েছেন।
সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণার পর থেকেই ‘মনঃক্ষুন্ন’ নোমান। তবে এখনো পর্যন্ত তিনি এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
শনিবার বিকালে ‘চট্টগ্রাম বিএনপি পরিবার’ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে নোমানকে বিএনপির ‘দুর্দিনের কাণ্ডারি’ ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের ‘আপোষহীন’ নেতা আখ্যায়িত করে তাকে স্থায়ী কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
নগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতিতে নোমান অনুসারী হিসেবে পরিচিত প্রায় সব নেতাই অংশ নেন।
পাশাপাশি বিএনপিপন্থি পেশাজীবী ও শিক্ষক এবং শ্রমিক দল, ছাত্রদল ও সাবেক ছাত্রদল নেতারা অংশ নেন।
‘সম্প্রতি ঘোষিত বিএনপি স্থায়ী কমিটিতে বর্ষীয়ান নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী জননেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে সদস্য না করার প্রতিবাদে এবং স্থায়ী কমিটির শুন্য পদে অবিলম্বে তাকে অর্ন্তভুক্ত করার দাবিতে’ এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মেধা ও শ্রম দিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন আবদু্ল্লাহ আল নোমান।
“তার হাতে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার নেতাকর্মী। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যখন সুবিধাবাদী অনেকে দলত্যাগ করেছিল। তখন দলকে সংগঠিত করে আন্দোলন জোরদার করেছিলেন নোমান।”
নোমানের হাত ধরেই চট্টগ্রাম বিএনপির সফলতা এসেছে মন্তব্য করে নাজিম উদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রাম বিএনপিতে আজ যারা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা তাদের প্রায় সবাই নোমানের হাত ধরেই বিএনপিতে এসেছেন। তার হাতে গড়া নেতাকর্মী।”
বক্তব্যে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও প্রবীণ বিএনপি নেতা মো. কবির চৌধুরী বলেন, “এক এগারোর সরকারের শেষ দিকে লালদীঘি ময়দানে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে জনসভার আয়োজন করে বেগম খালেদা জিয়াকে লাখো জনতার সম্মুখে নিয়ে আসেন নোমান।
“সেদিন বিএনপির পুর্নজাগরণ ঘটেছিল। ১৯৮৭ সালে লালদীঘিতে বিশাল জনসভায় বেগম খালেদা জিয়াকে দেশনেত্রী উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন নোমান। অথচ বর্তমান স্থায়ী কমিটিতে তার স্থান হয়নি।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্য বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
নগর যু্বদল সভাপতি কাজী বেলাল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিয়াজ মোহাম্মদ খান, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, নগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ও আহমেদুল আলম রাসেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেকসহ-সভাপতি এম এ হাশেম রাজুসহ অন্যরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি ঘোষণার পর গত ৯ অগাস্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে নোমান বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। প্রত্যাশা ছিল যথাযোগ্য পদ পাব। দলের নেতাকর্মীদের মতো আমারও মন কিছুটা খারাপ।
ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছাড়ছেন কি না- জানতে চাইলে নোমান বলেছিলেন, “সমর্থক, নেতা-কর্মীরা ফোন করছে, বলছে পদ ছেড়ে দিতে। তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করছি, ভাবছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছি না।”
নোমানকে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে রাখার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামের ৫১ নেতা-কর্মী কমিটি ঘোষণার পরই গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছিল। দাবি পূরণ না হলে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখার হুমকিও দিয়েছিল তারা।
ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা নোমান ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ (ভাসানী) হয়ে গত শতকের ৮০ এর দশকে বিএনপিতে যুক্ত হন। তার ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা।
নোমান বিভিন্ন সময়ে দলের কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা নোমান চট্টগ্রাম থেকে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।