১৪১ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশে। ওয়ানডেতে এটি দলটির শততম জয়।
শনিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৭৯ রান করে বাংলাদেশ। এই প্রথম কোনো ওয়ানডেতে আফগানদের বিপক্ষে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। জবাবে ৩৩ ওভার ৫ বলে ১৩৮ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস।
সিরিজ জিততে হলে রান তাড়ায় নিজেদের রেকর্ড ভাঙতে হত আফগানদের। তবে স্বাগতিকদের দারুণ বোলিং আর নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় তার কাছেও যেতে পারেনি অতিথিরা।
দুই দিকে সুইং করে মোহাম্মদ শাহজাদকে প্রথম ওভারে অস্বস্তিতে রাখেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই দারুণ এক ইন কাটারে শাহজাদের স্টাম্প ভেঙে দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। আফগানদের দিক হারানোর সেটাই শুরু।
শাহজাদকে আউট করার পর বল করতে গিয়ে বাজেভাবে পড়ে যান মাশরাফি। এরপর ছোটো রানআপে বল করেন তিনি। মাঝে-মধ্যেই কিছুক্ষণের জন্য মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি।
সাকিব আল হাসানের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন অধিনায়ক আসগর স্তানিকজাই।
শর্ট বলে সাফল্য পান তাসকিন আহমেদ। তার বলে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। পরের ওভারে বদলি ফিল্ডার নাসির হোসেনকে ক্যাচ দেন রহমত।
মোশাররফ হোসেন দ্বিতীয় স্পেলে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন মোহাম্মদ নবিকে। ১ উইকেটে ৫২ রান থেকে আফগানিস্তানের স্কোর হয় ৮৯/৭।
শেষের দিকে নাজিবুল্লাহ জাদরান ও রশিদ খান পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহর সরাসরি থ্রেয়ে রান আউট হন রশিদ। চার ছক্কায় ২৬ রান করা জাদরান মোসাদ্দেক হোসেনের বলে স্লিপে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দেন।
দলে ফেরা শফিউল ইসলাম ফিরতি ক্যাচ নিয়ে দৌলত জাদরানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন।
এর আগে দুই অঙ্কে গিয়েই বিদায় নেন রানে ফেরার লড়াইয়ে থাকা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। মিরওয়াইস আশরাফের অনেক বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি হন তিনি।
চাপ সরিয়ে নিতে শুরুতে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলা সাব্বির উপহার দিয়েছেন তিনটি ছক্কা। রানের গতি বাড়ানোর কাজটা করেছেন তিনিই। স্কয়ার লেগ দিয়ে জাদরানকে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু। এরপর দুই লেগ স্পিনার শেনওয়ারি ও রহমতকে লংঅন দিয়ে উড়িয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়েছেন।
নবিকে সুইপ করে চার হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেন সাব্বির। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি। লেগ স্পিনার রহমতকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়ার চেষ্টায় শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন।
৭৯ বলে ৬টি চার আর তিনটি ছক্কায় ৬৫ রান করে সাব্বিরের বিদায়ে ভাঙে ২৪.৪ ওভার স্থায়ী ১৪০ রানের জুটি। সিরিজে এটাই স্বাগতিকদের একমাত্র শতরানের জুটি।
বাংলাদেশের বাঁচা-মরার ম্যাচে তামিম খেলেছেন ১১৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সপ্তম শতকে ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসানকে (৬) পেছনে ফেলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শতক এখন এককভাবে তারই।
এক সময়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ২১২ রান। সেখান থেকে ২৩ রানে তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মোসাদ্দেককে হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। অতিথি বোলাররা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে চেপে ধরে স্বাগতিকদের।
বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব ফিরেন বাজে এক শটে। গুগলি ভেবে খেলতে গিয়ে রশিদের লেগ স্পিনে এলবিডব্লিউ হন মুশফিক। অভিষেকে আলো ছড়ানো মোসাদ্দেক স্টাম্পড হন রশিদের গুগলি বুঝতে না পেরে।
৮ বছর ২০০ দিন পরে ওয়ানডে খেলতে নেমে ব্যাটিংয়ে মোটেও ভালো করতে পারেননি মোশাররফ। ৪ রান করতে ১৪ বল খেলেন তিনি। দ্রুত ফিরেন অধিনায়ক মাশরাফিও।
আফগানিস্তানের রশিদ, নবি ও আশরাফ দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৯/৮ (তামিম ১১৮, সৌম্য ১১, সাব্বির ৬৫, সাকিব ১৭, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩২, মোসাদ্দেক ৪, মোশাররফ ৪, মাশরাফি ২, শফিউল ২*; রশিদ ২/৩৯, নবি ২/৪১, আশরাফ ২/৪৩, দৌলত ১/৫৮, রহমত ১/৫৯)
আফগানিস্তান: ৩৩.৫ ওভারে ১৩৮ (শাহজাদ ০, মঙ্গল ৩৩, রহমত ৩৬, শাহিদি ০, স্তানিকজাই ১, সামিউল্লাহ ১৩, নবি ৩, নাজিবুল্লাহ ২৬, রশিদ ১৭, আশরাফ ৪*, দৌলত ০; মোশাররফ ৩/২৪, তাসকিন ২/৩১, মোসাদ্দেক ১/৫, মাশরাফি ১/১৫, শফিউল ১/২৮)
ফল: বাংলাদেশ ১৪১ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরা: তামিম ইকবাল
সিরিজ: ২-১ ব্যবধানে বাংলাদেশের।