টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠাই সেরা সাফল্য হয়ে থাকল নিউ জিল্যান্ডের। টুর্নামেন্টে প্রথম হারেই শেষ হল কেন উইলিয়ামসনের দলের অভিযান। জেসন রয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে গ্রুপ পর্বের অপরাজিত দল নিউ জিল্যান্ডকে সহজেই ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড।
Published : 30 Mar 2016, 09:22 PM
বুধবার দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৫৩ রান করে নিউ জিল্যান্ড। জবাবে ১৭ ওভার ১ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আলেক্স হেলসের সঙ্গে রয়ের ৮২ রানের উদ্বোধনী জুটি ইংল্যান্ডকে দারুণ সূচনা এনে দেয়। কোরি অ্যান্ডারসনের করা প্রথম ওভারে ১৬ রান নিয়ে সুরটা ঠিক করে নেয় দলটি। এরপর আর তাদের পেছনে তাকাতে হয়নি।
দলীয় ১১০ রানে ফেরার আগে ৭৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন রয়। তার ৪৪ বলের ইনিংসটি ১১টি চার ও দুটি ছক্কা সমৃদ্ধ।
পরপর দুই বলে রয় ও ওয়েন মর্গ্যানকে ফিরিয়ে নাটকীয়তার আশা জাগান ইশ সোধি। কিন্তু জো রুট ও জস বাটলারের দৃঢ়তায় ১৭ বল আগেই শেষ হয়ে যায় খেলা। সোধির করা ১৭তম ওভারে ২২ রান নিয়ে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান এই দুই জনে।
এক প্রান্তে দেখেশুনে খেলেন রুট, অন্য দিকে ঝড় তোলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বাটলার। রুটের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রানের জুটিতে ৩২ রান সংগ্রহ করেন তিনি। তার ১৭ বলের বিধ্বংসী ইনিংস সাজানো দুটি চার ও তিনটি ছক্কায়। তার শেষ ছক্কায় দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে পৌঁছায় ইংল্যান্ড।
এর আগে শুরুতেই মার্টিন গাপটিলকে হারায় নিউ জিল্যান্ড। তৃতীয় ওভারেই ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানকে হারানো দলটি প্রতিরোধ গড়ে মানরো-উইলিয়ামসনের ব্যাটে।
দ্বিতীয় উইকেটে উইকেটে অধিনায়কের সঙ্গে ৭৪ রানের জুটি গড়েন মানরো। শুরুতে একটু দেখেশুনে খেলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভার থেকে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হন তারা।
ষষ্ঠ থেকে দশম ওভারে তারা সংগ্রহ করেন যথাক্রমে ১৩, ৪, ১১, ১২ ও ১১ রান। একাদশ ওভারে মইন আলিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে উইলিয়ামসন (৩২) ফিরে গেলে ভাঙে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি।
এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি মানরোও। চতুর্দশ ওভারে ফিরে যাওয়ার আগে ৪৬ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলেন তিনি। তার ৩২ বলের ইনিংসটি সাজানো ৭টি চার ও একটি ছক্কায়।
১০৭ রানে মানরো ফিরে যাওয়ার পর প্রায় একাই খেলতে হয় অ্যান্ডারসনকে। ২৩ বলে ২৮ রানের ইনিংসে দেড়শ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান দলকে। কোনোমতে দেড়শ’ পার হওয়া দলটির সংগ্রহ আরও বড় হয়নি পরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়।
উইলিয়ামসন ফিরে যাওয়ার পর ৯.৩ ওভারে ৬২ রানের বেশি করতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড।
বেন স্টোকস-ক্রিস জর্ডানের দারুণ বোলিংয়ে শেষ চার ওভারে ২০ রানের বেশি করতে পারেনি দলটি। শুরুতে ভালো বোলিং করা জর্ডান এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন শেষেও।
প্রথম দুই ওভারে ২০ রান দেওয়া অলরাউন্ডার বেন স্টোকস দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান শেষে। শেষ দুই ওভারে ৬ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন তিনি। সব মিলিয়ে ২৬ রানে তিন উইকেট তিনিই দলের সেরা বোলার।
ইংল্যান্ডের এই শেষের ফিরে আসাটাই ব্যবধান গড়ে দেয় ম্যাচে। জেসন রয়ের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পাওয়া মর্গ্যানের দল লক্ষ্য তাড়ায় কোনো ভুল করেননি। তাই প্রথম হারেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল নিউ জিল্যান্ড।
এনিয়ে দুবার টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিল দলটি। এর আগে ২০০৭ সালে প্রথম আসরে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে পাকিস্তানের কাছে হারে নিউ জিল্যান্ড।
বৃহস্পতিবারের ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে আগামী রোববার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ফাইনালে খেলবে ২০১০ আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৩/৮ (গাপটিল ১৫, উইলিয়ামসন ৩২, মানরো ৪৬, অ্যান্ডারসন ২৮, টেইলর ৬, রনকি ৩, এলিয়ট ৪*, স্যান্টনার ৭, ম্যাকক্লেনাগান ১; স্টোকস ৩/২৬, মইন ১/১০, উইলি ১/১৭, জর্ডান ১/২৪, প্লাঙ্কেট ১/৩৮)
ইংল্যান্ড: ১৭.১ ওভারে ১৫৯/৩ (রয় ৭৮, হেলস ২০, রুট ২৭*, মর্গ্যান ০, বাটলার ৩২*; স্যান্টনার ১/২৮, সোধি ২/৪২)