ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা ত্রুটিপূর্ণ: শিক্ষামন্ত্রী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তিতে মাত্র দুইজন যোগ্য শিক্ষার্থী পাওয়ার পর শিক্ষার মান নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দুষলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2014, 07:08 AM
Updated : 28 Sept 2014, 11:47 AM

রোববার সচিবালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, “বাছাই প্রক্রিয়া (ঢাবির) ত্রুটিপূর্ণ ছিল, এজন্য (শিক্ষার্থীরা) ফেল করেছে। এটা আমাদের বিষয় নয়, এটা তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) দেখবে।”

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার ফলে এই অনুষদভুক্ত ইংরেজি বিভাগে ভর্তির যোগ্যতাসম্পন্ন মাত্র দুজন শিক্ষার্থীকে পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ করার এই পদক্ষেপ তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) বিবেচনা করবেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পরিপূর্ণ না, এটা কোনো পরীক্ষাই না। এটা পাস ফেলের না, এটা বাছাই পরীক্ষা।

“আমরা চাই তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) দায়িত্বশীল হবেন। ছেলে-মেয়েদের হেস্তনেস্ত করতে ফেল বলে প্রচার করেছেন? শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলার জন্য এটা করল?”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

“তা না করলে প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করব, তবে এখনই এটা (আইন পরিবর্তন) করতে চাই না।”

ছেলে-মেয়েদের সর্বনাশ, হতাশাগ্রস্ত, নিরুৎসাহিত এবং বিদেশে তাদের অগ্রহণযোগ্য করার জন্য ওই ধরনের বাছাই পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে দাবি শিক্ষামন্ত্রীর।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না। হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবেন না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে এবার প্রথম বর্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে, যাদের ১২৫ জনই কলা অনুষদের অধীন ‘খ’ ইউনিট থেকে আসার কথা। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাকিদের নেয়া হবে।

এবার ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য নতুন শর্ত আরোপ করায় ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষায় এই বিভাগে ভর্তির যোগ্যতা সম্পন্ন মাত্র দুজন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে।

এ পরিস্থিতিতে ভর্তির যোগ্যতা শিথিল করার আভাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পাসের হার ও শিক্ষার মান নিয়ে সমালোচনার জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি জোর দিয়ে বলছি, শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে রাতারাতিই বিশ্বমান অর্জন করা যাবে না, এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ব্যাপার।

“শুধু পাস বেশি করছে না, শিক্ষার মানদণ্ডও বাড়ছে। বেশি পাস করার মধ্যে অপরাধ কী? কেউ ফেল করার জন্য স্কুলে আসে না। অথচ কয়েকজন লোক পাসের হার নিয়ে কথা বলছেন।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং বাণিজ্য হয়। কোন কোচিংয়ে কোচিং করলে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে (অবৈধ প্রক্রিয়ায়) ভর্তি হওয়া যাবে তাও শিক্ষার্থীরা জানে।”

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পরিপূর্ণ জ্ঞান যাচাইয়ের পরীক্ষা না’-মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, “কঠিন প্রশ্নে ভালো ছাত্ররাও তার জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে পারবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) একজন শিক্ষককে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর জন্যই ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের প্রশ্ন করা হয়েছে।”

“হঠাৎ করে শিক্ষার মান এত নিচে নেমে গেল যে মাত্র দুইজন পাস করল?”, প্রশ্ন করেন মন্ত্রী।

‘খ’ ইউনিটের মাধ্যমে ১২৫ শিক্ষার্থীকে ইংরেজি বিভাগে ভর্তির কথা থাকলেও সেখানে দুইজন পাসের প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ বলেন, “নৈতিকতা থাকলে তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) দুইজনকেই পড়াক।”

জনগণের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ছয় বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নাহিদ বলেন, ছেলে-মেয়েদের হতাশাগ্রস্ত করার অধিকার কারো নেই।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরাই বল, তোমরা কি পাস করনি? আমরা কি এমনিতেই তোমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি?”

শিক্ষায় ভুল-ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান রেখে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কেউই ভুল ধরিয়ে দেয় না।

“শিক্ষার্থীরা কিছুই শেখেনি- পরীক্ষার পরে এটা বলা কিছু শিক্ষকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না যে, ১১ লাখের মধ্যে মাত্র দুইজন পাস করল।”

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির সমাধান কী- এমন প্রশ্নে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী বলেন, “তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) জানাবেন, এটা তারা ঠিক করবেন।”

শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, সৃজনশীল পাঠ্যক্রম এবং ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসের ভিডিও ধারণ করে তা বিটিভিতে প্রচারের মতো কার্যক্রমগুলো তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।