২০১৪ সালে এই বোর্ডে পাসের হার গড় পাসের হারের চেয়ে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। আর গতবারের থেকে এই বোর্ডে এবার পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার শুরুতেই ঢাকা বোর্ডে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। একটি ক্ষেত্রে সত্যতা প্রমাণ মিলেছে স্বীকার করে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দ্বিতীয়বার নিয়েছিল বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া আর কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা কর্মকর্তারা থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত সবাই অস্বীকার করলেও অভিযোগ ছিল ইংরেজি প্রথম পত্র, পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র ফাঁসের।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সোচ্চার হওয়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল পদার্থ বিজ্ঞানের ‘ফাঁস হওয়া’ প্রশ্নপত্র ইন্টারনেটে তুলেও দিয়েছিলেন; বলেছিলেন, রসায়নের প্রশ্নপত্র তার হাতে রয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইংরেজি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞানের ফলই এই রেকর্ড গড়তে ভূমিকা রেখেছে।
‘ফাঁস’ হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে অনেকে ভাল ফল করেছেন বলে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অভিযোগ উঠলেও তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
“পাস করার জন্যই শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। পাসের হার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তা আধুনিক যুগের প্রশ্ন হবে না,” সমালোচনার জবাবে বলেছেন তিনি।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গত বছর এই বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ পাসের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ পয়েন্টের বেশি।
গত বছর ঢাকা বোর্ডে পদার্থ বিজ্ঞানে ৮৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ পাস করলেও এবার তা ৬ শতাংশ বেড়ে ৯৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এবার ঢাকা বোর্ডে রসায়ন বিজ্ঞানে পাসের হার ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।পাসের হার শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে গণিতে।
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
গত বছর গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এর আগে ২০০৯ সালে ৭২ দশমিক ৭৮ শতাংশ গড় পাসে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০১০ সালে মোট পাসের হার ৭৪ দশমিক ২৮ শতাংশ ছিল, ঢাকা বোর্ডে ছিল ৭২ দশমিক ১০ শতাংশ।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১২ সালে গড় পাসের থেকে ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি পাসের হার ছিল ঢাকা বোর্ডে।
“ইংরেজি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নেয়ার অনেক পেয়েছে। ফলে ওই বিষয়ে পাসের হার বেড়েছে।”
রসায়ন ও গণিতের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় নতুন প্রশ্ন ছাপিয়ে এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল বলেও জানান তাসলিমা।
পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্নও ফাঁস হয়েছিল স্বীকার করে তিনি বলেন, “পরীক্ষার পরের দিন আমাদের কাছে অভিযোগ আসে, তখন কিছুই করার ছিল না।”
অধ্যাপক তাসলিমা দাবি করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় এবছর শিক্ষার্থীরা স্বস্তিতে পরীক্ষা দিতে পারায় ফলাফল ভাল হয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালেই প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ দিয়ে চারটি নিবন্ধ লেখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
একটি নিবন্ধে পদার্থ বিজ্ঞানের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছাপিয়ে দিয়ে জাফর ইকবাল লিখেন, “...আমার হাতে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্নগুলো ছিল। এখন রসায়নের প্রশ্ন আছে। এগুলোও আমি পত্রপত্রিকায় দিতে পারতাম, কিন্তু কোনো লাভ হবে না বলে নোংরা ঘাঁটাঘাটি করতে ইচ্ছে করছে না।”
“পদার্থ বিজ্ঞানের ফাঁস হওয়া এবং সত্যিকারের প্রশ্নগুলো আমি সংবাদমাধ্যমে ছাপিয়ে দিয়েছিলাম। অন্যগুলো করিনি, রুচি হয়নি, প্রয়োজন মনে হয়নি।”
জাফর ইকবাল লেখেন, “পরীক্ষার আগেই যে প্রশ্নগুলো আমার কাছে এসেছে আমার কাছে তার প্রমাণ আছে, কেউ চাইলে দেখতে পারে।”
পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রশ্ন হওয়া প্রশ্ন ছাপিয়ে দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। জাফর ইকবাল লেখার পর শিক্ষামন্ত্রী একটি নিবন্ধ লিখে তার জবাবও দেন।
তবে প্রশ্ন ফাঁস তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইনও ঢাকা বোর্ডের পাসের হার বেড়ে যাওয়ায় কোনো অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করেন না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজেশন আকারে প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল তা থেকে কিছু প্রশ্ন কমন পড়েছে মাত্র।”
সোহরাব বলেন, “প্রশ্ন যদিও ফাঁস হয়ে থাকে কতজন সেই প্রশ্ন পেয়েছিল? সবার পাস করার জন্য তো প্রশ্ন লাগে না।”
শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা সচেতন হওয়ায় পাসের হার বেড়েছে বলে তার মত। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘চুপচাপ’ থাকলে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য পাসের হার বাড়ার অভিযোগ সত্য হত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি এবং এইচএসসিতে পাওয়া জিপিএ হিসেব করে একটা নম্বর মোট স্কোর নির্ধারণে যোগ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এই বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
“আমার বন্ধুদের অনেকেই রসায়নের প্রশ্ন পেয়ে ওই বিষয়ে আমার থেকে অনেক ভালো করেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায়ও অনেক এগিয়ে থাকবে,” বলেন সদ্য এইচএসসি পাসকরা তানভির আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকা করার সময় এসএসসি ও এইচএসসিতে পাওয়া জিপিএ’র তুলনায় স্কোর কমিয়ে দেয়া হলেই নকল ও প্রশ্ন ফাঁসের প্রবণতা কমবে বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায়ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর জিপিএ আলাদা করে হিসেব করা হয়।