নিরীহ শ্রমিককে জেলে পাঠানোর অভিযোগ

গ্রাম ও ডাক নামে মিল থাকায় মাদক মামলার এক পলাতক আসামির পরিবর্তে পুলিশ এক বন্দর শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে বলে আভিযোগ উঠেছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2015, 04:25 PM
Updated : 3 July 2015, 04:48 PM

গত বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় আব্দুল কাদের বাবু (৩০) নামে ওই শ্রমিককে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া বাজার ইউনিয়ন পরিষদের মোড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্থানীয়রা তাকে ভোমরা বন্দরের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মচারী হিসেবে শনাক্ত করলেও পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার বাবু ভিন্ন পরিচয় ধারণ করলেও সেই পলাতক আসামি বাবু সরদার ওরফে বাবু।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ জুলাই দুপুর সোয়া ১টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামের মৃত হাসান সরদারের ছেলে বাবু সরদার ওরফে বাবুর বাড়ি থেকে ৫০০ লিটারের দুই বোতল ভারতীয় কিংফিশার ব্রাণ্ডের বিয়ার জব্দ করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক সানোয়ার হোসেন।

পরে ওই দিন বিকালে উপপরিদর্শক সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বাবু সরদার ওরফে বাবুকে পলাতক দেখিয়ে ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২২ (৬) ধারায় দেবহাটা থানায় একটি মামলা (জিআর-৯৬/১৩ দেবহাটা) দায়ের করেন।

২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কালীগঞ্জ সার্কেলের পরিদর্শক কেএম রবিউল ইসলাম আদালতে এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি বাবু সরদার ওরফে বাবুর নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পরবর্তীতে অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ার পর সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম-২ আদালতের বিচারক মো. গোলাম নবী ওই আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এদিকে, দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামের নুরুন্নাহার সাংবাদিকদের কাছে আভিযোগ করেন, তার স্বামী আব্দুল কাদের বাবু। তারা দুই জনই ভোমরা বন্দরের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মী। তার শ্বশুরের নাম আব্দুল জলিল গাজী।

অবশ্য মামলার অভিযোগপত্র অনুয়ায়ী পলাতক বাবু সরদার ওরফে বাবুর বাবার নাম মৃত হাসান সরদার।

নুরুন্নাহার জানান, তার স্বামী আব্দুল কাদের বাবু বৃহস্পতিবার কুলিয়া মসজিদে ইফতার ও নামাজ শেষে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসা মাত্রই দেবহাটা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক রোকনুজ্জামান তাকে দেবহাটা থানার জিআর ৯৬/১৩ নম্বর মামলার পরোয়ানা ভুক্ত আসামি বাবু সরদার বাবু হিসেবে গ্রেপ্তার করেন।

বাবু সরদার বাবু ও আব্দুল কাদের বাবু একই ব্যক্তি নয় বললেও তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন নুরুন্নাহার।

এ ব্যাপারে পরোয়ানা তামিলকারি দেবহাটা থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক রোকনুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বাবু সরদার ওরফে বাবু ও আব্দুল কাদের বাবু একই ব্যক্তি। মৃত হাসান সরদার ও মৃত আব্দুল জলিল গাজী বাবুর মা ছকিনা খাতুনের দুই স্বামী।

“মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথ যাচাই না করে আব্দুল কাদের বাবুর আসল নামের পরিবর্তে বাবু সরদার হিসেবে এজাহার ও অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।”

আব্দুল কাদের বাবুকে আটক করার পর সে নিজেই বাবু সরদার ওরফে বাবু হিসেবে পরিচিত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করার পরদিন তাকে আদালতে পাঠানো হয় বলেও দাবি করেন সহকারী উপ-পরিদর্শক রোকনুজ্জামান।

দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক এসএম জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত থেকে পাঠানো পরোয়ানার কপিতে আব্দুল কাদের বাবুর পিতার নাম মৃত হাসান সরদার লেখা আছে। সে অনুযায়ী পুলিশ আব্দুল কাদের বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে।”

বাবার নাম নিয়ে জটিলতা দূর করতে আদালতে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে বলেও জানান দেবহাটা থানার ওসি।