ভোটার তালিকাভুক্ত দেশের প্রায় আধা কোটি মানুষের হাতে ছয় মাসেও জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে নতুন করে ‘কম বয়সীদের’ তথ্য সংগ্রহের তোড়জোড় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে ইসিতে।
Published : 17 Jun 2015, 01:08 PM
কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হবে ছয় মাস পর। এছাড়া নিবন্ধিত সোয়া ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ শেষ না করে আবার তথ্য সংগ্রহে নামলে জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে।
এ অবস্থায় তড়িঘড়ি নতুন কাজে হাত দেওয়ার বিরোধিতা করছেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী। এ মুহূর্তে আঠারোর কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বিশাল অংকের অর্থের ‘অপচয়’ হবে বলেও তারা মনে করছেন।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটারযোগ্য (যারা বর্তমানে ১৭ বছর বয়সী ) হবেন, তাদের তথ্য হালনাগাদ করা হবে আগামী বছর।
কিন্তু ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারিতে যারা ভোটারযোগ্য হবেন (বর্তমানে ১৫ ও ১৬ বছর বয়সী) তাদের তথ্যও সংগ্রহ করার প্রস্তাব রয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের। আগামী অগাস্ট থেকে এসব নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কর্মপরিকল্পনা কমিশন সভায়ও উপস্থাপন করা হয়।
কিন্তু তথ্য সংগ্রহ নিয়ে ৪ ও ৯ জুন দুই দফা বৈঠক করেও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছর ভোটারযোগ্যদের তথ্য হালনাগাদের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। আঠারোর কম বয়সীদেরও নিবন্ধনের আওতায় আনতে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“কিন্তু আগামী হালনাগাদের আগেই আঠারোর কম বয়সী তিন স্তরের (১৫-১৭) নাগরিকদের নিবন্ধনে কমিশনের কয়েকজনের ভিন্নমত রয়েছে। আমরা একটা কমিটি করেছি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিতে পারব আশা করি।”
বিভিন্ন দেশের ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিয়ম ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে সুবিধা-অসুবিধা এবং যৌক্তিকতা পরীক্ষা করে দেখতে চার সদস্যের এই কমিটি করেছে নির্বাচন কমিশন।
কমিটির কর্ম পরিধির বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার কমিশনের উপ-সচিব মতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, অন্য দেশে কত বছর বয়সে ভোটার নিবন্ধন করা হয়, কত বছর বয়স পর্যন্ত ভোটার নিবন্ধনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়- এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া বিভিন্ন দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে কত বছর বয়স পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং তার পক্ষে যৌক্তিকতাও খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
জাতীয় পরিচয়পত্র উইংয়ের মহাপরিচালককে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিশনের আইসিটি, আইন ও মানবসম্পন্ন উন্নয়ন শাখার তিন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে এ কমিটিতে আছেন।
কমিশনের জনসংযোগ শাখা জানায়, বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ৬২ লাখের বেশি। এর মধ্যে সর্বশেষ হালনাগাদে (২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছিল) ভোটার হয়েছেন ৪৭ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৩ জন। নতুন নিবন্ধিত এই নাগরিকদের সবাইকে এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারেনি কমিশন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন কমিশন সভায় জানান, যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে না তারা ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হবে না। এখন শুধু তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। গত হালনাগাদে ১৭ ও ১৮ বছর বয়সী নাগরিকদের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে ১৬ বছর বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার দৃষ্টান্ত থাকলেও এর কম বয়সীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার নজির নেই।
“২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা এ মুহূর্তের কাজ; ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধিত হয়েছে, তাদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া দরকার।”
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, প্রতি বছর নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করা ইসির আইনি কর্তব্য। কিন্তু গত বছর যাদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে তাদের এখনো পরিচয়পত্র দেওয়া সম্ভব হয় নি।
“এটি চরম ব্যর্থতা।আমাদের প্রথম কাজ হলো ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধিত হয়েছেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া। এ কাজটি সমাধান না করে বাড়তি দায়িত্ব নেওয়া ঠিক হবে না।”
এছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সী নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করলে তারাও জাতীয় পরিচয়পত্র দাবি করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বসানোর জায়গা না করেই স্মার্ট কার্ড তৈরির মেশিন আনা হয়েছে। অবিলম্বে এ মেশিন বসানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কাজ শেষ করে তারপর আঠারোর কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী ‘রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকা’ চিহ্নিত করার কাজে বিলম্বে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নতুন নিবন্ধিত ৪৭ লাখ ভোটারকে লেমিনেটেড কার্ড দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানতে চান সভায়।
অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান সিইসিকে বলেন, কার্ড বিতরণের বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের স্মার্ট কার্ড অথবা লেমিনেটিং কার্ড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।