ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারে ভিআইপির সঙ্গীদের পরিচয় নিশ্চিতে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক থাকার জন্য পর্যবেক্ষণ দিয়ে এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 24 May 2015, 10:23 PM
যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের স্ত্রী ও তার এক আত্মীয়ের জন্য ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ‘ভিআইপি মর্যাদার’ ব্যবস্থা প্রশ্নে রুলের শুনানি শেষে রোববার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
গত ৯ এপ্রিল ‘গোলাম আযমের স্ত্রী ও ভাতিজা ফেরত গেলেন বিমানবন্দর থেকে/ ভিআইপি মর্যাদা দেয়া নিয়ে তোলপাড়’ শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে ২২ এপ্রিল স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেয় হাই কোর্টের এই বেঞ্চ।
গোলাম আযমের স্ত্রী ও আত্মীয়ের জন্য ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে কীভাবে ‘ভিআইপি মর্যাদার’ ব্যবস্থা করা হয়েছিল সে বিষয়ে তদন্ত করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।
আদালতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পক্ষে ব্যারিষ্টার সাইফুর রশীদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
‘ভিআইপি পাস’ ব্যবস্থাকারী সাবেক অতিরিক্ত সচিব দেলেনা বেগমের পক্ষে ছিলেন ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আদেশের পর ব্যারিস্টার সাইফুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ক্রম অনুসরণ করতে এবং ভিআইপির সঙ্গীদের পরিচয় নিশ্চিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে আরও সর্তক থাকার পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত রুল নিষ্পত্তি করে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
“এখানে দেখা যায় মূল সমস্যা ছিল দেলেনা বেগমের। উনি সঠিক তথ্য দেননি। ঘটনার পর ভুল স্বীকার করে বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে উনি দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দেন। আদালতে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আদালত এটি গ্রহণ করেছে।”
যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের পরিবারের সদস্যদের কোন আইন বলে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে সররকারের কোনো নির্দেশ বা আইন ভঙ্গ হয়েছে কি না, ভঙ্গ হয়ে থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ১২ মে আদেশের জন্য দিন রাখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় রোববার আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেয়।
জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবির গত ৮ এপ্রিল সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ‘ভিআইপি পাস’ নিয়ে ইমিগ্রেশন পার হতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে মুচলেকা রেখে বিমানবন্দর থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়।
বিমানবন্দর সূত্রের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ওই বিকেল সাড়ে ৪টায় বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন আফিফা আযম ও লুৎফুল কবির। সঙ্গে গোলাম আযমের ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর স্ত্রী তাসনীম আঞ্জুম ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব দেলেনা বেগম।
“তারা দ্রুত হেঁটে চলে যান ভিআইপি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। এ সময় তাদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় দ্রুততম সময়ে প্রটোকল সম্পন্ন করার কাজে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখারকে ইমিগ্রেশনে পাঠান পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান। ততক্ষণে লুৎফুল কবিরের ইমিগ্রেশন সিল মারার কাজ শেষ।”
দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকটাত্মীয়দের ‘দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা’ থাকার পরও শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান পরিচয় গোপন রেখে তাদের জন্য ‘ভিআইপি মর্যাদার’ ব্যবস্থা করেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উসকানির দায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমীর গোলাম আযমকে ২০১৩ সালের ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি চলার মধ্যেই গতবছর ২৩ অক্টোবর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৯২ বছর বয়সী জামায়াতগুরু।