মীর কাসেমের আপিল কার্যতালিকায়

যুদ্ধাপরাধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিল সর্বোচ্চ আদালতের কার্যতালিকায় এসেছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2015, 02:30 PM
Updated : 21 April 2015, 02:30 PM

বিষয়টি বুধবারের আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার দুই নম্বর ক্রমে রাখা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হবে।

বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

একাত্তরে চট্টগ্রামে নৃশংসতা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীকে গত বছর ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

কাসেম আলী ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে গত ৩০ নভেম্বর আপিল করেন, যাতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন তিনি।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল বিষয়ে আদেশের জন্য মীর কাসেম আলীর আপিল তালিকায় এসেছে।” 

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল শুনানির জন্য ২৮এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাসেমের ফাঁসির রায় আসে ট্রাইব্যুনালে।

মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসাবে মীর কাসেম চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন বলে আদালতের রায়ে উঠে আসে।

পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান জামায়াতকে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাসেম তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।

এরপর রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে অত্যন্ত দ্রুততায় নিজের ও দলের উন্নতি ঘটান কাসেম, পরিণত হন জামায়াতের আর্থিক মেরুদণ্ডে।

মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যে ভবনটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হতো, সেই ডালিম হোটেলকে রায়ের পর্যাবেক্ষণে বলা হয়েছে ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।

আদালত বলে, “ডালিম হোটেলে ঘটে যাওয়া সবধরনের অপরাধের ব্যাপারে সবকিছুই জানতেন মীর কাসেম। এসব অপরাধে তার ‘কর্তৃত্বপূর্ণ’ অংশগ্রহণও প্রমাণিত। ফলে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৪(২) ধারা অনুযায়ী তিনি ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বের’ দোষে দোষী।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতাকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরু হয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়। আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ যাত্রা শুরু করে ২০১২ সালের ২২ মার্চ।

দুটি ট্রাইব্যুনালে গত পাঁচ বছরে ১৭টি মামলায় রায় হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি মামলার ক্ষেত্রে আপিল হয়েছে।

এর মধ্যে তিনটি মামলায় আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় এসেছে; দণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের।

আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি।      

শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে মোট নয়টি মামলায় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।