টাকা-পয়সা ও গহনা লুট করার জন্য পূর্ব পরিচিতরাই যাত্রাবাড়ীতে জোড়া খুন ঘটিয়েছে বলে পরিবারের সন্দেহ।
Published : 25 Mar 2015, 05:35 PM
মঙ্গলবার রাতে উত্তর যাত্রাবাড়ীর একটি বাসা থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিধবা স্ত্রী রওশন আরা বেগম (৬৫) এবং তার গৃহকর্মী কল্পনা আক্তারের (১০) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত রওশন আরার মেজ ভাই মোজাম্মেল হোসেন বাদি হয়ে বুধবার সকালে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই থানার এসআই ইমরানুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুনিদের গ্রেপ্তারের জন্য একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। খুব শিগগিরই একটা ভালো খবর আপনাদের (সাংবাদিক) দিতে পারব বলে আশা করি।”
নিহত রওশন আরার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টাকা ও গহনা লুট করার জন্য পূর্ব পরিচিতরা এটা ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
তিন তলা ওই বাড়িতে এক নাতি ও গৃহকর্মীদের নিয়ে থাকতেন রওশন আরা। তার পাঁচ সন্তানের সবাই বিদেশে থাকেন।
মোয়াজ্জেম বলেন, “বাড়ির কলাপসিবল গেইটে তালা থাকে। কাউকে না কাউকে গিয়ে তারা খুলে দিতে হয়। ওই সময় নিহত কল্পনাই কলিং বেল বাজার পর গেইটের তালা খুলে দিয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। পরিচিত হওয়ার কারণেই কল্পনা তালা খুলে দিয়েছিল।”
তিনি বলেন, দুবৃর্ত্তরা হত্যার পর তালা খুলে রেখে চলে যায়। কলাপসিবল গেইটের তালার সঙ্গেই চাবি পাওয়া যায়।
মোয়াজ্জেম জানান, গৃহকর্মী কল্পনা ও তার মা লাকী ছাড়া ওই বাড়িতে থাকতেন রওশন আরার নাতি সোহান। সোহান জুরাইন কলেছে পড়াশুনা করেন। মঙ্গলবার সকালে সোহান গ্রামের বাড়ি দোহারের কলাকুপা বান্দরা গিয়েছিলেন।
মোয়াজ্জেম বলেন, “সোহান বাড়িতে নেই। সুতরাং এটাই লুট করার উপযুক্ত সময় এই তথ্য নিশ্চিতভাবেই তাদের জানা ছিল।”
তবে তিনি বলেন, বাসার সব কিছু এলোমেলো করা হলেও প্রায় ৮/১০ ভরি গহনা দুর্বৃত্তরা নিতে পারেনি।
“কারণ গহনাগুলো যেখানে ছিল, সে জায়গাটি খুঁজে পায়নি দুর্বৃত্তরা।”
বাসা থেকে শুধু ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন খোয়া গেছে। তবে আর কী কী খোয়া গেছে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রওশন আরার ভাই।
তিনি বলেন, ওই বাসায় চম্পা নামে লাকির এক খালাত বোনও মাঝে-মধ্যে এসে থাকতেন।
বাড়ির দোতলায় থাকতেন রওশন আরা। নিচ তলায় দুই ভাড়াটিয়া থাকেন। তারা কেউ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। কিছু বোঝেননি প্রতিবেশীরাও।
বাড়ি নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল কি না- জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম বলেন, ৫৬ নম্বর উত্তর যাত্রাবাড়ীর জমিটি স্বাধীনতার আগে কিনেছিলেন তার ভগ্নিপতি কুদ্দুস, এরপর ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনতলা বাড়িটি নির্মাণ করা হয়।
“বাড়ি কেনা ও ভবন করার সময় বা পরে কারো সাথে কোনো ধরনের বিরোধের কথা আমরা শুনিনি।”
রওশন আরার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল কুদ্দুস ১৯৯৪ সালে মারা যান।
মায়ের এভাবে মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রওশন আরার সন্তানরা ভেঙে পড়েছেন বলে জানান মোয়াজ্জেম। রওশন আরার চার সন্তান থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, একজন থাকেন কানাডায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ছেলে ও এক মেয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে তাদের মামা মোয়াজ্জেম জানান।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুধবার ময়নাতদন্ত হয় রওশন আরার। সন্তানরা ফেরার পর কলাকুপা বান্দুরায় স্বামী আব্দুল কুদ্দুসের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
হত্যাকাণ্ডের কারণ কিছু জানা গেছে কি না- প্রশ্ন করা হলে ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকটি সংস্থা তদন্ত করছে। তাই এই মূহূর্তে কিছু বলা ঠিক হবে না।”
হত্যাকাণ্ডের সময় কল্পনার মা লাকি বাড়ির বাইরে ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
লাকির বক্তব্য অনুযায়ী, সন্ধ্যার পর তিনি বাইরে থেকে ফিরে ঘরের মধ্যে তার মেয়ে ও গৃহকর্ত্রী রওশন আরার লাশ দেখেন। তার চিৎকারে অন্যরা ছুটে আসার পর পুলিশে খবর দেওয়া হয়।