তফসিল ঘোষণার পর এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের আনাগোনা বেড়ে গেলেও সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের প্রত্যাশা করছেন ভোটাররা।
Published : 21 Mar 2015, 12:19 AM
শুক্রবার ঢাকা উত্তরের ভোটার, এমনকি কোনো প্রার্থীর সমর্থকও যে কথা বললেন তাতে মোদ্দা কথা দাঁড়ায়- জমজমাট লড়াই আর প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ চান তারা।
আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটি করপোরেশনে ভোটের তারিখ রেখে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল ঘোষণার আগে যে প্রচার-প্রচারণা ছিল বিলবোর্ড, পোস্টার আর ব্যানারে, দুই দিনের মধ্যে সে চিত্র রীতিমতো পাল্টে গেছে।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার সপ্তাহের বেশি সময় হাতে রেখেই সম্ভাব্য মেয়র ও কমিশনার প্রার্থীরা জোরেশোরে শুরু করে দিয়েছেন ‘দরজায় কড়া নাড়ার’ প্রচারণা। ভোটাররাও বেশ উদগ্রিব আট বছর অন্তে নিজেদের নগরপিতা বেছে নিতে।
তবে সব ছাপিয়ে আগ্রহের জায়গায় ঘুরে ফিরে আসছে সব দলের অংশগ্রহণ।
ডিসিসি উত্তরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম যেমন বললেন, “যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের চেয়ে প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবু বিএনপি বা অন্য দলগুলোর নির্বাচনে আশা উচিত।”
“নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ না থাকলে প্রতিযোগিতা থাকবে না। আর প্রতিযোগিতা না থাকলে সঠিক নেতৃত্ব বাছাই করতে আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে। আর একপেশে নির্বাচন কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক শহিদ মো. আদনান মনে করছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি তাদের জনমত যাচাইয়ের একটি সুযোগ পাবে।
“শুধু বিএনপিই নয়, আমার মনে হয় সকল বড় বা ছোট দলেরই এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিৎ। এর মাধ্যমে দলগুলো তাদের জনমত যাচাই করে নিতে পারে।”
দীর্ঘ আট বছর ধরে নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকা ঢাকা সিটি করপোরেশন এখন দুই ভাগ হলেও ২০০২ সালে অবিভক্ত সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। বিভক্ত ঢাকায় এটিই হবে প্রথম নির্বাচন।
ভোটাররা মনে করছেন এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নগরীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হবে।
৩০ নম্বর ওয়ার্ডর বাসিন্দা পারভিন ইসলাম বলেন, “অনেক দিন থেকে নির্বাচন না হওয়ার কারণে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ থমকে ছিল। এখন নির্বাচন হলে সেগুলো গতি পাবে।”
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডর বাসিন্দা আকতারুজ্জামান শামীম বলেন, “নগরীর উন্নয়নের জন্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।”
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডিসিসি উত্তরের মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৬টি আর সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২টি।
নগরীর মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জন।
তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও বেশ সক্রিয় দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি বজলুল রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় নগরীর নেতৃত্বে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঠিক হয়েছে, এটি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে।”
“আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক সাহেবের একটি পরিস্কার ইমেজ রয়েছে, তিনি একটি ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। স্থানীয় নেতাদের সাথে তিনি যোগাযোগ করছেন, আমরাও তার সাথে যোগাযোগ করছি। জনগণের কাছ থেকে আমরা যে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি তাতে বলা যায় একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
ডিসিসি উত্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন নির্বাচন করার টিকিট পেয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক। তবে মেয়র পদে লড়তে চান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারও।
অবশ্য তিনি বলছেন, “আমার প্রার্থিতার বিষয়টি নির্ভর করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপরে। তিনি যদি দাঁড়াতে বলেন দাঁড়াব, আর না হয় দাঁড়াব না।”
জাতীয় পার্টি ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুলকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী হচ্ছেন আবদুল্লাহ আল কাফি রতন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দুই মামলায় কারাগারে থাকলেও তিনি ঢাকা উত্তরের মেয়র পড়ে লড়বেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এ নির্বাচন নিয়ে আগাম কিছু না জানালেও শুক্রবার বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে চেয়ারপারসনের মনোভাব ইতিবাচক বলে তার মনে হয়েছে।
সব মিলিয়ে জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষা করছেন ঢাকা উত্তরের বাসিন্দারা।