নাশকতায় দগ্ধরা বাড়ি ফিরছেন অনিশ্চয়তা নিয়ে

৫৩ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন দিনমজুর জমির আলী। দু হাত দিয়ে এখনও কোনো কাজ করতে পারেন না। ঘুমাতে হয় চোখ খুলেই, কারণ চোখের পাতা তার পুড়েছে পেট্রোল বোমার আগুনে।

কাজী শাহরিন হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2015, 06:57 PM
Updated : 18 March 2015, 11:04 AM

গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার বাসিন্দা জমির গত ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসে অগ্নিদগ্ধ হন। সেদিন থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন তিনি।

বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জমিরের পা থেকে চামড়া নিয়ে দু’হাতে এবং মাথার ঠিক মাঝখানে প্রায় পুরোটা পুড়ে যাওয়া অংশে জোড়া দেওয়া হয়েছে।

সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও চোখের চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহ পর আবার বার্ন ইউনিটে দেখা করতে বলা হয়েছে তাকে।

দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা জমির আলী জানেন না বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর কিভাবে সংসার চলবে। বড় ছেলে পরিবহনকর্মী হিসেবে কাজ করলেও গত প্রায় দুই মাস বাবার সঙ্গেই কেটেছে তার।

জমির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের দেওয়া চেকের কয়েক হাজার টাকা দিয়ে এই ক’দিন চলেছে কোনোমতে।

“বাইরে থেকেও অনেকে দেখতে এসে সাহায্য করে গেছে কিছু টাকা দিয়ে। এসব দিয়েই চলছে এখনও।”

জমির আলী বাড়ি ফিরতে পারলেও বগুড়ার আসবাবপত্রের ব্যবসায়ী সাজু মিয়া কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, তার কোনো ঠিক নেই।

বগুড়ার সদরের মোকামতলার বাসিন্দা সাজুও হাসপাতালে আছেন ২৩ জানুয়ারি থেকে। বগুড়া থেকে নড়াইল যাওয়ার পথে অগ্নিদগ্ধ হন তিন মেয়ের বাবা সাজু মিয়া।

তারও পা থেকে চামড়া নিয়ে দুই হাতে লাগানো হলেও এখনো বুকের পুরোটাই ব্যান্ডেজে মোড়া, চামড়া লাগানো বাকি। পুড়েছে মুখের বেশ খানিকটা অংশও।

সাজুর সঙ্গে আছেন তার মা সাজেদা ও স্ত্রী শাহনাজ। শাহনাজ জানালেন, তিন মেয়েকে বাড়িতে রেখে গত প্রায় দুই মাস ধরে স্বামীকে নিয়ে আছেন এখানে শাহনাজ। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্বামী সাজুই।

“বাড়ি যেতে এক হাজার টাকা লাগে, আসতে আবার এক হাজার টাকা লাগে। ক্যামনে যাব? সরকারের দেওয়া চেকের টাকায় কোনোমতে চলছে ক’দিন ধরে। এরপর কিভাবে চলবে জানি না।”

চোখের পানি মুছতে মুছতে সাজুর মা সাজেদা বলেন, “ঋণ করে ব্যবসা করে আমার ছেলে। এখানে আসার পর থেকে কিস্তির টাকা বাকি পড়ে আছে। কী করব, বুঝি না।”

গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতাল শুরুর পর সড়কে গাড়ি পোড়ানো ও পেট্রোল বোমা ছোড়া শুরু হলে বার্ন ইউনিটে বাড়তে থাকে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা।

তবে এসব রোগীদের প্রত্যেকের অবস্থাই উন্নতির দিকে বলে জানালেন ‘হরতাল ভিকটিম’দের ওয়ার্ডের ইন-চার্জ নার্স মোরশেদা খানম। সপ্তাহখানেক ধরে নতুন কোনো রোগী আসেনি বলেও জানান তিনি।

“আগে অনেক রোগীই মুখে খেতে পারত না, নল দিয়ে খাবার দিতে হত। এখন এখানে থাকা রোগীদের সবাই মুখ দিয়ে খেতে পারছে।”

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে আসা ১৬৯ জন রোগীর প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগীই অবস্থাই উন্নতির দিকে। বাকিরাও ধীরে ধীরে রিকভার করছেন।”

বর্তমানে হাসপাতালে ৩০ জন আছেন, যারা নাশকতার স্বীকার হয়ে হাসপাতালে এসেছেন।

নতুন করে কারো অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই জানিয়ে ডা. পার্থ শংকর বলেন, “পোড়া ঘা থেকে নতুন করে বড় ধরনের কোনো অসুবিধা হওয়ার মতো কোনো কারণ এখন আর নেই।”