লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে একুশের বইমেলায় স্টল বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন এক দল প্রকাশক।
Published : 28 Feb 2015, 05:55 PM
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই লেখকের অধিকাংশ বইয়ের প্রকাশক শ্রাবণ প্রকাশনীর সামনে শনিবার বিকাল ৪টা থেকে ১০ মিনিটের এই অবস্থান কর্মসূচি হয়।
‘মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রকাশকবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।
লেখালেখির কারণে বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর হুমকির মুখে থাকা অভিজিৎ এবারের মেলায় তার দুটি বই প্রকাশ উপলক্ষে দেশে ফিরেছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে আঙুল হারিয়েছেন।
সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এই লেখক হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়ের মধ্যে বইমেলার শেষ দিনে প্রকাশকরাও প্রতিবাদে শামিল হলেন।
‘ধর্মান্ধদের কাছে মাথা নত করি নাই, কলম বেচি নাই’, ‘লেখক অভিজিৎ রায়ের খুনিদের বিচার কর’; ‘মৌলবাদের ভয়ে প্রকাশনা বন্ধ করব না’ ইত্যাদি প্লাকার্ড ছিল এই কর্মসূচিতে।
শ্রাবণের পাশাপাশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতি, পড়ুয়া, নান্দনিক তাদের স্টল বন্ধ করে এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
শ্রাবণের মালিক রবিন আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলা একাডেমির উদ্যোগহীনতা দেখে তারা নিজেরা এই কর্মসূচি পালন করেন।
“অভিজিৎ রায় একজন তরুণ লেখক। অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন লেখক ছিলেন। এ ধরনের একজন লেখক যেভাবে লেখালেখি করছিলেন, তিনি আরেকজন হুমায়ুন আজাদ হতে পারতেন। এ রকম একজন লেখক মৃত্যুবরণ করলেন, অথচ বাংলা একাডেমির কোনো কর্মসূচি নাই। এটা দুঃখজনক।”
কর্মসূচিতে বাংলা একাডেমির সাড়া না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “একুশে বইমেলা বইবেচার মেলা নয়। এর সঙ্গে আমাদের ভাষা আন্দোলন-আত্মত্যাগ জড়িত। সেই মেলা একজন লেখকের মৃত্যুতে আধা ঘণ্টাও বন্ধ থাকবে না, এটা হতে পারে না।
“এটা প্রমাণ করে বাংলা একাডেমী মৌলবাদের কাছে মাথা বিক্রি করে দিয়েছে।”
“আমরা আমাদের কর্মসূচির জন্য বাংলা একাডেমির মাইক থেকে একটি ঘোষণা চেয়েছিলাম, সেটাও পাওয়া যায়নি।”
রবিনের অভিযোগের বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিজিৎকে হত্যার প্রতিবাদে আমরা কালকে প্রতিবাদ করেছি। আমাদের প্রতিবাদ প্রেসে পাঠিয়েছি।”
মেলা ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো প্রকাশক যোগাযোগ করেনি বলে দাবি করেন তিনি।
শামসুজ্জামান বলেন, “আমি এ ধরনের কোনো কর্মসূচির বিষয় জানি না। কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।”
বাংলা একাডেমির সমালোচনা করতে গিয়ে এবারের বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন রবিন।
“তারা একটি বই বের করলো, অভিযোগ উঠার পর তারা বইটি উইথড্র করল, ক্ষমাও চাইল। এরপরও বাংলা একাডেমি তাদেরকে একটা বিপজ্জনক শাস্তি দিয়েছে।”
একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালককে এ সবের জন্য দায়ী করে এই প্রকাশক বলেন, “তিনি নিয়মের কথা বলেন। ওই নিয়ম মানলে অধিকাংশ প্রকাশকের এখানে থাকার কথা নয়। এখন তিনি নিপীড়ন করছে। পরে যিনি আসবেন তিনি আরো বেশি নিপীড়ন করবেন।”
প্রকাশক সমিতির নেতাদের সমালোচনা করে রবিন বলেন, “প্রকাশক সমিতির নেতাদের স্টল সামনের দিকে। বরাবরই তারা এই সুবিধা ভোগ করে আসছেন। একাডেমির বিরুদ্ধে কথা বলে তারা এই অবস্থান হারাতে চান না।
“বর্তমানে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে, সরকার এ কারণে ভয়ে আপস করছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ৫০ জন তৈরি লেখকের নাম বললে তাদের একজন ছিলেন অভিজিৎ। তাকেই আমরা মেরে ফেলেছি।
“এর মাধ্যমে দুটা ঘটনা ঘটছে, প্রকাশকরা নতুন বই ছাপাতে ভয় পাচ্ছেন। আর লেখকরাও লিখতে ভয় পাবেন।”